রবিবার ● ২ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » এখনো অস্থির চালের বাজার
এখনো অস্থির চালের বাজার
সম্পাদকীয়: ঈদের ছুটির আগের দিন তিনটি স্থলবন্দর দিয়ে কিছু পরিমাণে ভারতীয় চাল আমদানি হলেও বাজারে তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি। দাম আগের মতোই আছে। ঈদের ছুটির পর স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি আবার শুরু হবে ১ জুলাই থেকে। তাই সে পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনাও কম। ভিয়েতনাম থেকে চাল নিয়ে রওনা হওয়া প্রথম জাহাজটি চট্টগ্রাম এসে পৌঁছতে আরো সপ্তাহখানেক লেগে যাবে। আশা করা হচ্ছে, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চালের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হবে।
এবার চালের বাজারে প্রায় তিন মাস ধরেই অস্থিরতা বিরাজ করছিল। সেই অস্থিরতা তুঙ্গে ওঠে হাওরাঞ্চলে বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির কারণে। ক্রমেই দাম বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও চরমে ওঠে। প্রথম দিকে বলা হতে থাকে, ‘দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই’। কিন্তু চূড়ান্ত সময়ে এসে জানা যায়, সরকারের খাদ্যগুদামগুলোর মজুদ পরিস্থিতি ভালো নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার পর চলতে থাকে দোষারোপের রাজনীতি। সবশেষে নেওয়া হয় সরকারিভাবে চাল আমদানির উদ্যোগ। এ সময় বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানিকে উৎসাহিত করার জন্য আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। আর সেই আদেশ স্থলবন্দরে গিয়ে পৌঁছায় ঈদের ছুটি শুরুর এক দিন আগে। এই কাজগুলো আরো এক মাস আগেই করা যেত, আর তা করা হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিশ্চয়ই অনেকটা কম হতো।
এবার চালের বাজার আমাদের দেখিয়েছে, সরকারের পরিকল্পনার ঘাটতি যেমন আছে, তেমনি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রয়েছে আরো বড় ঘাটতি। সরকারি গুদামগুলো আপৎকালীন মজুদ হিসেবে কাজে লাগে কিন্তু সেই গুদাম পরিস্থিতি আমাদের হতাশ করেছে। এবার বোরো মৌসুমে সরকার সাত লাখ টন ধান সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিল। ২ মে থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ২০ জুন পর্যন্ত সরকার লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশ ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি। চাল সংগ্রহ পরিস্থিতিও একই রকম।
সরকার চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল আট লাখ টন। ২০ জুন পর্যন্ত সংগৃহীত হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার টন। মজুদ ও সংগ্রহ পরিস্থিতির এমন বেহাল অবস্থা কেন? আবারও যদি বন্যা বা বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে আঘাত হানে, সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে কিভাবে? আমরা আশা করি, সরকার অন্তত খাদ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা নেবে এবং তা বাস্তবায়নে আরো দক্ষতার পরিচয় দেবে।
বিএস