রবিবার ● ২ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ
১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ
ঢাকা : মা ইলিশ সংরক্ষণের অংশ হিসেবে আগামী ১২অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান প্রজনন মৌসুমে মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। রোববার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত সাত হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাসহ সারা দেশে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার আইন জারি করেছে। এই সময়ে ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি,পরিবহন, মজুদ বা বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, মাছঘাট, মৎস্য আড়ৎ, হাট-বাজার,চেইনশপে নিষেধাজ্ঞার সময়ে অভিযান চালানো হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, নৌ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং মৎস্য অধিদপ্তর এ অভিযানে অংশ নেবে।৫-৭ বছর আগেও মানুষ ইলিশ খেতে পারত না। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কঠিন পদক্ষেপের ফলে আজ ইলিশ মাছের ছড়াছড়ি। ১৫-২০ বছরের মধ্যে এবার অলি-গলিতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, গবীর মানুষও ইলিশ কিনে খেতে পারছে,বলেন ছায়েদুল। চান্দ্রমাসের ভিত্তিতে প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরে গত বছর আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে তিন ও পরের ১১ দিনসহ মোট ১৫ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল।এবার আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে চার ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে।মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় পার হওয়ার পরও মা ইলিশ সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার সময় ধরা পড়ে। এজন্য গত বছর ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় ১১ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হয়। এরপরও মা ইলিশ ধরা পড়ায় এবার এই সময় ২২ দিন করা হয়েছে। সভার শুরুতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক সাংবাদিকদের জানান, প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানর আওতায় ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাসহ সারাদেশ ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার আইন জারি করেছে। মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী হতে হাইতকান্দি পয়েন্ট, তজুমুদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দিন হতে পশ্চিম সৈয়দ আওলিয়া পয়েন্ট, কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট এবং কুতুবদিয়া হতে গন্ডামারা পয়েন্ট প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র।মন্ত্রী বলেন, ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রসহ প্রধান প্রজনন মৌসুমের ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। প্রধান প্রজনন মৌসুমে চিহ্নিত প্রজনন ক্ষেত্রে ডিমওয়ালা ইলিশসহ সব প্রকার মাছ ধরা বন্ধের মাধ্যমে ইলিশ রক্ষায় গণসচেতনতা সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য।প্রজনন ক্ষেত্র ছাড়াও ২৭ জেলায় মাছ ধরা বন্ধের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে বলে জানান মন্ত্রী। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, খুলনা, কুষ্টিয়া এবং রাজশাহী জেলার সব নদীতে ইলিশ ধরা বদ্ধ থাকবে। একইসঙ্গে সমুদ্র উপকূল এবং মোহনায় ইলিশ ধরা যাবে না।প্রজনন মৌসুমে প্রজনন ক্ষেত্রের পাশাপাশি দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ এবং দেশের মাছঘাট, মৎস্য আড়ৎ, হাটবাজার, চেইনশপে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হবে।প্রজনন মৌসুমে জেলেদের পুর্নবাসনের জন্য দুযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার মেট্রিকটন চালের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। চলতি বছরে গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি ইলিশ বাজারে পাওয়া যাওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় বৃদ্ধি এবং বঙ্গোপসাগরে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার কারণে ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন অলিগলিতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।সরকারের কিছু জরুরি ও কঠিন পদক্ষেপের ফলে ইলিশের ছড়াছড়ি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগে নিষিদ্ধ ছিল ১১ দিন। পরে বাড়িয়ে ১৫ দিন এবং বর্তমানে তা ২২ দিন করা হয়েছে। অন্যদের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খান ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।