শিরোনাম:
●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ●   আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
ভোলা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোলার সংবাদ
সোমবার ● ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » শিরোনাম » মুক্ত স্বাধীন দেশ গড়ার প্রথম মাইলস্টোন শেখের কিল্লা
প্রথম পাতা » শিরোনাম » মুক্ত স্বাধীন দেশ গড়ার প্রথম মাইলস্টোন শেখের কিল্লা
৬৯৯ বার পঠিত
সোমবার ● ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মুক্ত স্বাধীন দেশ গড়ার প্রথম মাইলস্টোন শেখের কিল্লা

 ---

এএইচএম নোমান: দিন দিন স্মৃতি থেকে সব যে বিস্মৃতি হয়ে যায় তার আরেকটি প্রমাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তান কারাগার থেকে প্রত্যাবর্তন পর দেশ গড়ার ডাকের প্রথম সোপান। তিনি হিথ্রো-দিল্লী হয়ে স্বদেশে ১০ই জানুয়ারী ১৯৭২ইং সনে প্রত্যাবর্তন করেছেন। যেহেতু এটা ঐতিহাসিক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বলেই এটা সবারই মনে আছে। কিন্তু দেশে প্রত্যাবর্তনের পর চর-গ্রাম দেশে তাঁর প্রিয় জনগণের কাছে, কোথায় কখন কত তারিখ প্রথম গেলেন কি করলেন, কি বললেন, কি দিক নির্দেশনা রাখলেন এর ফলশ্রুতি বা ফলাফল কি এস-ব প্রশ্নের উত্তর কিন্তু অনেকেরই মনে নাই এমনকি জানাও নাই।

জাতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনেক সবই স্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে, যা আকাঙ্খিত নয় এবং গ্রহনীয় নয়। একটি সমাজের, অঞ্চলের দেশের যতই কৃষ্টি কালচার খাদ্য, বস্ত্র, চালচলন, পরিবেশ, আচার, বিচার, ধর্ম, কর্ম, কৃষি, সম্পদ রাজনীতি ইত্যাদির গতি প্রকৃতি গভীরে-শিকড়ে যতই জানা যাবে ততই বুঝা যাবে সে সমাজ-দেশের ভীত কত দৃঢ়। এতে চলমান ইতিহাসও সৃষ্টি হয়। ভবিষ্যতের আগমনি বার্তা নিয়ে শক্ত ভীতের উপর সমাজ-দেশ গড়ে উঠে। বিশ্ব দরবারে নিজের স্বকিয়তা নিয়ে শুধু মাথা উঁচু করে দাড়াবই না বরং অন্যের কাছেও অনুকরনীয় হবে। যাক, যে শিরোনাম দিয়ে লিখাটা শুরু কললাম তা বড় হয়ে যাচ্ছে বা অন্য দিকে যাচ্ছে কিন্তু নেয়া যাবেনা। তাই বলছি, বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর সর্ব প্রথম যে গ্রাম থেকে ‘দেশ গড়ার ডাক’ দিতে গেলেন সে গ্রামের নাম চর পোড়াগাছা, ইউনিয়ন চর বাদাম, থানা রামগতি, জেলা নোয়াখালী। বর্তমানের লক্ষ্মীপুর জেলা। দিনটি ছিল ২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ইং। বার এই মুহূর্তে মনে আসছেনা। শীতের আমেজ ছিল। মনে আছে ২টি হেলিকপটার যোগে বঙ্গবন্ধু বাগ্যারদোনা ¯্রােতহীন মেঘনা ঘেষে নুতন  গড়ে উঠা চর কলাকোপা, মৌজা চর পোড়াগাছা পৌঁছেন। সকাল ১০টায় হেলিকপটার থেকে বিশাল ব্যক্তিত্ব স্বপ্নমুখী বঙ্গবন্ধু নামতে নামতে চেনামুখ তোফায়েল ভাইসহ আরো অনেকে নেমে এলেন। পুরো নুতন চর জাগা এলাকা জনসমুদ্র। কে কাকে দেখে, সবাইর শ্রদ্ধা ভরা তীর চোখ প্রাণ প্রিয় মুক্তির প্রতিকৃতির দিকে। দৃঢ় পায়ে হেঁটে ডান বাম তাকাতে তাকাতে ১-২ বার খোলা আকাশের দিকে (আল্লাহর শোকরিয়া) তাকিয়ে তৈরী নুতন স্থাপন করা হুগলা/তেরপাল মোড়ান মাটির কিল্লায় যথাস্থানে দাড়ালেন। চতুর্দিক ঘুরে ঘুরে আবাল-বৃদ্ধ-যুব-কিশোর শিশু মানব সমুদ্রের উৎফুল্ল মুহুর্মূহু হর্ষধ্বনীর উত্তরে, হাত নেড়ে অভিবাদন গ্রহণ করছিলেন অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। আমার মত আনাড়ী লেখকের ভাষায় এ সমৃতিময় অভূতপূর্ব ও বিরল মুহূর্তের বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়।
মাটির কিল্লার ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা চর রমিজ ইউনিয়নের ফর্সা চৌকষ চেয়ারম্যান আজাদ উদ্দিন, আজাদ মিয়া। গাঁয়ে সাদা গেঞ্জী, কোমড়ে লাল গামছা, উৎফুল্লতায় ব্যস্ত, আবেগের সন্ত্রস্ততা নিয়ে সভা পরিচালনা করছিলেন।  অনেকের মধ্যে এ মুহুর্তে যা মনে আছে স্থানীয় যারা কিল্লায়/মঞ্চে ছিলেন রামগতি থেকে নির্বাচিত এমসিএ সিরাজুল ইসলাম, এলাকার ও আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোশারেফ হোসেন মোশারেফ ভাই, রামগতি থানা কমান্ডার হাছান মাহমুদ ফেরদৌস, মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, কচি ভাই, লক্ষ্মীপুরের শাহজাহান কামাল, খালেদ মোঃ আলী, নোয়াখালীর মোঃ হানিফ, চৌমুহনীর নুরুল হক মিয়া, মাইজদী থেকে আবদুল মালেক উকিল, হাজারো মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ। (মাফ করবেন, সবাইর কথা ও ঘটনা, স্থান  অসংকুলান, তাই দেয়া গেলনা পারে বেঁচে থাকলে লিখব অশা রাখি)। হানিফ ভাই তাঁর আগের রাতে আলেকজান্ডারে আমাদের বাসায়ই ছিলেন, যাতে সকাল সকাল সময়মত সভায় থাকতে পারেন। এছাড়া আরো অনেক রাজনৈতিক নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, নোয়াখালী, ফেনী এলাকা থেকে পরিচিত আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাড়ীতে বাসায় রাতেই এসে অবস্থান নেয়। তখন ভাঙ্গা এবড়ো থেবড়ো কাঁচা রাস্তা-ঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ ছিল এবং যানবাহন গাড়ী বাস রিক্সাও তত ছিলনা-অনুন্নত। যুদ্ধ বিধবস্থ কোথাও কোথাও রাস্তা কাটা, ব্রীজ ভাঙ্গা, পোড়াবাড়ী ঘর দোকানপাট প্রায় সর্বত্রই দৃশ্যমান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিল্লায় দাড়িয়ে গগণবিদারী কন্ঠে কি কি বল্লেন সব স্মৃতিতে না আসলেও মূল কথাসমূহ মনে আসে যে ‘দেশ আমাদেরকেই গড়তে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে, প্রত্যেক বাড়ীতে একটি করে লাউ গাছ হলেও লাগাতে হবে। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে দেশ গড়া ও অর্থনৈতিক মুক্তি আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে’।  সংক্ষিপ্ত ভাষণ শেষে কোদাল হাতে নিয়ে স্বহস্তে মাটি কেটে ওড়াতে দিলেন। সফর সাথী নেতৃবৃন্দ একে একে একইভাবে মাটি কেটে রাস্তা নির্মানের, স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ উদ্বোধন করলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই সঙ্গে ২ কি:মি: ব্যাপি ওড়া কোদাল সহ সোজা লাইন ধরে প্রায় ৪ (চার) হাজার স্বেচ্ছা কর্মী মুক্তিযোদ্ধা সমবায়ী যুবক গায়ে সাদা গেঞ্জি, পরনে প্যাছ দেয়া লুঙ্গী গামছা পরে রাস্তা বরাবর একই সঙ্গে একই কমান্ডে ঢোল সহরতের  তালে তালে মাটি কেটে রাস্তা বাঁধার কাজ শুরু হয়ে, সময়ের মধ্যেই শেষ হলো।
বঙ্গবন্ধু ইতোমধ্যে হাত ধুঁয়ে পাশ্ববর্তি তোফায়েল ভাইর দ্বীপ ভোলা জিরো পয়েন্ট উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টার যোগে রওয়ানা হয়ে গেলেন। যে গ্রাম কিল্লায় দাড়িয়ে প্রথম দেশ গড়ার ভাষণ দিলেন, যেখান থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে নিজ হাতে মাটি কেটে নোয়াখালী-রামগতি আঞ্চলিক সড়ক বাঁধার কাজ উদ্বোধন করলেন, সেই কিল্লাই আজ ‘শেখের কিল্লা’ নামে পরিচিত-সর্বখ্যাত। এই কিল্লাকে ঘিরে ও পাশেই গড়ে উঠেছে দেশের প্রথম ‘গুচ্ছগ্রাম’ যা আজ সারা দেশে ঠিকানা, আদর্শগ্রাম-গুচ্ছগ্রাম-আশ্রায়ন প্রকল্প নামে ভূমিহীন ছিন্নমূলদের জন্য স্থাপন হচ্ছে-চলমান। মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি ৭০ এর ১২ নভেম্বর সাইক্লোনে বিধবস্থ রামগতিতে সমবায়ের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধের আশংকায় উৎপাদন যুদ্ধও চলমান ছিল। এই কিল্লা ঘিরেই নতুন জাগা চরে আলু, সোয়াবীন, চিনাবাদাম, সূর্যমুখীসহ নানাজাতীয় শাক শবজি তরিতরকারী ফসল প্রদর্শনীমূলক চাষাবাদ করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে এখন লক্ষ্মীপুর জিলাকে ‘সোয়াবীন জেলা’ বলা হয়। সমবায়ীদের গড়া চর আলেকজান্ডারে দেশের প্রথম উদ্ভাবনী গুচ্ছগ্রাম ‘বিশ্বগ্রাম’ মেঘনার অতল গহবরে চলেগেছে। ১৯৭২ সালে স্থাপিত। তৎস্থিত ‘বিশ্বগ্রাম’ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এই  শেখের কিল্লার পূর্ব-উত্তর পাশে এসে আশ্রয় নিয়ে শিক্ষার আলোকবর্তিকা এখনও জ্বালিয়ে যাচ্ছে। স্কুলকে বুকে ধরে চর আবদুল্লার বিশ্বগ্রামবাসীরা আবারো স্বেচ্ছাশ্রমে একই নক্সায় স্ব-খরছে-ব্যবস্থায় এখানে নতুনভাবে ‘বিশ্বগ্রাম’ স্থাপন করে ঘর বসতি করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। অনতিদূরে মাইজদী রাস্তায় আজাদনগর, মফিজনগর, শেখের কিল্লাস্থিত এখন নবগঠিত পোড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদ। ইচ্ছা থাকলে, নিজেরাই করতে পারে, যদি ভীত শক্ত থাকে। প্রমাণ করল এই ‘শেখের কিল্লা’র প্রেরণা। সৃষ্টি কর্তার দান, জেগে উঠা চরাঞ্চলে  এখন হাজারো বসতি গাছপালা, বাজার, পুকুর, মাছ, মুরগী-হাঁস। একইভাবে গড়ে উঠেছে পশ্চিমপাশে নোমানাবাদ স্কুল, মসজিদ, স্বাস্থ্যগ্রাম, পশ্চিম দক্ষিণে আবদুর রব চৌধুরীর সেবাগ্রাম, একটু পূর্ব দক্ষিণে বান্দের হাট পাশে আসম রব’র বাড়ী মিলে ‘পতাকা গ্রাম’। পশ্চিম উত্তর দিকে চর সীতায় স্বনির্ভর আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী মনতোষ দাশ’র মাছ-মুরগী-গবাদিপশু  (মামুগ) খামার, পাশেই বুড়া কর্তার মন্দির। তখন সমবায়ীদের সবজি ভাত আন্দোলন এবং ‘মামুগ’ দিয়েই দেশ দাড়াবে এই আন্দোলন গড়ে উঠে । পশ্চিম উত্তরের হাজির হাটে (বর্তমান কমলনগর) ইউনিয়ন পরিষদ সামনে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার, মোহাম্মদ তোহা স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়। শেখের কিল্লার দক্ষিণে অনতি দূরে রামদয়াল সুলতানা একাডেমী পার হয়ে, রামগতি বাজার ঘেষে পরিকল্পিত বয়ার চর। বিবিরহাট, আলেকজান্ডার বাজার সদর এলাকা পাশ দিয়ে, নদী ভাঙ্গন রোধ বাঁধ বাঁধার কাজ চলছে। এর ফলে  চরিত্রহীন মেঘনাকে প্রাকৃতিকভাবেই নয়নাভিরাম  করে দেশী বিদেশী পর্যটককে আকৃষ্ট করা এক বিশাল অবদান সৃষ্টিকর্তার, উছিলা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। চরের মহিষের দই, নদীর ইলিশ মাছ, সংগ্রামী জেলে চাষীদের উজাড় করে দেয়া আতিথেয়তা ভালবাসা, কোথায় পাবে এতো বিচিত্রতা ?
তাই এই অঞ্চলের মানুষের একান্ত আশা আবেদন ‘শেখের কিল্লা’কে ঘিরে গড়ে উঠা, আল্লাহর অপার সৃষ্টির জীবন গাঁথার কলকাকলী ভাঙ্গা গড়ার নদীর খেলাকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুর ‘প্রথম গ্রাম গমন, ঐতিহাসিক দেশ গড়ার ডাক’কে দেশের জন্য অবিস্মরণীয় করে রাখার জন্য বর্ণিত নির্দিষ্ট শেখের কিল্লা স্থানে ১. একটি স্মৃতি স্তম্ভ, ২. পর্যটক রেষ্ট হাউজ ৩. স্থানীয় কৃষ্টি কালচার, তাঁর ভাষণ ইতিহাসসহ পাঠাগার ৪. তৎকালীন বৃহত্তর নোয়াখালী (বর্তমান ফেনী-নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর) জেলার তথা সারা গ্রামবাংলার ঐতিহাসিক ‘শেখের কিল্লা স্মৃতি কেন্দ্র’ স্থাপন করা হউক। ইতোমধ্যে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা  সমবায়ী ও রাজনৈতিক সচেতনদের উদ্যোগে এ মাটি থেকে গড়ে উঠা বেসরকারী  সংস্থা ‘র্ডপ’ এর সৌজন্যে ‘শেখের কিল্লা মাইলষ্টোন’ স্থাপন করা হয়েছে যা এলাকা ও দেশ বিদেশের পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতি, পর্যটন ও প্রতœতত্ব বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষনসহ বঙ্গবন্ধুর দেশ গড়ার ডাক এর ‘স্মারক স্মৃতি কেন্দ্র’ তৈরীর আবেদন রাখছি। প্রাসঙ্গিকভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম পদার্পনে ‘গুচ্ছগ্রাম’ স্থাপন স্মরণে, বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী আফম মোস্তফা কামাল’র চিন্তা প্রসূত ইউনিয়ন ভিত্তিক  ৫ (পাঁচ) শ নদী ভাঙ্গা অসহায় গরীব পরিবারের জন্য সুউচ্চ প্রসাদ সম্পন্ন সামগ্রীক ও সমন্বিত উন্নয়ন পাইলট আবাসন গ্রাম স্থাপন করার আহবান জানাই। প্রাণ সূত্রতার টানে, শোকের মাস গত ২৬ আগষ্ট ২০১৬ এই শেখের কিল্লা ছুঁয়ে গাড়ী যোগে রামগতি থেকে মাননীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে (আমি সহ) উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ, পৌরসভা মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন মেজু, কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান সোয়াইব খন্দকার সহ সকল ইউনিয়নের আওয়ামী যুব লীগ নেতারা টঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধি জিয়ারতে যান, সেখানে আবার ‘মাতৃত্বকালীন ভাতা কেন্দ্রিক স্বপ্ন প্যাকেজ’ মা’রা তাদেরকে ফুল দিয়ে সেতু বন্ধন স্বাগত জানান।

বঙ্গবন্ধুর প্রথম রামগতি সফর কিভাবে কেন হলো কে এবং কি এর পেছনে কাজ করেছে যতটুক যা জেনেছি তা হলো, তিনি যখন প্রথম গ্রাম সফরে স্বেচ্ছাশ্রম ও দেশ গড়ার সংগ্রামের ডাক দিবেন, তা ঠিক হলো তোফায়েল ভাই’র  (জননেতা জনাব তোফায়েল আহমদ, বর্তমান বানিজ্য মন্ত্রী) এলাকা ভোলা এবং এটাই স্বাভাবিক। যিনি সুঃখ দুঃখের আপাদমস্তক দেশ ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট ছায়াসম সহচর ছিলেন। কিন্তু রামগতি কেন তাও আবার ভোলার  আগে ? জানা যায়, যখন গণভবনে গ্রাম সফর পরিকল্পনা করা হয় তখন পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকা রামগতির দূরন্ত ডাটসাইটে বীর মুক্তিযোদ্ধা  মোঃ আজাদ উদ্দিন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামী হাতিয়া-রামগতির সন্তান মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুল বারীও সেখানে ছিলেন। তখন সাক্ষাৎ ও আলাপচারিতায় বঙ্গবন্ধুকে রামগতি হয়ে ভোলা যাওয়ার আব্দার ও প্রস্তাব দেন।

আমরা মাত্র ২/৩ দিন আগে জানতে পারলাম যে, বঙ্গবন্ধু রামগতি আসবেন, পোড়াগাছার কলাকোপা, স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা বাঁধায় যোগদিবেন ও উদ্বোধন করবেন। চর রমিজ ইউনিয়নের বিবিরহাট বাজারে আজাদ মিয়াসহ বিশাল প্রস্তুতি। কতলোক, কিভাবে, কতটুকু দীর্ঘ রাস্তা, কতক্ষনে বাঁধবেন ইত্যাদি সব পরিকল্পনা। আওয়ামীলীগ সেক্রেটারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজিউল্ল্যা মিয়া যেহেতু আলেকজান্ডারের, তাঁর টান ছিল এখানকার লোকদেরকে কি করে সুশৃঙ্খলভাবে সংগঠিত করে বঙ্গবন্ধুর আগমন স্থলে যাওয়া যায়, তার জন্য প্রাণপণ উদ্বেগ উৎকন্ঠা আনন্দ। সম্পর্কে আত্মীয় বয়সে ছোট হলেও আমাকে সবসময় ভালজেনে আপনি করেই ‘ভাই’ ডাকতেন। বল্লেন, বঙ্গবন্ধু আগমন উপলক্ষ্যে কি কি  করা যায় আসুন সমবায়ীরাসহ সবাই বসি।
তখন প্রতিদিন আমরা ‘সন্ধাকালীন আসরে’ বসতাম  সমবায় সভাপতি আবদুর রব খন্দকার, মুক্তিযোদ্ধা তাজল ওসি, ছোলায়মান মিয়া বা রফিক সেক্রেটারী বা তোফায়েল ডাক্তার সাহেবের ঘরে। সেদিন অজিউল্ল্যাহ মিয়ার নেতৃত্বে আমরাও তোফায়েল ডাক্তারের চেম্বারে বসলাম। আমিসহ ঠিক করলাম, সমবায়ীরা ২১ ফেব্রুয়ারী স্মরণ উপলক্ষ্যে বুকে অ আ ক খ বর্ণমালা ১,২,৩ লাগিয়ে  মিছিল সহকারে পোড়াগাছা যাওয়া হবে। প্রসঙ্গত, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহা-পরিচালক জনাব বাসুদেব গাঙ্গুলীর সাথে তাঁর সভা কক্ষে দেশী বিদেশীদের এক মতবিনিময় সভায় (১৪.০২.২০১৭) অংশ নিয়ে খুবই তৃপ্তির কথা, গেজেটে প্রকাশ যে, দীর্ঘ ৪৪ বছর পূর্বে অনানুষ্ঠানিকভাবে গণশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ হলেও বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই ২৩/০৮/২০১৬ তারিখে ‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড’ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। যা ২০ ফেব্রুয়ারী  ১৯৭২ দিনটির কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমরা ৭-৮ হাজার সমবায়ীরা সকলে বুকে সুই-সূতা দিয়ে ক খ গ ১, ২,৩ লাগিয়ে শেখের কিল্লায় যাই। প্রথম বিজয়ের মাসে প্রথম সপ্তাহেই মুক্তির পরবর্তি ২২ ডিসেম্বর ১৯৭২ আলেকজান্ডার স্কুল গৃহে মুক্তিযোদ্ধা সমবায়ীদের  এক সভায় ‘নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে ২য়  যুদ্ধ’ ঘোষণা করা হলো। পাশাপাশি দ্বিস্তর বিশিষ্ট সেলফ জেনারেটিং থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির উদ্যোগে ‘মাটিকাঠি’ পদ্ধতিতে স্বেচ্ছা শ্রমে ১২০টি গণশিক্ষা কেন্দ্র চালু হয়ে গেল। তম্মধ্যে বঙ্গবন্ধু সরকার আমলেই ১২টি সরকারী প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা পায়। যাক মূল কথায় আসি, মোজাম্মেল পাটওয়ারী, প্রসন্নবাবু, অজিউল্ল্যাহ মিয়াসহ নেতাকমী, বৈঠকে ঠিক হলো, মুক্তিযোদ্ধা আমজনতাসহ ওড়া কোদাল নিয়ে আজাদ মিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে রাস্তা বাঁধা, ব্যবস্থাপনা কাজে সহায়তা করবেন ও এলাকা ভিত্তিক গ্রুপ গ্রুপ করে মিছিল সহকারে যাবেন। এ পরিকল্পনা ভাবেই চতুর্দিক থেকে মিছিলে মিছিলে সেদিনে বঙ্গবন্ধুর আগমন স্থান ভরপুর হয়ে গেল। কাঁচা ভাঙ্গাচুড়া, চিকন রাস্তা, মেঠোচর ঘরবাড়ী শূন্য এলাকা, শুধু উদ্বেলিত মানুষ আর মানুষ। আর এখন ঘন ঘন ঘরবাড়ী, গাছগাছালি, ফসল, স্কুল মাদ্রাসা লোকালয় ঘেরা ‘শেখের কিল্লা’ যেন কালের সাক্ষী হয়ে তাকিয়ে আছে স-ব সৃষ্টির দিকে। আর শেখের কিল্লাটি কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছে, ‘তোমরা আমাকে ভুলিয়ে দিচ্ছ জগৎবাসীর কাছে, যা আমি ডাক দিয়েছিলাম এখান থেকে যে, ‘নিজের পায়ে দাড়াতে হবে, স্বনির্ভর হতে হবে। মাথা উঁচু করে  জানান দিতে হবে যে আমরাই পারি’।
রামগতি কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির ‘যার ভিটা তাঁর ঘর’ প্রকল্প আওতায় শেখের কিল্লাকে কেন্দ্র করে পাশেই খোলা চরে চৌচালা ১টি টিনের ঘর ও ১টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হলো। হাজীগঞ্জ বাজারের কাছে বেড়ীর বাহিরের আলী মিয়াকে ধূ-ধূ এলাকায় ৩০ টাকা মাসিক বেতনে কেয়ারটেকার রাখা হলো। উদ্দেশ্য ‘বিশ্বগ্রাম’ আদলে বড় আকারে ‘গুচ্ছগ্রাম’  স্থাপন করা।   তখন বেড়ীর বাহিরের অংশে হদু ব্যাপারী, নাপিত বাড়ী ও কোব্বাত হাজী বাড়ীসহ হাতে গণা কয়েকটা বাড়ী ছিল। আর  কিছু গাছ গাছালিসহ কোব্বাত হাজী বাড়ীর দরজায় মাত্র একটা টিউবওয়েল ছিল। বড়খেরী ভুইয়া পাড়া প্রাথমিক সমবায় সমিতির মোঃ দেলোয়ার হোসেন (লম্বা দেলু মিয়া) অগ্রণী ভূমিকা নিলেন। জেলার ভূমি কর্মকর্তা (এডিসি) আনসার আলী মোল্লাসহ ঢাকা যোগযোগ করলেন। এদিকে ভূমিহীন, মুক্তিযোদ্ধা, নদী ভাঙ্গা, ৭০’র ১২ নভেম্বর অতি ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরী করতে লাগলেন সমবায়, সমিতির আওতায় যার সাক্ষী একরাম মিয়া। চর আবদুল্ল্যা, আলেকজান্ডার থেকেও সিরাজ খলিফা, আরো কি নাম মনে নাই, তালিকা তৈরী করলেন। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকতার বেড়াজালে, প্রতিযোগীতার ধকলে দেলু মিয়ার ধৈর্যশীল ও বলিষ্ট নেতৃত্বে চর গাজী, বড়খেরীর লোকেরাই গুচ্ছগ্রামে স্থান পেলেন। অপরদিকে আমাকে ১নং আসামী করে নোয়াখালী সদরের কিছু আদিবাসী বয়াদার দাবীতে মামলা রজু করল, শেষ পর্যন্ত ধোঁপে টিকেনি। সমবায়ের  উদ্যোগে ইউনিয়ন এগ্রিকালচার এসিসটেন্ট ইউএএ পরিমল বাবুর হাতে শুরু করা প্রদর্শনি মিষ্টি আলু, সোয়াবীন চাষ আজ বিশাল জনপদ। মনে হয় এই সেদিন দেলু মিয়ার নিজের হাতে গুচ্ছগ্রামে লাগান নারিকেল গাছের প্রথম ডাবের পানি আমাকে তৃপ্তি সহকারে খাওয়ালেন।   বালুর চরের জেবল হক মেম্বার নুতন উৎপাদিত আলু বাসায় দিয়ে গেলেন। সোয়াবীন বীজ দিয়ে পিঠা বানিয়ে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা খাদ্যাভাস এস্তেমাল করতেছিল।  ‘সমবায়’ খোদিত ইট তৈরী ১নং বিশ্বগ্রামে ব্রিক ফিল্ড স্থাপন (নদী গর্ভে) ও বিচ্ছিন্ন বিশ্বগ্রামের সাথে আলেকজান্ডার-রামগতি সংযোগ সড়ক নির্মাণ হলো আজাদ মিয়ার দাপটে।
মোট কথা মুক্তিযুদ্ধ, ৭০’র ১২ নভেম্বরের বন্যার্তদেরকে নিয়ে শুরু করা  ক. ত্রাণ পুনর্বাসন খ. যুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধ- উৎপাদনযুদ্ধ এবং গ. মুক্তিযুদ্ধ  পরবর্তি স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর দেশ গড়ার প্রথম ডাকের প্রেরণা, দেশ একাকার হয়ে সম্মিলিত শক্তির ‘সৃষ্টি’র উন্নয়ন ভীত আজও চলমান ও ভবিষ্যতেও থাকবে। যার কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে প্রথম মাইলষ্টোন ‘শেখের কিল্লা’। এভাবেই উদ্যোগী উন্নয়ন, রাজনীতিক ও সরকারী নীতি নির্দ্ধারনীদের একাত্মতায় টেকসই উন্নয়নের মহা সড়ক নির্মাণে বাংলাদেশ এগিয়ে। মুুক্ত স্বাধীন দেশ গড়ার প্রথম ডাক ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা দেশ ও দুনিয়ায়।

লেখকঃ

এএইচএম নোমান, প্রতিষ্ঠাতা - সেক্রেটারী, রামগতি থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি এবং গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী-২০১৩।
ই-মেইল: [email protected]





শিরোনাম এর আরও খবর

উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায়
ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত
ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময়
চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস
ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন
ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ!
ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী
ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।