বৃহস্পতিবার ● ২৯ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » শিরোনাম » আবারো শক্তিশালী ভূমিকম্প: দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে হবে
আবারো শক্তিশালী ভূমিকম্প: দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে হবে
সম্পাদকীয়: যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এটা সত্য যে, দুর্যোগ রোধ করার কোনো উপায় নেই কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আগাম সচেতনতাই পারে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি কমাতে। এবার হিন্দুকুশ পর্বতে সোমবার ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হওয়া ছাড়াও আহত হযে়ছে বহু মানুষ।
ভূমিকম্প অনুভূত হযে়ছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান। এছাড়া ভারতের দিল্লি, কাশ্মির, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে শক্তিশালী ভূকম্পন অনুভূত হলেও হতাহতের তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর এই ভূমিকম্প শুধু ভারত নয়থ অনুভূত হযে়ছে বাংলাদেশও। ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করা হযে়ছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালের মধ্যে ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হযে়ছিল নেপালে। এখন আবারো শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হলো। ফলে বাংলাদেশকেও যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলার লক্ষ্যে আরো বেশি আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি বলেই আমরা মনে করি। কেননা এটা মনে রাখা দরকার বাংলাদেশও ভূমিকম্পর ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সময় ৩টা ৯ মিনিটে এবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল আফগানিস্তানের জারম থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, ভূপৃষ্ঠের ২১২ কিলোমিটার গভীরে।
মূলত ওই এলাকার কাছেই পাকিস্তান ও তাজিকিস্তানের সীমান্ত। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আর এই দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় মানুষের আয়ত্তে নয়। সঙ্গত কারণেই যেহেতু ভূমিকম্প প্রতিরোধ বা পূর্বাভাসযোগ্য নয়, তাই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব যেন কম হয় সেটা নিশ্চিত করাই সবচেযে় বেশি জরুরি। দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে যথাযথভাবে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি থাকে না।
আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে ঘনবসতি এবং শুধু রাজধানীতেই অপরিকল্পিতভাবে বাডি়ঘর রাস্তাঘাটসহ নানা স্থাপনা গডে় উঠেছে। ফলে শক্তিশালী ভূমিকম্পের প্রশ্নে এই পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা অনুমান করাও অসম্ভব। এমনও অলি-গলি আছে যেখানে উদ্ধারকারী যন্ত্রপাতি, এমনকি হতাহতদের বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সও পৌঁছাতে পারবে না। ফলে এমন পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।
এবারের সংঘটিত ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে অনেকটাই স্বস্তিকর বিষয় হলো, আফগানিস্তানের ভূমিকম্পটি ব্যাপক মাত্রার হলেও ভূকম্পন সৌভাগ্যক্রমে মাটির অনেক গভীরে হওয়ার ফলে এটি খুব বেশি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারেনি।
যদিও এই মাত্রার ভূমিকম্পও আদতে ভয়ানক শক্তিশালী ভূমিকম্প। নেপালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার যে ভূমিকম্প ব্যাপক ধ্বংস ডেকে এনেছিল তার চেযে়ও মাটির অনেক বেশি গভীরে উৎপত্তি হযে়ছে আফগানিস্তানের ভূমিকম্পটি।
আমরা মনে করি, নেপালের ভূমিকম্পের ভয়াবহতা এবং এবারের এই শক্তিশালী ভূমিকম্পর ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ দেশগুলোর উচিত দ্রুত আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আর তা না হলে সার্বক্ষণিক উৎকণ্ঠা থেকে যাবে এবং ভূমিকম্প সংঘটিত হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন হবে।
এটা মনে রাখতে হবে যে, প্রতিরোধ না করা গেলেও যথাযথ সচেতনতা বৃদ্ধি ক্ষয়ক্ষতিকে অনেকটাই কমিযে় আনতে পারে। এবারের এই ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চাই, বিশ্ব নেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করুক। কেননা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আহাজারি এবং তাদের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।
এই সমযে় খাবার এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিযে় আসতে হবে। যেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ আবারো নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ভূমিকম্পসহ যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে আরো বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। আর ভূমিকম্পসহ যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রেই গণমানুষের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হলে কী করণীয় তা ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণাও চালাতে হবে।
সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা দরকার, যদি শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল এই দেশে হয় তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কতটা প্রস্তুতি আছে। সার্বিক বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করে দুর্যোগ মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।