শিরোনাম:
●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ●   আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
ভোলা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার সংবাদ
শনিবার ● ৬ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » সময়ের ভাবনা: ই-কমার্স খাত ঘিরে কিছু প্রশ্ন
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » সময়ের ভাবনা: ই-কমার্স খাত ঘিরে কিছু প্রশ্ন
১০৩৯ বার পঠিত
শনিবার ● ৬ নভেম্বর ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সময়ের ভাবনা: ই-কমার্স খাত ঘিরে কিছু প্রশ্ন

---

শাকিব কোরেশী: ই-কমার্স বিশ্বব্যাপী একটি সাম্প্রতিক ঘটনা। প্রসার ও জনপ্রিয়তার লক্ষণ দেখে  যৌক্তিকভাবে অনুমান করা যায় যে খুচরা এবং পাইকারি বাণিজ্যের জন্য ভবিষ্যতের ইকোসিস্টেম হবে ই-কমার্স। বিভিন্ন দেশে কিছু পণ্যের জন্য গ্রাহক মহলে এরই মধ্যে ই-কমার্স-কেন্দ্রিক ব্যবসাই প্রধান হয়ে গেছে। মোবাইল ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা আর মোবাইল আর্থিক পরিষেবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে এরই মধ্যে বাংলাদেশেও বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসা ঘিরে ঘটছে নানা ধরনের ঘটনা। চলতি  বছরের জুনের শেষ সপ্তাহে ১০টি ই-কমার্স কোম্পানির সঙ্গে ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে দিলে বিষয়টি ব্যাপকভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর ই-কমার্স কোম্পানির কয়েকজন সিইও এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গ্রেফতার হন। ২০২১ সালের জুলাইয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নীতি-নির্দেশিকা প্রকাশ করে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উন্নতি এবং ভোক্তা অধিকার রক্ষার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য এ নীতিমালায় প্রকাশ পেয়েছে। সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে  নতুন এ নীতি কাঠামো বাংলাদেশের ই-কমার্সের সাব সেক্টরে স্বচ্ছতা ও সুশাসন আনবে—এমনটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। এছাড়া  ই-কমার্স খাতে গতি আনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মহল থেকে  আনা হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা। তবে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের সুস্পষ্ট প্রবৃদ্ধির পথ খুঁজে পাওয়ার আগে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া জরুরি।

এসক্রো হিসাব এবং এর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া: ই-কমার্স নীতিমালার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি এসক্রো অ্যাকাউন্ট, যেখানে গ্রাহকদের ক্রয়াদেশের বিপরীতে গৃহীত অগ্রিম অর্থ জমা হবে। নতুন ঘোষিত নীতিমালা অনুসারে, ভোক্তাদের কাছ থেকে কোনো পণ্যের মূল্যের ১০ শতাংশের বেশি অর্থ অগ্রিম সংগ্রহ করা যাবে না। ভোক্তাদের কাছ থেকে সংগৃহীত অগ্রিম অর্থ এসক্রো অ্যাকাউন্টে জমা থাকবে। ক্রয়কৃত পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার পরেই সে অর্থ ই-কমার্স কোম্পানিকে দেয়া হবে। প্রকৃতপক্ষে ই-কমার্স কোম্পানির কিছু মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বিপরীতে সুরক্ষা হিসেবে এটি একটি চমত্কার ব্যবস্থা। জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি এসক্রো অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করবে না, বরং পরিষেবাটিকে আউটসোর্স করবে। আউটসোর্সিং করার শর্তগুলো এখনো তৈরি হয়নি। তবে শর্তাবলি প্রস্তুত হয়ে গেলে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাই এটা বলা যেতে পারে যে এসক্রো হিসাব পদ্ধতি চালু হতে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় লাগবে। এসক্রো অ্যাকাউন্ট পরিষেবা শুধু একটি কোম্পানি প্রদান করলে প্রতিযোগিতার পরিবেশ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়ে যাবে। এ ধরনের পরিষেবার মাশুল এবং ফি যুক্তিসংগত থাকা প্রয়োজন। এসক্রো অ্যাকাউন্ট পরিষেবা চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত খুচরা ই-কমার্স ব্যবসার জন্য ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে। ক্যাশ অন ডেলিভারি একটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় পদ্ধতি কিন্তু রাজস্ব ও আয়ের তথ্য-উপাত্ত সঠিকভাবে না প্রকাশ করার এবং প্রযোজ্য মূসক সঠিকভাবে জমা না দেয়ার সুযোগ থেকে যায়। এছাড়া ‘ক্যাশ অনলি’ প্রথার কারণে এ সেক্টরের প্রবৃদ্ধি ও মুনাফা বাস্তবের চেয়ে কম প্রদর্শন করার প্রবণতা বৃদ্ধি করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে।

ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন: আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনা এসেছে। সেটা হলো,  ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর জন্য একটি ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন (ইউবিআইডি) নম্বর নিতে হবে। যদি এই নতুন আইডির উদ্দেশ্য আর্থিক কেলেঙ্কারি দমন ও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়, তাহলে একই উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে বিদ্যমান অন্যান্য আইন ও সংস্থা কী করবে? বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রধান আইনগুলোর মধ্যে রয়েছে কোম্পানি আইন, মেধাস্বত্ব সুরক্ষা সংক্রান্ত আইন, প্রতিযোগিতা আইন এবং ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা আইন। এছাড়া জালিয়াতি ও প্রতারণার জন্য প্রচলিত ফৌজদারি আইন কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। অন্যান্য নিবন্ধন এবং লাইসেন্স, যেমন কর শনাক্তকরণ নম্বর, ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন বা নিয়মিত ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বরের প্রয়োজনীয়তা কী হবে? যে ব্যবসার ইউবিআইডি আছে, তার ক্ষেত্রে এগুলোর কোনোটি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দেয়া হবে কি? তা যদি না হয়, তবে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর জন্য একটি ইউবিআইডি নেয়ার বিশেষ তাত্পর্য কী? ইউবিআইডি কি তাহলে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমের জবাবদিহিতা বা স্বচ্ছতা পরিমাপের জন্য একটি মানদণ্ড বা নিয়ন্ত্রক হিসেবে ব্যবহূত হবে? তাই যদি হয়, তবে জবাবদিহিতা বা স্বচ্ছতা পরিমাপের ভিত্তি কী হবে, আর তার পেছনে ব্যবসার যৌক্তিকতা কী হবে? নাকি প্রস্তাবিত ইউবিআইডি দেশের উদীয়মান ই-কমার্স শিল্পকে সীমাবদ্ধ করার মতো আরেকটি অবাঞ্ছিত প্রশাসনিক বাধা হয়ে দাঁড়াবে?

আলাদা কর ব্যবস্থা: এখন পর্যন্ত জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মসের সঙ্গে নিবন্ধন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের চেয়ে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের সময় ই-কমার্স কোম্পানিগুলো আইটি এনাবলড সার্ভিস বা আইটিইএস হিসেবে নিবন্ধিত হয়। আইটিইএস কোম্পানিগুলো ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর ছাড় সুবিধা ভোগ করবে। তাই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও আইটিইএস তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে আপাতত কর ছাড়ের সুবিধাগুলো পাচ্ছে। প্রস্তাবিত পৃথক কর ব্যবস্থার অধীনে কোনো ই-কমার্স কোম্পানি কি প্রাথমিক বছরগুলোয় কর অব্যাহতি পাবে? যদি পায়, তবে তা কত বছরের জন্য? যদিও নতুন এবং প্রতিশ্রুতিশীল শিল্প খাতে কর অব্যাহতি একটি ভালো নীতিগত পদক্ষেপ কিন্তু বাংলাদেশে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা এবং কর সুরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা একাধিক শিল্প খাতে চিরস্থায়ীভাবে অদক্ষতাকে লালন করা হচ্ছে। হিমায়িত চিংড়ি, সিরামিক কিংবা ব্যাটারি শিল্প এ রকম কয়েকটি অদক্ষ খাতের উদাহরণ। যদি কিছু সময় পরে অব্যাহতি প্রত্যাহার করে কর আরোপ করা হয়, সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য করের হার কী হবে? নাকি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টার্নওভার করের আওতায় পড়বে? আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ক্যাশ অন ডেলিভারি অনুসরণ করলে কোম্পানিগুলো আয়ের পরিমাণ কম দেখানোর সুযোগ পাবে এবং বিক্রয় ও আয়সংক্রান্ত সঠিক তথ্য কর কর্মকর্তাদের জন্য বের করা কঠিন হবে। ফলে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি দেয়ার পথ সুগম করবে। সংক্ষেপে বললে, যদি কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়, তবে আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা এবং কর প্রশাসনের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতিশীল এ খাতে অতিরিক্ত করারোপের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।

পৃথক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ: গত সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হবে। ই-কমার্সের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যদি একটি নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা-ই হোক। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি কি নেহাতই কয়েকজন প্রশাসনিক আমলা দ্বারা গঠিত হবে, নাকি সরকারি সংস্থা, বেসরকারি খাত, বুদ্ধিজীবী এবং বিশেষজ্ঞদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে? সংস্থাটির নিয়ন্ত্রক ও তত্ত্বাবধানকারীদের ভূমিকা কী হবে? ভূমিকা, দায়িত্ব ও আইনগত অধিকারের বিষয়টি কে সংজ্ঞায়িত করবে? এটি ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের ভূমিকার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়বে কি? তাছাড়া প্রস্তাবিত সংস্থাটি গঠনে আরো কয়েক বছর সময় লাগতে পারে, তাহলে এ সময়টায় ই-কমার্সের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ কে করবে? ই-কমার্স খাত কীভাবে মাত্রাতিরিক্ত বিধিনিষেধ ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকবে?

এখানে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কৌতূহল উসকে দেয়া এবং প্রয়োজনীয় আলোচনা শুরু করা। ই-কমার্স খাত টিকে থাকবে। শুধু খুচরা ও পাইকারি বাণিজ্যই নয়, বরং ই-কমার্স খাতের প্রভাবে বাণিজ্য-সংক্রান্ত অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যেমন বিতরণ, পরিবহন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসবে। ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশকে তাই প্রস্তুত হওয়া উচিত।

 

শাকিব কোরেশী: এন্টারপ্রাইজার

বিজনেস ইন্টেলিজেন্স লিমিটেড

সূত্র: বণিক বার্তা





আর্কাইভ


© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।