রবিবার ● ২ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » মনপুরার মেঘনায় আরো ১ জেলের লাশ, অপহৃত ৫ উদ্ধার, গ্রেফতার-১, শোকের মাতম
মনপুরার মেঘনায় আরো ১ জেলের লাশ, অপহৃত ৫ উদ্ধার, গ্রেফতার-১, শোকের মাতম
মো.ছালাউদ্দিন, মনপুরা প্রতিনিধি: ভোলার মনপুরার পূর্ব পাশের মেঘনায় জলদস্যূদের গুলিতে ১ জেলে নিহত হওয়ার ১ দিন পর আরো ১ জেলের মরদেহ উদ্ধার কেেছ স্থানীয়রা। উদ্ধার হওয়া জেলে আগের দিনের জলদস্যূদের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহত দুই জেলে পরিবারে বইছে শোকের মাতম। অপরদিকে মনপুরার মেঘনা থেকে জলদস্যু মোল্লা বাহিনী কর্তৃক অপহৃত ৫ মাঝি মুক্তিপনের ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে জলদস্যুরা।
মনপুরার জংলার খাল সংলগ্ন পূর্ব পাশের মেঘনা থেকে রবিবার দুপুর ৩ টায় দিকে আরও এক জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে লাশটির এখনও পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে লাশটি তজুমুদ্দিন থানার নিখোঁজ জেলে শফিকুল ইসলামের। এদিকে ভোলা ও হাতিয়া থানার ১২টি ডাকাতি মামলার আসামী জহুরুল ইসলাম নামে এক জলদস্যুকে স্থানীয় জেলেরা শনিবার রাত ১২টার দিকে জংলার খাল সংলগ্ন মেঘনায় ট্রলার থেকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটক জলদস্যু বর্তমানে মনপুরা থানা হেফাজতে রয়েছে।
ঘটনা ও স্থানীয় জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, ১লা অক্টোবর মিয়াজমিরশাহ সংলগ্ন মেঘনায় ইলিশ মাছ ধরা অবস্থায় জলদস্যুদের হামলায় তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে মাছ ধরতে আসা জেলেরা জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়। ঐদিন একই ঘটনায় মনপুরার কামাল মাঝি জলদস্যুদের ছোড়া গুলিতে নিহত হয়।
উপজেলার চর ফৈজুউদ্দিন গ্রামে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নিহত জেলে কামাল মাঝির স্ত্রী জান্নাত বেগম স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে চার সন্তান নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন নিহত কামল মাঝির দুই ভাই মহিউদ্দিন, হোসেন ও তার বোন জামাই সাইফুল। নিহত কামাল মাঝিসহ ৩ জেলে পরিবারের সদস্যদের কান্না আর আহাজারিতে এলাকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
এব্যাপারে তজুমুদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম শাহীন মন্ডল জানান, আমরা মনপুরার মেঘনা থেকে লাশটি উদ্ধার করে থানায় এনেছি। লাশটি তজুমুদ্দিন মহাজান কান্দির জেলে শফিকুল ইসলাম। লাশটি পরিবারবর্গ নিয়ে যাওয়ার জন্য চাচ্ছেন।
অপরদিকে মনপুরার মেঘনা থেকে জলদস্যু মোল্লা বাহিনী কর্তৃক অপহৃত রহমান মাঝি, ইউনুছ মাঝি, নুরামিন মাঝি, ইউসুফ মাঝি ও রুহুল আমিন মাঝিকে মুক্তিপনের ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে জলদস্যুরা। জলদস্যুরা ৫ মাঝিকে শনিবার সকাল ৬ টায় মনপুরার মিয়াজমিরশাহ সংলগ্ন চর থেকে মাছ ধরা অবস্থায় অপহরণ করে উড়ির চরে নিয়ে যায়। পরে অপহৃত মাঝিদের থেকে মুক্তিপন আদায় করে পরের দিন ভোর রাতে বদনার চরে রেখে যায়। অপহরনের ২০ ঘন্টা পর অপহৃত মাঝি উদ্ধার হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
উদ্ধার হওয়া জেলে রহমান মাঝি জানান, ইলিশ ধরা অবস্থায় হাতিয়ার জলদস্যু মোল্লা বাহিনীর রুবেল ও বাবুলের নের্তৃত্বে জেলেদের উপর হামলা চালিয়ে ৫টি ট্রলার থেকে ৫ মাঝিকে ধরে নিয়ে যায়। উড়ির চরে নামক স্থানে জিম্মি করে মারধর করেন। মুক্তিপনের টাকা দিতে দেরী হওয়ায় তাদেরকে বেধড়ক মারধর করেন। তারা বর্তমানে মনপুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা রয়েছেন। আমিসহ ৩জন মাঝি ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে জলদস্যুদের দেওয়া হলে তারা আমাদের ছেড়ে দেন। পরে জংলার খাল থেকে একটি ট্রলার গিয়ে বদনার চর থেকে আমাদের নিয়ে আসেন।
অপহৃত জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন আমাদের কোন সহযোগীতা করছেন না। আমরা জলদস্যুদের বিষয় জানালে তারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্ট করেন। হাতিয়া জোনের কোস্টগার্ড মোটেও সহযোগীতা করছে না। তাদের নাকের ডগায় প্রায় প্রতিদিন জলদস্যুরা জেলেদের উপর হামলা চালায়। জেলেদের আটক করে মুক্তিপন আদায় করে। জলদস্যুদের গুলিতে জেলেরা প্রান হারায়। এখন জলদস্যুদের ভয়ে জেলেরা মেঘনায় মাছ ধরতে সাহস পাচ্ছে না।
হাতিয়া জোনের কোস্টগার্ড প্রধান লেঃ কমান্ডার ওমর ফারুক এ জানান, আমারা ঘটনা শুনার পর অপহৃত মাঝিদের উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করি। আমাদের উদ্ধার অভিযানের কথা জলদস্যুরা জানতে পেরে জলদস্যুরা এলাকায় ছেড়ে অন্য এলাকায় আত্মগোপন করেন। তবে মেঘনায় আমাদের জলদস্যুদের ধরার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এফএইচ