শিরোনাম:
●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ●   আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
ভোলা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার সংবাদ
শুক্রবার ● ১২ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » জেলার খবর » বেদনাবিধূর একটি দিনের ইতিহাস
প্রথম পাতা » জেলার খবর » বেদনাবিধূর একটি দিনের ইতিহাস
৫৬৫ বার পঠিত
শুক্রবার ● ১২ নভেম্বর ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বেদনাবিধূর একটি দিনের ইতিহাস

---

বিশেষ প্রতিবেদন: আজ সেই ভয়াল ১২ই নভেম্বর। ৫১ বছর আগের সেই দিনের বেদনা বিধুর ইতিহাস বাঙালী জাতি আজও ভুলতে পারেনি। ১৯৭০ সালের এই দিনে সমগ্র উপকূল জুড়ে বয়ে যায় মহা প্রলয়ংকরী ঘূর্নীঝড় ও জলোচ্ছ¡াস। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বুঝতে না পারার খেসারত দিতে হয়েছে উপকুলের ১০ লক্ষাধিক নিরক্ষর মানুষের প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ভেসে যায় গবাদি পশু,হাঁস-মুরগী আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাঠ ফসল এবং অসংখ্য গাছপালা,পশু-পাখি। পুরো উপকূল মুহুর্তেই ধ্বংসজজ্ঞে পরিণত হয়। চারদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে লাশ আর লাশ। বাতাসে লাসের গন্ধ আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার আকাশ বাতাস। ভোলা,পটুয়াখালী,বরগুনা,নোয়াখালী ও চট্রগ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যায় এই ঘূর্নীঝড় ও জলোচ্ছ্বাস গোর্কী।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর সে দিন ছিল বৃহস্পতিবার। সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বিকেলের দিকে বাতাস বাড়তে থাকে। রাতের দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রচার করতে থাকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট নিম্মচাপটি হারিকেনের রুপ ধারন করেছে এবং যার প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ১৫Ñ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ¡াসের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে, উপকূলের বঞ্চিত মানুষের কানে এ সতর্কবানী পৌঁছেনি। তখন ছিল পবিত্র রমজান মাস। সবাই বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে হঠাৎ মানুষের আত্মচিৎকারে সবাই জেগে ওঠে। বাইরে প্রচন্ড বেগে বাতাস বইছে। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই তীব্র গতিতে জোয়ারের তোড়ে প্রথমে উঠোন, সাথে সাথে ঘর ডুবে আসবাবপত্র ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। সবাই দ্বিগি¦দিক ছোটাছোটি করে বেঁেচ থাকার লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। ঘর-বাড়ি,গাছ-পালা ভাঙ্গার বিকট শব্দের সাথে যুদ্ধংদেহী প্রকৃতির ভয়ংকর গর্জনে মনে হয়েছে যেন কেয়ামত বুঝি শুরু হয়ে গেল। মানুষের বেঁেচ থাকার করুন আকূতি। কেউ চনের চালায়, টিনের চালায়, কেউ গাছের মগডালে, কেউ হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই ধরে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করেছে। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি অনেকের। জলোচ্ছ¡াসের তোড়ে ভেসে গিয়ে মুহুর্তের মধ্যে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষকে। শেষ রাতের দিকে মুহুর্তেই প্রকৃতি শান্ত হয়ে যায়। আস্তে আস্তে পানি নেমে যায়। চতুর্দিকে ভেসে আসে মানুষের আর্তনাদ। সন্তান হারা মায়ের কান্না, মা হারা সন্তানের চিৎকার, ভাই হারা বোনের বুকফাটা ধ্বনিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সর্বহারা মানুষগুলো একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে লজ্জ্বা ঢাকার জন্য এক টুকরো ছেঁড়া কাপড় খুজতে থাকে।

১২ই নভেম্বরের মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্নীঝড় ও জলোচ্ছ¡াসে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায়। মনপুরার কোথাও বেড়ী বাঁধ কিংবা সাইক্লোন শেল্টার তখনও গড়ে ওঠেনি। গাছ পালা তেমন একটা লম্বা বা মোটা ছিলনা। সাগর মোহনার ২৫-৩০ ফুট উচু ঢেউ ও জলোচ্ছ¡াসে মনপুরার ৩০ সহস্রাধিক মানুষ ও গবাধি পশু সমুলে নিমিষেই স্রোতের টানে ভেসে গেছে উত্তাল সাগরে। প্রকৃতি শান্ত হলে দেখা যায়,গাছে গাছে ঝুলে আছে লাশ আর লাশ।  যেখানে সেখানে লাশ আর লাশ। সাপ আর মানুষের একসাথে জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টার নিদর্শন দেখে মানুষ যেমন হয়েছে আতংকিত তেমনি হয়েছে অভিভুত। মনপুরায় বেঁচে ছিল মাত্র ৮ হাজার স্বজন হারানো ব্যাথাতুর মানুষ।

ভোলা জেলার লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যূর খবর আর ঘূর্নিঝড়ের তান্ডবে লন্ডভন্ড উপকূলীয় জনপদের বেদনার্ত কাহিনী ৫ দিন পর রাজধানী জানতে পারে তৎকালীন দৈনিক পুর্বদেশ পত্রিকার মাধ্যমে। বর্তমানে ভোলা থেকে প্রকাশিত দৈনিক বাংলার কন্ঠের সম্পাদক মোঃ হাবিবুর রহমান ছিলেন সেই সময়ের পূর্বদেশ পত্রিকার ভোলা জেলা প্রতিনিধি। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর সরকারের নজরে আসলে মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা। মুহুর্তের মধ্যে প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। পর্যায়ক্রমে আসতে থাকে ম্যাচ, মোমবাতি, চিড়া, মুড়ি, শাড়ি, লুঙ্গি, গেন্জি, পান্জাবি, তেল ,লবন, খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট, সাবান, প্যান্ট শার্টসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যসামগ্রী। কিছুক্ষন পরপর হেলিকপ্টারের হু হু শব্দ আর হেলিকপ্টার থেকে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী ফেলে যাওয়া আজও দক্ষিনাঞ্চলবাসীর মনকে নাড়া দেয়। সেই দিনের আলোচনা উঠলে এখনো অনেকেই নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

মনপুরা উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ লতিফ ভূঁইয়া বলেন, এদিন এলেই আমার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। জোয়ারের প্রচন্ড স্রোত এবং ঝড়ের প্রচন্ড তান্ডব থেকে আমাকে বাঁচাতে মা আপ্রাণ চেষ্টা করে আমাকে নিরাপদ স্থানে রেখে মা সেই যে জোয়ারের পানিতে ভেসে গেলেন আর পাইনি মাকে। সেই বন্যায় আমি আমার পরিবারের মা বাবা, বোনসহ ১৮ জনকে হারিয়েছি। সবাই তখন স্বজন হারা। মৃতের সংখ্যা এতই বেশি ছিল যে ১০/১২ জনকে একসাথে মাটি দিতে হয়েছে।

হাজীর হাট ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউ.পি সদস্যা মফিজা খাতুন বলেন, প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি ও ঢেউয়ের মাঝে আমার কোল থেকে ৫ মাসের কন্যা সন্তানটি পড়ে গেলে তাকে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করি। আমাকে প্রচন্ড স্রোতে বাড়ি থেকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলে বেঁচে থাকার জন্য মরা গরুর লেজ ধরি। এই লেজ ধরা অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে ৭ দিন ভাসতে থাকি। এরপর কক্সবাজার থেকে ৩ শত মাইল দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর থেকে বহিরাগত একটি জাহাজ আমাকে তুলে চট্রগ্রামের একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। ১ মাস পর মনপুরায় ফিরে আসি।

হাজির হাট বাজারের বিশিষ্ট পান ব্যাবসায়ী মরহুম ইয়াছিন বেপারীর সহর্ধমিনী বিবি নুরভানু বেগম  দিনটির স্মৃতি চারন করতে গিয়ে বাকরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, সেইদিন ছিল বৃহস্পতিবার। আমার স্বামী প্রতিদিনের ন্যায় নাইবের হাট বাজারে পান বিক্রি করতে যায়। সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়। বিকাল বেলা আকাশ মেঘে ঢেকে ফেলে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আকাশের অবস্থা খারাপ দেখে পান বিক্রি বন্ধ করে বাড়ী চলে আসেন। তখন রাত আনুমানিক ৯ টা হবে। খাবার খেয়ে ২ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। গভীর রাত হঠাৎ দেখি ঘরের ভিতর পানি। জোয়ারের প্রচন্ড গতি ও বাতাসের তীব্রতায় মুহুর্তের মধ্যে এক বুক পানি হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি করে আমার স্মামীসহ আমি ২ছেলে ও ১মেয়েকে নিয়ে ঘর থেকে বাহির হয়ে একটি গাছে উঠি। আমার স্মামী ছেলে হেলাল, বেলালকে ধরে এবং আমি মেয়ে মহিমাকে ধরে রাখি। কিন্তু একদিকে বাতাস অন্যদিকে জোয়ারের তোড়ে শিশু সন্তানদেরকে ধরে রাখতে পারিনি। সেই বন্যায় আমার ২ ছেলে ও মেয়েকে হারিয়েছি। অনেক খুঁজা খুঁজির পরেও তাদের আর পাইনি। তাদের কবর কোথায় দেওয়া হয়েছে তা আজও জানিনা। সন্তানদের শেষ বারের মতো দেখতে পারিনি। সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে পড়লে আজও কান্না ধরে রাখতে পারিনা বলে চোখের এক কোনা থেকে অশ্রু ঝরতে থাকে তার।

১২ ই নভেম্বরে স্বজনদের মৃত্যুকে স্মরন করে আজও বিভিন্ন সংগঠন মসজিদ ও মন্দিরে দোয়া, মিলাদ ও বিশেষ প্রার্থনা করেন। আজ ভয়াল ১২ই নভেম্বর দক্ষিনাঞ্চলবাসীর জন্য শোকের দিন। উপকুলবাসী উপকুল দিবস হিসেবে এই দিনটি পালন করার জন্য দাবী জানিয়ে আসছেন।

-ছালাহ/রাজ





জেলার খবর এর আরও খবর

উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায়
ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত
ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময়
চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস
ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ!
ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী
ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ভোলার তানভীর শিকদার, বিভিন্ন মহলের অভিনন্দন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ভোলার তানভীর শিকদার, বিভিন্ন মহলের অভিনন্দন

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।