শুক্রবার ● ২ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » চরফ্যাশন সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিকের ভুল রিপোর্টে প্রসূতিকে রক্ত পুশ করতে গিয়ে ডাক্তার বিপাকে?
চরফ্যাশন সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিকের ভুল রিপোর্টে প্রসূতিকে রক্ত পুশ করতে গিয়ে ডাক্তার বিপাকে?
চরফ্যাশন প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশন হাসপতাল রোডে দু’ক্লিনিকে একই রক্তের গ্রুপে দু’ধরণে রিপোর্ট। প্রসূতির শরীরে পুশ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে গাইনি ডাক্তার। বিষয়টি ধরা পড়ে বৃহম্পতিবার সন্ধ্যায় সিটিহার্ট (প্রাঃ) হাসপাতালে প্রসূতিকে সিজার করাতে রক্ত ক্রস মেসিংয়ের সময়। ভুল রিপোর্টের উৎস চরফ্যাশন সেন্ট্রাল জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্নধার মিজান মিয়া ঘটনাকে ভূল বলে স্বীকার করেছেন। তাই প্রশ্ন হচ্ছে এই ভুলের দায় নিবে কে? এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন উপজেলার নীলকমলের নাংলাপাতা গ্রামের প্রসূতি সুরমা বেগম শশুর আলমগীর হোসেন।
অভিযোগ ও রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, ৮মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা সুরমা চলতি বছরের ৩১ আগস্ট চরফ্যাশন সেন্ট্রাল জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত চেক আপের জন্য আসেন। সেখানে ডাক্তার শাহিন আরা আহম্মেদ প্রসূতিকে রক্ত পরীক্ষার জন্যে দেয়া হয়। সেন্ট্রালের (ডিএমটি, এআইএমটি, এসএমএফ ঢাকা) পদবী বহন কারী টেকনোশিয়ান মো.রিফাত হোসেন স্বাক্ষরিত তার(সুরমা) রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে ‘বি’+ পজেটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়।
সন্তান প্রসবের নির্ধারিত সময় অতিক্রম করায় গত বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সুরমা বেগম সিটিহার্ট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিনয় কৃষ্ণ গোলদার এর শরণাপন্ন হন। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রোগীর পানি শূন্যতা ও প্রি-একলামশিয়ার সমস্যা শনাক্ত করেন। গর্ভের সন্তানের জীবন বাঁচাতে মা’কে রক্ত দান ও দ্রুত সিজারের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ‘বি’+ পজেটিভ রক্তের জন্য চরফ্যাশন বাজারে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইকিং করে এক জন মুমূর্ষ মা’কে বাঁচানোর জন্য জরুরী ভিত্তিতে রক্ত দাতাদের কাছে আহবান জানানো হয়। আহবানে সাড়া দিয়ে রক্ত দাতাও মিলে যায়। রক্ত দাতাকে নিয়ে রোগীর রক্তের সাথে ক্রস ম্যাসিং করাতে গিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। ফলে চিকিৎসকেরা রোগীর পুনঃরায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে যায়। সিটিহার্ট হাসপাতালের পরীক্ষায় দেখা যায়, সুরমার রক্তের গ্রুপ ‘ও’+ পজেটিভ।
এ বিষয়টি স্থানীয় হাসপাতাল রোড ও মিডিয়া কর্মীরা জানলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এমন জঘন্য ভূলের খেশারত দিবে কে এমন অভিযোগ রয়েছে খোদ ভোক্তভোগীদের।
চরফ্যাশন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শাহিন আরা আহম্মেদ বলেন, রক্ত পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে (ল্যাব) টেকনোশিয়ানকে ভূলের ব্যপারে আমার কিছু করার নেই।
ডাক্তার বিনয় কৃষ্ণ গোলদার বলেন, পূর্বের রক্তের পরিক্ষার কাগজ দেখে যদি সিজারের করে রক্ত পুস করতাম তাহলে প্রসুতি রোগীর বড় ধরনের ক্ষতির আসংখ্যা ছিল।
এব্যাপারে চরফ্যাশন সেন্ট্রাল জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান (মিজান মিয়া) বলেন, বিষয়টি ভুল ছিল। চ্যালেঞ্জের কিছুই নেই। দুটি রিপোর্ট-ই এই বাস্তবের প্রমাণ করে। এ ভুলের কারনে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) এম.ডি. রিফাত হোসনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সেন্ট্রালের অপর শেয়ার হোন্ডার মাকসুদুর রহমান বলেন, ভুল হতেই পারে। রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন হতেই পারে। রক্ত পরীক্ষা করতে কোন টেকনোশিয়ান লাগেনা।
এব্যপারে চরফ্যাশন হাসপাতালের ডায়গনস্টিক সেন্টারে সেম্বারে বসা বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শাহদাৎ হোসেন জুয়েল বলেন, রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন হয়না। একই রোগীর রক্ত পরীক্ষা দু’ধরণের রিপোর্টে একটিতে অবশ্যই ভূল। ভোলা সিভিল সার্জন রথিন্দ্র নাথ সরকার বলেন, জীবনেও কখনও মানুষের রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন হয়না।
এ ছাড়াও পৌর সভা ৯নং ওয়ার্ডের জান্নাত বেগম নামক জনৈক রোগী জানান, হাসপাতালে রোডে কোন রোগী আসলে ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের কর্মরত পুরুষ-মহিলারা করছে টানা-হেচড়া এতে ওই রোগী সুস্থ্য থাকলেও তাদের টানা-হেচড়ায় অসুস্থ হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দেয়। জাহানপুর গ্রামের রুমা বেগম বলেন, আমি সেবা ডায়গনস্টিক সেন্টারে ডাঃ শোভন বসাককে দেখালে ৪টি পরীক্ষার-নিরীক্ষার জন্য দেয়া হয়। তাদের নির্ধারিত সেন্টারে ১৪ শ টাকা দাবী করেন। রোগী অন্যত্র সেন্টারে ৯শ টাকায় ওই পরীক্ষা করালে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারকে দেখাতে গেলে সেবা ডায়গনস্টিক কর্মরতরা তাকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। ডাক্তারদের রোগী দেখার নির্দিষ্ট সেন্টারগুলোতে রিপোর্ট না করালে অন্য সেন্টারের রিপোর্ট তার বুঝেনা বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমএএইচ/এফএইচ