বুধবার ● ২৭ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » স্বরূপকাঠিতে পেয়ারার দাম কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষি
স্বরূপকাঠিতে পেয়ারার দাম কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষি
পিরোজপুর : বাংলার আপেল নামে খ্যাত পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে উৎপাদিত পেয়ারা। সংরক্ষণের অভাব ও দাম কম হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন চাষিরা। প্রায় দু’শ বছর ধরে পেয়ারার চাষাবাদ শুরু হলেও গত ৬০/৭০ বছর থেকে চলছে পেয়ারার বাণিজ্যিক আবাদ। পেয়ারা বাগানে এনথ্রাকনোস নামক (স্থানীয় ভাষায় ছিটপড়া) রোগের প্রাদুর্ভাব থাকলেও সিডরের পর থেকে প্রাকৃতিক কারণে ঐ রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যায়। কিন্তু গত বছর থেকে পুনরায় পেয়ারায় দেখা দিয়েছে ছিটপড়া রোগ। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ থাকলে মৌসুমী এ ফল পেয়ারা বছর জুড়ে ভোক্তাদের চাহিদা মিটিয়ে এবং বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেত। পাশাপাশি চাষিরাও আর্থিকভাবে লাভবান হত। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদ্যোক্তার অভাবে হিমাগারসহ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে না উঠায় এবং উৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা পেয়ারা চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে। উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, আদমকাঠী, ধলহার, কঠুরাকাঠি, আন্দাকুল, জিন্দাকাঠি, ব্রাহ্মণকাঠি, আতা, জামুয়া, মাদ্রা ঝালকাঠি, শশীদ, পূর্ব জলাবাড়ি, আদাবাড়ি ও জৌসারসহ বিভিন্ন গ্রামের ৬৫২ হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষাবাদ হয়। আষাঢ, শ্রাবণ ও ভাদ্র এ তিন মাস পেয়ারার মৌসুম। তবে শ্রাবণ মাস জুড়ে পেয়ারার ভরা মৌসুম। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আড়াই হাজারের মত পেয়ারা বাগান রয়েছে এবং প্রায় দু� হাজার চাষি এ পেয়ারার চাষাবাদ করে আসছে। আর পেয়ারার চাষাবাদ ও বিপণন ব্যবস্থার সাথে প্রায় ৬/৭ হাজার শ্রমজীবী মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ব্রাহ্মণকাঠি গ্রামের চাষি বিশ্বজিত চৌধুরী জানান, এ বছর পেয়ারায় পুনরায় ছিটপড়া রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে পেয়ারা খেতে স্বাদহীন হয়। পেয়ারা বাগান পরিচর্যায় শ্রম মজুরিসহ উত্পাদন ব্যয় বেশি। কিন্তু ফলন ও তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। তবুও পূর্বপুরুষদের এ পেশাকে আগলে রেখে যুগ যুগ ধরে পেয়ারা চাষাবাদ করে আসছে তারা।কুড়িয়ানার পেয়ারা চাষি দীলিপ সিকদার জানান, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে বড় সাইজের পেয়ারা প্রসেসিং করে বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। উপজেলার কুড়িয়ানা, আটঘর, আদমকাঠি, ধলহার, জিন্দাকাঠিসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই পেয়ারার ভাসমান হাট বসে। বর্তমানে পেয়ারা পাইকারিভাবে মণ প্রতি ২০০/২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হেক্টর প্রতি ৭/৮ মে. টন উত্পাদিত পেয়ারা থেকে বছরে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা আয় হয়। পেয়ারার এ মৌসুমে ঢাকা, চাঁদপুর, কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের এক শ্রেণির পাইকাররা এখান থেকে সরাসরি পেয়ারা ক্রয় করে নিয়ে যায়। অপরপক্ষে স্থানীয় পর্যায়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরাও প্রতিদিন শত শত মণ পেয়ারা এখান থেকে লঞ্চ, ট্রলার ও ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান দেয়। ছিটপড়া রোগের ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রিফাত সিকদার জানান, কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদেরকে নোইন নামক ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সংরক্ষণসহ কৃষি ভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হতো। দ্রুত পচনশীল এ পেয়ারা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ থাকলে বছর জুড়ে ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে পারত এবং পেয়ারা থেকে উত্পাদিত জ্যাম- জেলি দেশি বাজারে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যেত।