শিরোনাম:
●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ●   আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
ভোলা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোলার সংবাদ
বৃহস্পতিবার ● ১৬ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় আত্মতৃপ্তি - তজুমদ্দিনের প্রথম সাংবাদিক মোস্তাফিজ
প্রথম পাতা » জেলার খবর » সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় আত্মতৃপ্তি - তজুমদ্দিনের প্রথম সাংবাদিক মোস্তাফিজ
৬৬৬ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১৬ মার্চ ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় আত্মতৃপ্তি - তজুমদ্দিনের প্রথম সাংবাদিক মোস্তাফিজ

---
একাধারে প্রথম সাংবাদিক, সমাজ সেবক, সংগঠক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এতসব বৈশিষ্ট একজন মানুষের খুব কমই দেখা যায়। অন্যায়ের প্রতিবাদ ও সত্যের সন্ধান করতে গিয়ে হামলা মামলার সম্মুখিন হয়েছেন বেশ কয়েকবার। তবুও পিছু হটেন নি। মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। তিনি তজুমদ্দিন উপজেলার প্রথম সাংবাদিক আলহাজ্ব মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়া। ভোলার ৭টি উপজেলার প্রথম সাংবাদিক, সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রেস ক্লাব সমূহের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সম্পাদকের সাক্ষাতকার প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে ভোলার সংবাদ ডট কম। সম্প্রতি এই মানুষটি মুখোমুখি হয়েছেন ভোলার সংবাদ ডট কম’র। জানিয়েছেন তার সাংবাদিকতা জীবনের ইতিবৃত্ত। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন ভোলার সংবাদ ডট কম এর বিশেষ প্রতিনিধি মো. রফিক সাদী।  সহযোগীতায় ছিলেন ভোলার সংবাদ ডট কম এর প্রধান সম্পাদক আরিফুল ইসলাম রিয়াজ ও সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন।   

ভোলার সংবাদঃ- ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার তালুকগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন মো.মোস্তাফিজুর রহমান মিয়া। তার জন্ম ১৯৫৫ সালের ১লা মে। বাবা মৃত জালাল আহম্মদ পন্ডিত এবং মাতা আলহাজ্বা বিবি ফাতেমা’র ১ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে ২য় মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়া। শৈশব কেটেছে তজুমদ্দিনের গ্রামের বাড়িতেই। ছোট বেলা থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদী ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু কখনো ভাবেননি তজুমদ্দিন উপজেলার প্রথম সাংবাদিক হবেন। ১৯৬১ সালে ভর্তি হন চাঁদপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিকের গন্ডি পেড়িয়ে ১৯৬৬ সালে ভর্তি হন চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৭১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন সাহসী এই সাংবাদিক। কিন্তু স¦াধীনতা সংগ্রামের কারনে পরিক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালের পরীক্ষা বাতিল করে স্বাধীন দেশের প্রথম পরিক্ষা হয় ১৯৭২ সালে। তখন পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল লালমোহন। সেখান থেকেই কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। এরপর ভর্তিহন লালমোহন উপজেলার শাহবাজপুর কলেজে। ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন। অতঃপর বরিশাল বিএম কলেজে অর্থনীতিতে অনার্সে ভর্তি হয়েও পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারেন নি তিনি। পড়াশুনা এ পর্যন্ত রেখেই কর্মজীবনে পা দেন। বক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। স্ত্রী মরহুমা আলহাজ্জা ভিখারুন্নেসা পেশায় গৃহিনী ছিলেন। ৩ ছেলে ১ মেয়ের জনক সাংবাদিক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়া। নিন্মে তার সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো-

ভোলার সংবাদঃ-
কেমন আছেন?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি।

ভোলার সংবাদঃ-
আমরা জানি আপনি তজুমদ্দিন উপজেলায় প্রথম সাংবাদিকতা শুরু করেছেন। আপনার সাংবাদিকতার শুরু কিভাবে?

মো.মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-

অন্যায়ের প্রতিবাদ ও সত্যের সন্ধান করতে গিয়ে আমার প্রথম সাংবাদিকতা শুরু।

ভোলার সংবাদঃ-
প্রথম সাংবাদিকতার প্রেরণা কিভাবে পেলেন, কে দিল?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
যার কথা না বললেই নয় বরিশালের সাহিত্যিক মরহুম বিডি হাবিবউল্যাহ সাহেবের অনুপ্রেরণায় আমার সাংবাদিকতা শুরু।

ভোলার সংবাদঃ-

প্রথম সাংবাদিকতা কিভাবে শুরু করলেন?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
আমি ছাত্রাবস্থাই প্রতিবাদী ছিলাম। অন্যায় ও মিথ্যাকে মেনে নিতে পারিনি। সর্ব প্রথম বড় বড় সাদা ডবল কাগজে হাতে লিখে এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে দেয়াল পত্রিকা বের করি। ১৯৭৪ সালের কথা। তখন ভোলায় কোন পত্রিকা ছিলনা, সাংবাদিক ছিলেন আবু তাহের মিয়া, হাবিবুর রহমান, ফারুকুর রহমান, আফসার উদ্দিন বাবুল, হুমায়ুন কবির এরপর মরহুম আবু সুফিয়ান বাহার। ঢাকায় যাতায়াত কালে এক পর্যায়ে নিজ ইচ্ছায় ফকিরাপুল এলাকায় একটি পত্রিকা অফিসে যাই। পত্রিকাটি ছিল মজলুম জননেতা মাওলানা আঃ হামিদ খাঁন ভাষানীর সাপ্তাহিক হক কথা। অফিসে লোক জনের সাথে কথা বলে কাগজপত্র জমা দিয়ে আসি। এরপর দেশে এসে হাতে লিখে লিখে ডাক যোগে খবর পাঠাতে শুরু করি। অনেক গুলো সংবাদ পাঠিয়ে এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়ি। কথা ছিল তারাও ডাক যোগে পত্রিকা পাঠাবেন। তখন টেলিফোনে কথা বলতে হলে টি এন্ড টি তে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও লাইন পাওয়া যেত না। তবুও সংবাদ পাঠাতে থাকলাম। হঠাৎ একদিন ডাক পিয়ন দরজায় এসে কড়া নাড়লো। হাতে ৩/৪ কপি পত্রিকা। এরপর প্রতি সপ্তাহে পেপারের জন্য পোস্ট অফিসে যেতে হতো। এভাবেই সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়লাম।

ভোলার সংবাদঃ-

প্রথম কত সালে কোন পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেছেন?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
তারিখ মনে নেই। তবে ১৯৭৪ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক হক কথা পত্রিকার মাধ্যমে আমার সাংবাদিকতার শুরু।

ভোলার সংবাদঃ-
প্রথম কি শিরোনামে লেখা ছাপা হলো?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
তজুমদ্দিনে একই নম্বরের ৩টি জাল টাকা ধরা পড়লো। এ ঘটনাটা দিয়েই একটি রিপোর্ট তৈরী করলাম। শিরোনা ছিলো তজুমদ্দিনে জাল টাকার ছড়াছড়ি।

ভোলার সংবাদঃ-
প্রথম সংবাদ ছাপা পত্রিকাটি কিভাবে পেলেন?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-

তখন তো ডাক মারফত ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিলো না। এক সপ্তাহের পত্রিকা পরের সাপ্তাহে আসতো। ডাক যোগে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পত্রিকা হাতে পাই।

ভোলার সংবাদঃ-
আপনি কোন কোন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
প্রথমে কাজ করি সাপ্তাহিক হক কথায় ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। এরপর সাপ্তাহিক জন কথায় ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত। তারপর বরিশাল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক খাদেম পত্রিকায়  ১৯৭৮ থেকে ৮৯ পর্যন্ত। এরপর বরিশালের পত্রিকা সাপ্তাহিক বাংলার বনে ১৯৮৫ থেকে ৮৬ পর্যন্ত। শেষ সাপ্তাহিক দক্ষিণাঞ্চল ১৯৮৭ পর্যন্ত।

ভোলার সংবাদঃ-
এখন কোন পত্রিকায় কাজ করছেন কি ?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-

না এখন কোন পত্রিকায় কাজ করছি না।

ভোলার সংবাদঃ-
আপনার কর্মজীবনের শুরু কিভাবে?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-

শিক্ষকতা পেশা দিয়ে আমার কর্মজীবন শুরু। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত চাঁদপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছি। স্ব-ইচ্ছায় চাকরী ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা ও ঠিকাদারী। পাশাপাশি সাংবাদিকতাও।

ভোলার সংবাদঃ-
সাংবাদিকতা করতে গিয়ে মজার কোন অভিজ্ঞতা আছে কি?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
বরিশালের সাপ্তাহিক খাদেম পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ফখরুল ইসলাম খাঁন (এফআই খাঁন)। তিনি ছিলেন খাঁন বাহাদুর হাসেম আলী খাঁনের বড় ছেলে। প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন মো. আলী (আলী ভাই)। অফিসিয়াল কাজে বরিশাল পত্রিকা অফিসে যাই। ওই সময় বাবুগঞ্জের সদর ইউনিয়নে শশুর কর্তৃক পুত্রবধূর শ্লীলতা হানীর একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে ওই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আঃ ওহাব খাঁন সংবাদ প্রকাশের কারণে এলাকার সম্মান নষ্ট হয়েছে বলে ক্ষুব্ধ হয়ে পত্রিকা অফিসে চলে আসেন। অন্যান্যদের অফিসে না পেয়ে আমাকে দেখে অফিসের লোক মনে করে রাগ-ক্ষোভ ঝাড়তে থাকেন। এরপর আবেগ আপ্লুত অভিমানের ভাষায় বললেন, আমার এলাকার শশুরদের মান সম্মানের আর কিছুই রইলোনা। এক শশুরের অপরাধে সব শশুরের ইজ্জত শেষ। তবে ঘটনা যে সত্য, তা তিনি স্বীকার করেন। এর ৩দিন পর ওই জনপ্রতিনিধি নিজ এলাকায় আঁতোতায়ীর গুলিতে নিহত হলে আমরা হতবাক ও মর্মাহত হই। এ ঘটনাটি আজো আমার মনে পড়ে।

---

ভোলার সংবাদঃ-

৭০ এর বন্যায় কি দেখলেন?


মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-

৭০ এর বন্যার সময় আমার বয়স ছিল ১৫ কি ১৬ বছর। বন্যাটি ছিল বিভীষিকাময়। জীবনে এমন ঠান্ডা বাতাস, ঠান্ড পানি আর দেখিনি। তখন রমজান মাস। সময়টা ১১ নভেম্বর দিবাগত রাত ৯টা। রেডিওতে ১০ নম্বর সংকেতের কিছুক্ষণ পরপর মহাবিপদ সংকেত প্রচার করছিলো। আর মাঝে মাঝে হামদ-নাত গজল প্রচার হতে থাকে।
২৪ ফুট উচ্চতার সি ডাইক (ব্যাপক প্রশস্ত) বেঁড়ীবাধের উপর দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে গিয়ে ডুবে যায় বাড়ীঘর, গাছপালা। চলতে থাকে প্রচন্ড বাতাস-বৃষ্টি-তুফান। রাত ৩ টার দিকে বাতাস থেমে যায়। তখন সময় ৩ টা ৪৫ মিনিটের দিকে আবার ঠান্ডা বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হলে মানুষের কোলাহল থেমে গিয়ে শীতের তীব্রতায় মানুষগুলো পানিতে ডুবে গিয়ে মারা যেতে শুরু করে। ১২ নভেম্বর সকালে চার দিকে শুধু লাশ আর লাশ। এ যেনো এক মহা লাশের মিছিল। আমাদের বাড়ীর শতাধিক মানুষের মধ্যে ২৯ জনই মারা গেছে। সেদিন বন্যার তীব্রতা এতই বেশী ছিল যে টিএন্ডটি’র টাওয়ারটি ধুমড়ে মুচড়ে মাদুরের বটার মতো দলা-মচা হয়ে গিয়েছিল। ওই রাতে আমি ভাসতে ভাসতে একটি আম গাছে গিয়ে উঠি। গভীর রাতের এই বিভীষিকার মধ্যে আম গাছের একটি ডালা ধরে দাড়িয়ে থাকি। এই অবস্থায় আমার অজান্তে ডালা ধরারত বাম হাতে কখন যেনো একটি সাঁপ পেঁচ দিয়ে রাখে এতটাই ভীত ছিলাম যে তা আমি বুঝতেই পারিনি। ঝড় থেমে গেলে অনুমান হয় কি যেনো একটা হাতে পেচানো আছে। পরে সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে হাত ছাড়িয়ে নেই। যা আজো মনে পড়লে শরীর শিউড়ে উঠি।

ভোলার সংবাদঃ-
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে কি দেখেছেন আপনি?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
শুধু দেখিইনি। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে আমি সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছি। ২৫ শে মার্চ কালোরাতে পাক-বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ইপিআর এর উপর আক্রমন চালায়। এর আগেই আমরা তজুমদ্দিনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করি। বিশেষ করে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে তজুমদ্দিনে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন হাফিজ উল্যাহ চৌধুরী (টুনু মিয়া)। তখন আওয়ামীলীগ সভাপতি ছিলেন মরহুম মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মোস্তফা কামাল।
তাদের নেতৃত্বে আমরা গঠন করি তজুমদ্দিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সভাপতি ছিলেন মরহুম আবদুর রব চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অলিউল্যাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম আমি নিজেই। আর এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন মরহুম শামসুদ্দিন সেলিম, মীর শামসুদ্দিন, নাজিমঊদ্দিন (আলম পাটোওয়ারী), অহিদুর রহমান, হাবিবুল্যাহ সহ আরো অনেকে।
২৯ মার্চ থেকে তজুমদ্দিন স্টেডিয়াম মাঠে ৩৫ জনকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়। তখন রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে পলাতক দুই পুলিশ সদস্য আমাদের ট্রেনিং দেয়। যাদের কথা এখনো মনে পড়ে, শামসুল হক কমান্ডার, অহিদুর রহমান কমান্ডার, মরহুম কাজী মনতাজ, শামসুদ্দিন সেলিম, মীর শামসুদ্দিন, আব্দুল জলিল, মরহুম বেলায়েত হোসেন, রফিকুল ইসলাম মুন্সি, হাবিবুল্যাহ, হরলাল চৌধুরী, হারিস পোদ্দার, আবুল কাসেম, লক্ষণ চন্দ্র হাওলাদার, মলয় কৃষ্ণ হাওলাদার, জেবল হক মিয়া, মো. ওয়াজি উল্যাহ, মফিজুল ইসলাম শিকদার, মো. কাঞ্চন মিয়া, মাকসুদ মিয়া, মন্টু বিশ্বাস, মরহুম নুরনবী মাস্টার, মরহুম আচমত আলী মাস্টার প্রমুখ। ভোলা সদরে যখন পাক-বাহিনী আসে তখন আমরা আত্মরক্ষার জন্য স্থান পরিবর্তন করি।
তৎকালীন বোহানউদ্দিন উপজেলার বর্তমানে তজুমদ্দিনের গোলকপুরের গীরেন্দ্র হাওলাদার বাড়ীতে একটি ও শিবপুর এন্তাজ মিয়ার বাড়িতে আরেকটি ক্যাম্পে গোপনে ট্রেনিং দেয়া হয়। পরে সুযোগ বুঝে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অপারেশন চালানো হয়। তজুমদ্দিনে যুদ্ধের সময় বেশী সহযোগিতা ও সাপোর্ট পেয়েছি তৎকালীন সার্কেল অফিসার রাজস্ব (সিও রেভিনিউ) আবদুল হালিম, সার্কেল অফিসার উন্নয়ন বাবু নিহার রঞ্জন রায় এর কাছ থেকে। ওনাদের ২ জনের ২ ছেলে আমাদের সাথে পড়ালেখা করতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জয়ের উল্লাসে কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধারা বিপদগামী হয়ে পড়ে। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে। এসব গ্লানীর কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল। তাই রাগে ক্ষোভে অভিমানে তখন তালিকাভূক্ত হইনি। পরে কয়েক বার চেষ্টা করেও তালিকাভুক্ত হতে পারিনি। অথচ কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী, সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিল, মেজর শাজাহান ওমর, হাই কমান্ডার ছিদ্দিক মিয়ার স্বাক্ষরিত সনদ পেয়েছি। আমাদের সাথে থাকা অনেকেই ইতোমধ্যে গেজেটভুক্ত হয়েছে।

ভোলার সংবাদঃ-
কত সালে তজুমদ্দিন প্রেসক্লাব গঠন করেছেন?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-

আমি সাংবাদিকতা ছেড়ে দেয়ার প্রায় ৮ বছর পরে ১৯৯৪ সালে তজুমদ্দিন প্রেসক্লাব গঠন করা হয়। ওই ক্লাবের তেমন কোন কার্যক্রম ছিলনা। অনেকেই সাংবাদিকতা ছেড়ে চাকরী বা অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে আবার নতুন করে সাংবাদিকতা শুরু করে। ২০০৭ সালে সাংবাদিকতায় সম্পৃক্তদের একত্রিত করে আহম্মদ ভবনের তৃতীয় তলায় প্রেসক্লাবকে পুনঃগঠন করা হয়। তখন আমাকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়। সেই থেকেই তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবের কার্যক্রম ও কমিটি নিয়মিত চলছে বলেই জানি।

ভোলার সংবাদঃ-
তজুমদ্দিন প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে ছিলেন?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমিরুল ইসলাম বাসেত ও সাধারণ সম্পাদক আশিষ কুমার বৈষ্ণব।

ভোলার সংবাদঃ-

তজুমদ্দিন প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য কত জন ছিলো?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
তজুমদ্দিন প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সংখ্যা ১১ জন ছিল।

ভোলার সংবাদঃ-
যদি বলি সাংবাদিকতা করে কি পেলেন তাহলে কি বলবেন?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-

স্বার্থহীন সাংবাদিকতা করে প্রথমত সম্মান পেয়েছি। সংবাদের সূত্র ধরে অপরাধের প্রতিকার হলে পেয়েছি আনন্দ। তবে অনেক শুনতে হয়েছে বকাঝকা, কটুকথা। খেতে হয়েছে ৮টি মামলা। তবে আমার সংবাদ তদন্তে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় আমাকে আটকাতে পারেনি বরং মামলা কারীরাই ফেঁসে গেছে। তখন একটি সংবাদ প্রকাশ হলে আলোড়ন সৃষ্টি হতো। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হতো। ভোলায় প্রথম ডিসি ছিলেন সৈয়দ মনিরউদ্দিন। প্রকাশিত সংবাদ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তজুমদ্দিনের প্রথম টিএনও শাহে আলম, ২য় টিএনও আঃ হামিদের ৩ মাস সিভিল জেল হয়েছিল। এছাড়াও সংবাদের সূত্র ধরে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, তজুমদ্দিনের তৎকালীন রেড ক্রিসেন্ট অফিসার শামসুল আলম, টিএইচ সরল কৃষ্ণ র্কীতনীয়া, ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম, পিআইও মজিবুর রহমান, কৃষি অফিসার আহসানুল হক সহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে। এছাড়া ১৯৮৫ সালে সাপ্তাহিক খাদেম পত্রিকায় তাজমিয়ার বাজারে বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তৎকালীন চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জেল খাটেন। এখানেই অর্জন, এখানেই শান্তি, এখানেই স্বার্থকতা।

ভোলার সংবাদঃ-

তজুমদ্দিনের প্রথম সাংবাদিক হিসেবে আপনার অনুভূতি কি?

মো.মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
সাংবাদিকতাই আজকের এই মোস্তাফিজুর রহমান কে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছে। সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় আত্মতৃপ্তি।

ভোলার সংবাদঃ-
নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের সম্পর্কে কি ধারণা আপনার?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
নতুনরা কর্মঠ ও উদ্যমী। আহ্বান থাকবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করে দেশ এবং জাতির উন্নয়ন সাধন করুন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যত কষ্ট গ্লানি আসুক না কেন রাগে অভিমানে বিমুখ না হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

ভোলার সংবাদঃ-
আপনার ভবিষ্যত চাওয়া কি?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
আমার ইচ্ছা সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। তখন থেকে এখনো গ্রাম-গঞ্জে সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশ ও সমাজটা সুন্দর ভাবে চলুক। রাজনৈতিক হানাহানি বন্ধ হোক। স্বাধীনতার প্রত্যাশা পুরণ হোক। সুফল সাধারণ মানুষের ঘরে উঠুক। সাধারণ মানুষদের নিয়েই আছি থাকব।

ভোলার সংবাদঃ-
বর্তমান যুগে অনলাইন গণমাধ্যমের ভূমিকা কি?

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-

সংবাদপত্র হলো সমাজ ও দেশের দর্পণ। পৃথিবীতে দ্রুত সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার একটি পদক্ষেপ হলো অনলাইন গণমাধ্যম। এ যেনো পৃথিবী হাতের মুঠোয়, আঙ্গুলের ডগায়। আর এ কাজটি করে যাচ্ছে ভোলার সংবাদ ডট কম। তাদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।

ভোলার সংবাদঃ-
আপনাকে অশংখ্য ধন্যবাদ।

মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াঃ-
আপনাকেও ধন্যবাদ।

-বিএস





জেলার খবর এর আরও খবর

উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায়
ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত
ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময়
চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস
ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ!
ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী
ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ভোলার তানভীর শিকদার, বিভিন্ন মহলের অভিনন্দন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ভোলার তানভীর শিকদার, বিভিন্ন মহলের অভিনন্দন

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।