

শনিবার ● ২ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » ভোলায় ১০ মাসে ৩০ হত্যা ও ১১৪ ধর্ষণ, নারী ও শিশু আদালতের বিচারক না থাকায় ঝুলে আছে ৫,২৩৬ মামলা
ভোলায় ১০ মাসে ৩০ হত্যা ও ১১৪ ধর্ষণ, নারী ও শিশু আদালতের বিচারক না থাকায় ঝুলে আছে ৫,২৩৬ মামলা
বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলায় গত ১০ মাসে জেলায় ১১৪টি ধর্ষণ এবং ৩০টি হত্যাকাণ্ডে ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনায় অনেকেই এখন আতঙ্কিত।এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে শিশু ধর্ষণ। পুলিশের অভিযানে আসামী গ্রেফতার এবং আদালতে দোষীদের শাস্তি হলেও যেন কমছে না হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা।
জমি বিরোধসহ নানা কারণে ঘটেছে হত্যাকাণ্ড। জেলায় গণধর্ষণ ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
তারা বলছেন, আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার দীর্ঘজট দেখা দিয়েছে। ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ঝুলে আছে প্রায় ৫ হাজার ২৩৬ মামলা। যার মধ্যে ধর্ষণ মামলা অন্তত ২০০। আবার গত ২২ শে সেপ্টেম্বর ভোলা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচার আতোয়ার রহমান বদলির পর এই জেলায় নতুন কোন বিচারক না দেয়ায় বিচার প্রার্থীর ভোগান্তির শেষ নেই।
এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার মধ্যে গত ১০ মাসে ৭৪টি মামলা বিচারধীন অবস্থায় রয়েছে। বিচারক স্বল্পতা, সাক্ষী না থাকাসহ নানা কারণে বেশিরভাগ মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এছাড়াও বেশিরভাগ মামলা প্রেম গঠিত এবং মিথ্যা হওয়ায় বছরের পর বছর ঝুলে থাকে।
ভোলার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নির্ভযোগ্য সূত্র জনিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত ১০ মাসে ১১৪টি ধর্ষণ এবং ৩০টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৫টি ধর্ষণ ও ৩টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ফেব্রুয়ারিতে ঘটেছে ৫টি ধর্ষণ ও ১টি হত্যা। মার্চ মাসে হতাকাণ্ড না থাকলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১০টি। এপ্রিলে মাসে ২০টি ধর্ষণ ও ৫টি হত্যার ঘটনা ঘটে। মে মাসে ১৭ জনকে ধর্ষণ ও ১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। জুনে ১৫টি ধর্ষণ ও ৪টি হত্যাকা- ঘটেছে। জুলাইয়ে ১৩টি ধর্ষণ ও ৪টি হত্যা, আগস্টে ৭টি ধর্ষণ ও ২টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেপ্টেম্বরে ১৪টি ধর্ষণ ও ২টি হত্যা এবং অক্টোবর মাসে ৮টি ধর্ষণ ও ৭টি হত্যাকাণ্ডে ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে এপ্রিল মাসে। এ মাসেই ২০টি ধর্ষণ এবং ৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
সূত্রটি আরও জানায়, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়েছে ভোলা সদর, চরফ্যাশন ও লালমোহন উপজেলায়। ওই সব মামলায় বেশিরভাগ আসামি গ্রেফতারও হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর দু’টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ভোলা সদর এবং মনপুরা উপজেলায়। এর মধ্যে ঈদুল আযহার আগের রাতে সদরের চরসামাইয়া ইউনিয়নে এক শিশুকে ধর্ষণ করে ৩ পাষন্ড। ঘটনার পর ১৪ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ধর্ষণ মামলার দুই আসামি মঞ্জু ও আলামিন মারা যায়।
এছাড়াও ১৮ জানুয়ারি গভীর রাতে লালমোহন উপজেলার চরভুতা গ্রামে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় খালা ও ভাগ্নিকে। ১৯ এপ্রিল জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে টেঁটাবিদ্ধ করে বীরেন্দ্র নামে এক জনকে হত্যার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ৩ আত্মীয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০ অক্টোবর ভোলার বোরাহনউদ্দিনে পুলিশের সঙ্গে জনতার সহিংসতায় ৪ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৫ হাজার জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২৬ অক্টোর ভোলার মনপুরায় ঘটে আরেক গণধর্ষণের ঘটনা। ছাত্রলীগ নেতাসহ ৫ জন মিলে এক নারীকে নির্জন চরে নিয়ে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে। ৬ অক্টোবর মনপুরার চরফৈজউদ্দিন গ্রামে এক ব্যবসায়ীকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ৫ আসামিকে গ্রেফতার করে।
এদিকে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলায় ৩ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মুক্তিযোদ্ধার মেয়েকে গণধর্ষণের অভিযোগে ৭ আগস্ট এ রায় দেয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
ভোলা আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম মোরশেদ কিরন তালুকদার বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে ধর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ঝুলে আছে ৫ হাজার ২৩৬ মামলা। এর মধ্যে ধর্ষণ মামলা রয়েছে ২০০টি। আদালতে ৭৪টি মামলা বিচারধীন। আমরা সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি। তবে বিচারক স্বল্পতার কারণে কিছু কিছু মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগছে। তিনি আরও বলেন, কিছু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে প্রেমঘটিত কারণে, যার বেশিরভাগই সাজানো মামলা। দেখা যায় প্রেমে পরাজিত হয়ে প্রেমিককে ফাঁসাতে মামলাগুলো হচ্ছে। জমির বিরোধ নিয়েও কিছু সাজানো মামলা হয়।
এছাড়াও ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে, যা নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। এ পর্যন্ত ১৫টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আমরা সব মামলা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
-বিএন/এফএইচ