শিরোনাম:
●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ●   আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
ভোলা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোলার সংবাদ
বুধবার ● ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলা দ্বীপের প্রথম সাংবাদিক মো. আবু তাহের
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলা দ্বীপের প্রথম সাংবাদিক মো. আবু তাহের
৬৮৬ বার পঠিত
বুধবার ● ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ভোলা দ্বীপের প্রথম সাংবাদিক মো. আবু তাহের

---

ভোলা দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা। যে খানে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ মানুষের বাস। যা এখন একটি মডেল জেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সম্ভাবনাময় এই জেলাকে দেশসহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য সর্বপ্রথম যে মানুষটি কলম হাতে তুলে নিয়েছেন তিনি আমাদের সকলের পরিচিত প্রিয় মুখ বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মো. আবু তাহের। সম্প্রতি ভোলার জনপ্রিয় ও সর্বাধিক প্রচারিত এবং পঠিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ভোলার সংবাদ ডট কম এর মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন তার না বলা কথা। ভোলা সদর উপজেলা সহ জেলার ৭টি উপজেলায় প্রথম ও ৪০ উর্ধ্ব সাংবাদিক সহ প্রেসক্লাব এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একান্ত সাক্ষাতকার ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভোলার সংবাদ। এরই ধারাবাহিকতায় আজ থাকছে ভোলা দ্বীপের প্রথম সাংবাদিক ও ভোলা প্রেসক্লাব এর প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক মো.আবু তাহের এর না জানা কথা। একান্ত এই সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন ভোলার সংবাদ ডট কমের প্রধান সম্পাদক আরিফুল ইসলাম রিয়াজ সাথে ছিলেন সম্পাদক ও প্রকাশক ফরহাদ হোসেন।

ভোলার সংবাদঃ- ভোলার দৌলতখানের দক্ষিণ সৈয়দপুরের দুরন্ত ছেলে মো. আবু তাহেরের জন্ম ১৯৩৩ সালে। ৪ ভাই ২ বোনের মধ্যে ৪র্থ মো. আবু তাহের। বাবা মরহুম আলহাজ্ব মৌলভী গোলাম রহমান ও মাতা মরহুমা ছাহেরা খাতুন এর ঘর আলো করে জন্ম গ্রহণ করেন এই সাংবাদিক। সৈয়দপুর বোর্ড প্রাইমারী স্কুলে তার হাতে খড়ি। এর পর কিছুদিন পড়াশুনা করেন লালমোহন মাদ্রাসায়। ১৯৫১ সালে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে ৫২’তে ভর্তি হন ভোলা টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ৫৮’তে মেট্রিকুলেশন পাশ করে ভর্তি হন বরিশাল বিএম কলেজে। সেখান থেকে ১৯৬০ সালে বিএ পাশ করেন গুণি এই সাংবাদিক। লেখাপড়া শেষে কর্মজীবনে পা দিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে ভোলায় ওয়ার্কস প্রোগ্রাম এর সাব এ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন। সেখানে এক বছর সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শৈশব কিংবা পড়াশুনা কিংবা চাকুরি জীবনে কখনো ভাবেননি সাংবাদিকতা করবেন। শখের বসেই জড়িয়ে পড়লেন সাংবাদিতা পেশায়। সে পেশাকেই আপন পেশা ভেবে এখনো করছেন সাংবাদিকতা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। স্ত্রী মোসাম্মৎ সুরাইয়া বেগম গৃহিনী। তার ২ ছেলে এবং ২ মেয়ে রয়েছে। তারা সবাই সরকারী চাকুরিজীবী। কি সাংবাদিকতা জীবন কি ব্যক্তি জীবন উভয়েই সুখী এই মানুষটি সম্প্রতি ভোলার সংবাদ এর কিছু সাবলীল প্রশ্নের জবাব দেন। নিন্মে তা তুলে ধরা হলো।

ভোলার সংবাদঃ-

কেমন আছেন?

মো. আবু তাহেরঃ-

আল-হামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ?

ভোলার সংবাদঃ-

আপনার প্রথম সাংবাদিকতার শুরু কিভাবে ?

মো. আবু তাহেরঃ-

এমন প্রশ্নের জবাবে মুচকি হেসে প্রবীন এই সাংবাদিক বলেন, প্রথম সাংবাদিকতার কথা এখনো মনে আছে আমার। ১৯৬৫ সালের জুন মাসের কথা। আমি সাবেক এমপি মরহুম মোশারেফ হোসেনের সাথে ঢাকার নাখাল পাড়া এমপি হোস্টেলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ন্যাপ নেতা সৈয়দ আশরাফ এমপি হোস্টেলে আসলেন এমপি মোশারেফ হোসেনের সাথে দেখা করতে। তার হাতে ছিলো দৈনিক সংবাদ পত্রিকার একটি কপি। তিনি আমাকে দেখে বললেন তোমাদের ভোলায় পত্রিকার কোন সাংবাদিক নেই। সাংবাদিকতা করবে। আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। এরপর সৈয়দ আশরাফ সাহেব আমাকে দৈনিক সংবাদ অফিসে নিয়ে গেলেন। তখন দৈনিক সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন শহিদুল্লাহ কায়ছার। সৈয়দ আশরাফ সাহেব আমাকে তার রুমে নিয়ে গেলেন এবং পরিচয় করিয়ে দিলেন। নির্বাহী সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়ছার আমাকে বললেন ভোলা থেকে আমাদের পত্রিকায় সংবাদ আর ছবি পাঠাতে পারবেন। আমি বললাম জি পারবো। তারপর তিনি আমাকে ২টা প্যাড ও ১০ খানা খাম দিলেন।

ভোলার সংবাদঃ-

প্রথম লেখা রিপোর্টের শিরোনাম কি ছিল?

মো. আবু তাহেরঃ-
রাতে এমপি হোস্টেলে এসে সংবাদ লেখায় মনোনিবেশ করলাম। কি লিখবো তা ভাবতেই কয়েক ঘণ্টা কেটে গেল এরপর “ছোট হয়ে আসছে ভোলা” শিরোনামে একটি রিপোর্ট লিখলাম। পরদিন সকালে দৈনিক সংবাদ অফিসে গিয়ে নির্বাহী সম্পাদকের কাছে লেখাটা জমা দিলাম। এরপরদিন তা ছাপা হলো পত্রিকায়। খবরের কাগজটি সংগ্রহ করে এমপি হোস্টেলে নিয়ে মোশারেফ হোসেন শাহজাহানকে লেখাটা দেখালাম। তিনি আমার লেখা পত্রিকায় দেখে খুব উচ্ছাসিত হলেন।

ভোলার সংবাদঃ-

ভোলায় কিভাবে সাংবাদিকতা শুরু করলেন ?

মো. আবু তাহেরঃ-

চলে আসলাম ভোলায়। ভোলায় এসে রিপোর্ট তৈরী করা শুরু করলাম। তখন রিপোর্ট পাঠানোর এক মাত্র মাধ্যম ছিলো ডাক যোগাযোগ। তখন যা কষ্ট করেছি এখনকার প্রজন্মের কাছে তা এখন গল্পের মত শোনাবে। মাত্র ২ পয়সা লাইনেজ সম্মানিতে প্রায় ৫ বছর কাজ করেছি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায়। এরপর কাজ করেছি দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায়। “তাবিজই আমাদের একমাত্র ভরসা” শিরোনামে রিপোর্ট পাঠিয়েছি দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায়। যা ছাপা হলো পত্রিকায়।

ভোলার সংবাদঃ-

কোন কোন গণ মাধ্যমে কাজ করেছেন?

মো. আবু তাহেরঃ-
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকা দৈনিক বাংলা পত্রিকায় পরিনত হয়। ১৯৯৭ সালে দৈনিক বাংলা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ভোলা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলাম। যোগদেন দৈনিক জনকন্ঠে। ১৯৮৪ সালে যোগদেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিনি ছিলেন নিয়োগ পাওয়া ২য় জেলা প্রতিনিধি। মো. আবু তাহের বলেন, আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা হওয়ার কারনে। তখন মাত্র ৭০টাকা মাসিক সম্মানিতে প্রথম কাজ শুরু করি। মাঝখানে সরকার পরিবর্তন হওয়ার কারনে কয়েক বছর কাজের বাইরে ছিলাম এবং বর্তমানেও সফলতার সাথে কাজ করছি।

ভোলার সংবাদঃ-

কত সালে ভোলা প্রেস ক্লাব গঠন করেছেন ?

মো.আবু তাহেরঃ-
১৯৬৬ সালের ১৫ জুন মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানকে সভাপতি ও আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রেস ক্লাবের কমিটি গঠন করি। তখন ভোলা প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয় ছিলো মহাজন পট্টি এলাকায়।

ভোলার সংবাদঃ-
৭০ এর ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে কি দেখলেন ?

মো. আবু তাহেরঃ-
এমন প্রশ্ন করতেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন সাংবাদিক আবু তাহের। এরপর আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বললেন তখন আমি ভোলা সদরেই ছিলাম। জলোচ্ছ্বাসের দিন সন্ধ্যা বেলা থেকেই আকাশ ভাড়ি হয়ে উঠে। মৃদু বাতাসও বইতে থাকে। মধ্যরাতে প্রচ- ঝড় বইতে শুরু করে। এরই মধ্যে যে তা-ব লীলা হয়ে গেছে তা সকাল বেলায় না দেখলে হয়ত বিশ্বাস করতাম না। রাস্তায় পানি উঠে গেছিলো। আমি ঝড়ের ভয়াবহতা দেখতে রতনপুর গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম শত শত লাশ পড়ে আছে। আমি এক গর্তে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন নারী পুরুষ ও শিশুকে মাটি চাপা দিতে দেখেছি। এরপর আমি সে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের খরব সংগ্রহ করে ভোলার ওয়ারলেছ থেকে ঢাকার মগবাজারের ওয়ারলেসে মেসেজ পাঠাই এবং পত্রিকা অফিসকে তা সরবরাহ করতে বলি। এভাবে এই ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের খরব দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে সারা বিশ্ববাসী জানতে পারে।

ভোলার সংবাদঃ-
ভয়াবহ এই তা-ব লীলার এক বছর পরইতো শুরু হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। আমরা জানি আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ৭১’র সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্মৃতি সম্পর্কে কিছু বলেন ?

মো. আবু তাহেরঃ-

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে মো. আবু তাহের বলেন, ২৬ মার্চ কালো রাতে আমি ঢাকায় ছিলাম। নবাবপুরের একটি হোটেলে ছিলেন তিনি। রাত ১১টায় হঠাৎ গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভাঙগে আমার। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। মাথা নিতু করে রুমের ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম। ভোর রাত পর্যন্ত চলে গোলাগুলির শব্দ। ফজরের আযান হলে নামায পড়ে বাইরে বেড়িয়ে দেখি তছনছ হয়ে আছে নবাবপুর রোড। দুপুর ১টার দিকে একটি ট্যাংক আসলো নবাবপুর রোডে পুড়িয়ে দেয়া হলো নবাবপুরে অবস্থিত বস্তিটি। তাও দেখলাম নিজ চোখে। ২৬ মার্চ ঢাকায় কারফিউ জারী থাকার কারনে ভোলায় আসতে পারলাম না। রাত ১০টার দিকে দেখলাম দাউ দাউ করে জ্বলতেছে রাজধানী ঢাকা। ২৭ মার্চ ভোলা আসার উদ্দেশ্যে হোটেল থেকে বের হলাম। কোন যানবাহন তো নেই তাই হেটেই সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথিমধ্যে দেখা মিললো পাকিস্থানী হায়নাদের। তাদের হাতে থাকা রাইফেল দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। পাশেই ছিল একটি গলি সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। তারা চলে যাবার পর আবার হাটতে শুরু করলাম সদরঘাটের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে দেখি লাশ আর লাশ। ঘাটে কোন লঞ্চ তো দূরের কথা একটি নৌকাও ছিলোনা। এক লোক জানালো বাদামতলী ঘাটে নৌকা আছে। সেখানে গিয়ে নৌকা দিয়ে নদী পার হলাম। ভোলার কোন লঞ্চ পেলাম না। মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা একটি স্টিমারে করে মুন্সিগঞ্জ পৌঁছালাম। সেখানে আশ্রয় নিলাম পত্রিকার এক বন্ধুর বাসায়। এরপর দিন মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা স্টিমারে ফরিদপুর আসি। ফরিদপুরের ডামুড্যা থেকে নৌকায় করে বরিশাল এসে পৌঁছালাম। বরিশাল এসে যখন পৌঁছালাম তখন ঘাটে দেখি ভোলা আসার মত কোন লঞ্চ নেই। অপেক্ষা করতে থাকি লঞ্চের জন্য। ভোলায় এসে পৌঁছালাম ৩০ মার্চ। সাথে বরিশাল থেকে নিয়ে আসলাম অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এসব স্মৃতি তুলে ধরতেই হঠাৎ থমকে গেলেন এই মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক। কিছুক্ষণ কথা বলা বন্ধ রাখলেন। সেসময় তার চোখ জ্বল জ্বল করতে দেখাম। তারপর দু চোখ বেয়ে পড়তে লাগলো অশ্রু।

---

ভোলার সংবাদঃ-
যুদ্ধের ট্রেনিং কোথায় নিয়েছেন ?

মো. আবু তাহেরঃ-
যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছি ভোলা বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে, আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে এবং টাউন স্কুলের মাঠে। চাঁন মিয়া নামে এক আনসার কমান্ডার আমাদেরকে প্রথমে লাঠি দিয়ে ট্রেনিং শিখান। আমরা ২৫ থকে ৩০ জন যুদ্ধের ট্রেনিং নেই।

ভোলার সংবাদঃ-

সম্মূখ যুদ্ধে অংশ নিলেন কিভাবে ?

মো. আবু তাহেরঃ-
সম্মূখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছি দৌলতখানে। খবর পেলাম পাক বাহিনী নৌকায় করে ভোলার দিকে যাবে। আমরা ৩০/৩২ জনের মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেই নদীর পাড়ে খালের কাছে। পাক বাহিনীর নৌকা আমাদের কাছাকাছি পৌঁছালে আমরা গুলি করা শুরু করি। পাকিস্তানিরাও আমাদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। আমরা থেমে থেমে গুলি করি। কিন্তু পাকিস্তানী সৈন্যরা এক নাগারে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এক সময় তাদের গোলা বারুদ শেষ হয়ে যায়। পরে আমরা ১৩জন পাকসেনা ও ১৩জন রাজাকারকে বন্দি করে ভোলায় নিয়ে আসি। এভাবেই যুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরেন ভোলার সংবাদের কাছে।

ভোলার সংবাদঃ-

যুদ্ধের পর কিভাবে আবার সাংবাদিকতা শুরু করলেন ?

মো. আবু তাহেরঃ-
১০ ডিসেম্বর ভোলা পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। যুদ্ধের পর স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে সাংবাদিকতা শুরু করি। দৈনিক পাকিস্তান এর নাম পরিবর্তন হয়ে দৈনিক বাংলায় পরিনত হয়। এরপর যোগ দেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে।

ভোলার সংবাদঃ-
কোন চাকুরিতে যোগ দিয়েছেন কি?

মো. আবু তাহেরঃ-
চাকুরির অফার পেয়েছি। কিন্তু সাংবাদিকতা ছাড়তে পারিনি বলে চাকরি আর করা হয় নি। ১৯৯২ সালে ভোলা থেকে প্রকাশ করি সাপ্তাহিক দ্বীপবাণী। সেই থেকে আজও এই পত্রিকা নিয়েই আছি।

ভোলার সংবাদঃ-
সাংবাদিকতা করতে গিয়ে মজার কোন ঘটনা মনে আছে কি ?

মো. আবু তাহেরঃ-
সাংবাদিকতা করতে গিয়ে অনেক স্মৃতিময় ঘটনার সম্মুক্ষিণ হয়েছি। ১৯৭৩ সালে দেউলায় গিয়ে দেখলাম মানুষ মরা গরুর মাংশ খাচ্ছে। এই সংবাদ ও ছবি সংগ্রহ করে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় ছাপা হলে তৎকালীন মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাদ এক লঞ্চ ভর্তি রুটি নিয়ে দেউলায় আসেন এবং ক্ষদার্থদের মাঝে বিতরণ করেন। এছাড়া ১৯৮৬ সালে মনপুরা ও উড়ির চরে প্রচ- ঝড়ে ল- ভ- হয়। নৌবাহিনীর জাহাজে করে দেখতে গেলাম সেখানে। তৎকালীন শাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ তখন মনপুরায় আসেন। সেখানকার সংবাদ ও ছবি তুলে প্রথম হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় চলে গেলাম। সে খবরও ছাপা হলো পত্রিকায়। যার স্মৃতি আজও মনে নাড়া দেয়।
---

 

ভোলার সংবাদঃ-
যদি বলি সাংবাদিকতা করে কি পেলেন? তাহলে কি বলবেন ?

মো. আবু তাহেরঃ-

সাংবাদিকতা করে সাংবাদিক হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের ৪০বছর পূর্তিতে প্রেস ইনস্টিটিউট এর পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হিসেবে সম্মাননা স্মারক পেয়েছি। এবছর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হিসেবে ভোলা জেলা পুলিশ এর পক্ষ থেকে সম্মাননা পেয়েছি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংঘঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক পেয়েছি।

ভোলার সংবাদঃ-

ভোলা দ্বীপের প্রথম সাংবাদিক ও প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আপনার অনুভূতি কি?

মো. আবু তাহেরঃ-
এমন অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না। আমিই ভোলা দ্বীপে প্রথম সাংবাদিকতা শুরু করি। এরপর প্রেস ক্লাব ঘটনের উদ্যোগ নেই। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশনেই। এসব কাজের জন্য আমি মানুষের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা পেয়েছি। এটুকুই আমার জন্য অনেক।

ভোলার সংবাদঃ-

আপনার শখ বা অবসরে কি করেন ?

মো.আবু তাহেরঃ-
বাংলাদেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে আমি সরকারী বেসরকারী কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করি। আমার শখ লেখা লেখি করা। অবসরে পত্রিকা আর বই পড়ে কাটাই।

ভোলার সংবাদঃ-

নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে আপনার কি চাওয়া ?

মো. আবু তাহেরঃ-
সাংবাদিকতা এক মহান পেশা। সাংবাদিকদের কালো কে কালো আর সাদাকে সাদাই বলা উচিত। সায়বাদিকতার মান এখন অনেক বেড়েছে। আমরা সেসময় অনেক কষ্ট করেছি যা এখনার প্রজন্মের করা লাগছে না। তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে। সাংবাদিকতা এখন আরো সহজ। নতুনদের উদ্দেশ্যে বলবো সৎ ও নিষ্ঠার সাথে সাংবাদিকতা করুন।

ভোলার সংবাদঃ-

বর্তমান অনলাইন গণমাধ্যম সম্পর্কে কি বলবেন ?

মো. আবু তাহেরঃ-
এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়নের কথা সবার আগে তুলে ধরতে অনলাইনের বিকল্প নেই। ভোলার সংবাদ ডট কম আমিও পড়ি। অনেক খবরই সবার আগে জানতে পারি। আমি তাদের সাফল্য কামনা করি।

ভোলার সংবাদঃ-

আল্লাহ যতদিন জীবিত রেখেছেন সাংবাদিকতা করেই যাবেন ?

মো. আবু তাহেরঃ-

আমি সাংবাদিক। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মহান এই কাজটি নিষ্ঠা, সততা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমেই করে যাব।

ভোলার সংবাদঃ-

আমরা আপনার দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করি। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য।

মো. আবু তাহেরঃ-
আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।





জেলার খবর এর আরও খবর

উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায়
ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত
ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময়
চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস
ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী
ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ!
ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী
ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ভোলার তানভীর শিকদার, বিভিন্ন মহলের অভিনন্দন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ভোলার তানভীর শিকদার, বিভিন্ন মহলের অভিনন্দন

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।