সোমবার ● ১১ জুন ২০১৮
প্রথম পাতা » সাক্ষাৎকার » ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় বুঝেছিলাম প্রেম হলো ভুয়া: ডা. এজাজ
ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় বুঝেছিলাম প্রেম হলো ভুয়া: ডা. এজাজ
ডেস্ক: ছোট বা বড় পর্দায় যার উপস্থিতি মানেই বিনোদনের শেষ নেই। অসংখ্য নাটক ও বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছেন যিনি। তিনি নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আবিষ্কার ডা. এজাজুল ইসলাম।
ডা. এজাজ অভিনয়, চিকিৎসা সেবা এবং হুমায়ূন আহমেদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। আলোচনার সেই চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে।
এজাজ: প্রথম ব্যস্ততা ডাক্তারি নিয়ে, কলেজ নিয়ে, দ্বিতীয় ব্যস্ততা সংসার নিয়ে, তৃতীয় ব্যস্ততা অভিনয় নিয়ে। আমি সবসময়ই এটা মেইনটেন করি।
নাটক বা সিরিয়ালে দেখা যাবে কি
এজাজ: বাংলাভিশন, এনটিভি, মাছরাঙা ও বৈশাখী চ্যানেলগুলোতে প্রেমনগর, ফেসবুকিং, খেলোয়াড়, রসেরহাড়ি এরকম অনেকগুলো সিরিয়ালের সময় ঈদের আগ পর্যন্ত দেয়া। ঈদে কোনো নাটক বা সিরিয়ালে কাজের সময় করে উঠতে পারিনি। তাই ঈদে কোনো নাটক কিংবা সিরিয়ালে দেখা যাবে না।
সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ডা. এজাজকে কিভাবে কবে আবিষ্কার করলেন?
এজাজ: আমি যখন টেলিভিশনে এনলিস্টেড হই তখন অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম টেলিভিশনে কাজ করার। আসলে এনলিস্টেড হলেই তো সুযোগটা পাওয়া যায় না। কারণ ওটা নির্ভর করে রাইটার, প্রোডিউসারের উপরে, যে আমাকে সুযোগ দেবে কি না।
এনলিস্টেড হয়ার পরে অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি কেউ নেয়নি। তারপরে আবার পড়াশোনা শুরু করলাম। ধরে নিলাম আমার দ্বারা অভিনয় হবে না। রংপুরে মঞ্চে কাজ করেছি, রেডিওতে কাজ করেছি, এগুলো হয়তো ঢাকার সমতুল্য নয়। ঢাকায় যেহেতু থিয়েটার করিনি কেউ আমাকে নিচ্ছে না পরে বাদ দিলাম।
বাদ দিয়ে তখনকার পিজিতে ভর্তি হলাম নিউক্লিয়ার মেডিসিনে। কোর্স শেষ করে পাস করলাম। তখন আমাদের আইপিজিএমআর’র ডিরেক্টর ছিলেন প্রফেসর করিম। তো পাস করার পর সার্টিফিকেট উঠানোর জন্য হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্টের একটা সই লাগে। তখন তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। করিম স্যারকে খুঁজতে গিয়ে দেখি স্যার নাই। শুনলাম তিনি হুমায়ুন আহমেদের অফিসে। তো চিন্তা করলাম এই সুযোগে স্যারকে খোঁজার ছুতোয় যদি হুমায়ুন আহমেদের দেখা পাই!
ছুটে গেলাম কাকরাইলে। তখন আসিফ ম্যানসনে স্যারের অফিস ছিল। আমার সৌভাগ্য এটাই যে স্যার আমাকে প্রথম দেখাই পছন্দ করে ফেলেছিলেন। আমার সঙ্গে তিনি অনেক কথা বলেছিলেন। আমার হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট যতটা না কথা বলেছিলেন তার চেয়ে দশগুণ কথা বলেছিলেন হুমায়ুন স্যার। কি কর না কর জিজ্ঞেস করলেন। বললেন, আমি গাজিপুরে শুটিং করতে যাই পারলে আমাকে হেল্প করো। আমি তো সেটা করবার জন্য অধীর। তারপর শুটিংয়ে একদিন দুইদিন এমন হেল্প করতে গিয়ে স্যারকে আমার দুঃখের কথাটা জানালাম।
নিজে বলার সাহস কখনও ছিল না কারণ স্যারকে আমি খুব ভয় পেতাম। তাই অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরকে দিয়ে স্যারকে জানালাম। স্যার আমাকে ডেকে বললেন, কেউ তোমাকে সুযোগ দেয়নি? আমি তোমাকে সুযোগ দেবো। একটা সুযোগ দেয়ার পর স্যার ইউনিটের সবাইকে জানালেন যে ডাক্তার তো ভাল অভিনয় করে। এই হলো আমার শুরু।
এজাজ:একদম ছোটবেলা থেকে। ঢাকায় আসা আমার অভিনয়ের জন্য। আমার বাড়ি গাইবান্ধা, রংপুর মেডিকেলে আমি পড়েছি তখন কলেজে নাটক করতাম, স্টেজ করতাম, থিয়েটার করতাম। তখন স্বপ্ন ছিল যে পাস করার পরে ঢাকায় যাবো, চাকুরি করবো, ঢাকায় পোস্টিং নেবো। সিনেমায় টুকটাক কাজ করবো, নাটকেও কাজ করবো। ঢাকায় পোস্টিং হলো।
তবে এখন যেখানে আছি, আমার স্বপ্ন এতো বড় ছিল না। আবার খুব বেশি কিছু হয়েছে তা আমি বলব না। কিন্তু যেটুকু উত্থান তা আমার স্বপ্নের চেয়েও বড়।
আহমেদের সাথে কাজের স্মৃতি যদি বলতেন
এজাজ: অনেক অনেক। স্যারতো যাদুকর ছিলেন। স্যারের সাথে থাকলে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যেতেন। ওই পীর সাহেবের মুরিদ হতে বাধ্য হতেন যে কেউ। তার মধ্যে যাদু ছিল।
বা ছবি করার আগে কোনটা ভালো করে দেখেন
. এজাজ: সবার আগে আমি স্ক্রিপ্টটা দেখি। হুমায়ূন স্যারের নাটক এদেশে কেন জনপ্রিয়? স্ক্রিপ্টের জন্য, সংলাপের জন্য। সুতরাং প্রথমে সংলাপ এরপর ডিরেক্টর দেখি। সংলাপ যদি সুন্দর না হয়, গল্প যদি সুন্দর না হয় লাভ নেই। সত্যজিৎ রায়কে দিয়ে ছবি বানালে স্ক্রিপ্ট যদি ভাল না হয় তাহলে কি সত্যজিৎ রায় ভাল ছবি বানাতে পারবেন?
আগে স্ক্রিপ্টটা শক্ত হতে হবে। আমার হাতে স্ক্রিপ্ট এলে মোটামুটি একটা দুইটা সর্বোচ্চ তিনটা সিন পড়বো। এরপর ডিসিশন নেবো কাজটা করবো কি করবো না। কারণ পাতিলের একটা ভাত টিপলে সব ভাত বোঝা যায়।
কোয়ালিটি আগের জায়গায় নেই
এজাজ: আমরাও মনে করি আসলে সে কাজ আর নাই। কাজের যে আনন্দ, যে উচ্ছ্বাস সেটা এখন আর নাই। হুমায়ূন স্যার যখন কাজ করতেন দেখেছি তার একটা টার্গেট ছিল, একটা ভাল কাজ করবো। অর্থ কি পাবো কি পাবো না সেটা নিয়ে ভাবেননি। এখন আমরা নাটক করতে গেলে ছবি করতে গেলে আগে টাকার অংক নিয়ে বসি। কত টাকা খরচ করবো কত পাব।
হুমায়ুন স্যার কখনো এই অংকটি করেননি। উনি বলতেন, কত সুন্দর ছবি করবো, দর্শক আমার ছবি কতটা উপভোগ করবে। এখনকার টার্গেটই তো অন্যরকম। এখন অংকটা লাভের, অংকটা কাজের না। নাটকের অধঃপতনটা একারণেই।
জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন কোন সিনেমায়
এজাজ: তারকাটা ছবিতে। যদিও আমার পুরস্কারটা পাওয়ার পর থেকেই আফসোস! কারণ হুমায়ূন স্যারের শ্রাবণ মেঘের দিন ছবিতে অভিনয় করেছি তখন পাইনি, শ্যামল ছায়াতে পাইনি। এ দুটো ছবিতে আমার মনে হয় আমি তারকাটার চেয়েও ভাল অভিনয় করেছি।
আমি বিচারক হলে প্রথম পুরস্কারটা দিতাম শ্রাবণ মেঘের দিনে, তারপর দিতাম শ্যামল ছায়া, তারপর একটা ক্যাটাগরি আছে কমেডি সেটা হলে আমি দিতাম দুইদুয়ারি-কে, তারপর আসতাম তারকাটায়। চতুর্থবার তারকাটায় পুরস্কার দিতাম। আমি তারকাটা ছবির নির্মাতাকে ছোট করছি না। বলতে চাচ্ছি, তারকাটায়ও ভাল অভিনয় করেছি তবে এর চেয়ে ওই ছবিগুলোতে আমার কাজ ভাল ছিল। এজাজ: একটা ছবি রিলিজ পাবে ‘দে দৌড়’। নাইমুল কবির বানিয়েছেন, একেবারেই নতুন ডিরেক্টর। খুব মজার এবং হাসির একটা ছবি। হয়তো জুন জুলাইতে রিলিজ পাবে। আর জাজের সাথে কথা হয়েছে দুটি ছবির। কেবল প্রাথমিক চুক্তি হয়েছে, এখনও গল্প শুনিনি।
রোমান্স, বিয়ে কিছু বলুন?
এজাজ: আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ি তখনই বুঝেছিলাম প্রেমটা হলো ভুয়া একটা ব্যাপার। ফেইক ফেইক। মানে বিফোর ম্যারেজ প্রেমটা ভুয়া, আমার মনে হয় আফটার ম্যারেজ প্রেমটা আসল। বিয়ের আগে যে কাউকে ভালো লাগেনি তা না। এগুলো হলো ছুটা প্রেম।
বিয়ে সন্তান সন্ততি
এজাজ: বউ একটাই। দুটি মেয়ে, দুটি ছেলে। বড় মেয়ে ডাক্তারি পাস করেছে, ছোট মেয়ে ও বড় ছেলেও ডাক্তারি পড়ছে। একদম ছোট ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকোনমিক্সে অনার্স পড়ছে।
সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।