বৃহস্পতিবার ● ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » ৬ মাসে ২৭ খুন! দেশে বাবা-মা’র হাতে সন্তান খুনের ঘটনা বেড়েই চলছে
৬ মাসে ২৭ খুন! দেশে বাবা-মা’র হাতে সন্তান খুনের ঘটনা বেড়েই চলছে
দাম্পত্য কলহ, যৌতুক, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দেশে শুধুমাত্র বাবা-মায়ের হাতেই হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে ২৭ সন্তান। এদের প্রায় সকলেই শিশু। এ সংখ্যা গত বছরের ১২ মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ ছয় মাসে মায়ের হাতে ১৩টি শিশু ও বাবার হাতে ১৪টি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। আর হত্যাকান্ডের শিকার শিশুগুলোর মধ্যে ১৪টি ছেলেশিশু ও ১৩টি মেয়েশিশু। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এই তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি। সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের হিসাবে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাবা-মায়ের হাতে খুন হয়েছে ১৫টি শিশু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে দেশে প্রায় প্রতিদিনই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। মা অথবা বাবার হাতেই সন্তান হত্যার ঘটনা ঘটছে। আবার সন্তানের হাতেও খুন হচ্ছে মা-বাবা। স্বামী স্ত্রীকে কিংবা স্ত্রী স্বামীকে খুন করছেন। এছাড়া ভাইয়ের হাতে ভাই, মামা, মামি, চাচা, সৎ মা-বাবা ও পরিবারের আপন সদস্যদের হাতেও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, দেশে মা-বাবার হাতে সন্তান খুনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। সংবাদমাধ্যমে প্রায় এ ধরনের হত্যাকান্ডের সংবাদ উঠে আসছে। তবে প্রকৃত চিত্র এর চেয়েও ভয়াবহ। পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, নারী নির্যাতন, যৌতুক, অবাধ পর্নোগ্রাফি, মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন কারণে বাবা-মা তাদের সন্তানদের হত্যা করতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, এ বছরের ২০ জানুয়ারি মায়ের হাতে এক মেয়েশিশু খুন হয়েছে। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি মা এক মেয়েকে ও ২৬ ফেব্রুয়ারি আরেক মা তার মেয়েশিশুকে হত্যা করেছেন। ১৫ মার্চ এক মায়ের হাতে দুই ছেলে-মেয়ে হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এরপর ২২ মার্চ আরেক মায়ের হাতে দুই মেয়েশিশু ও ৩০ মার্চ মায়ের হাতে আরো এক ছেলেশিশু হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এরপর ১২ এপ্রিল বাবার হাতে এক মেয়েশিশু ও ১৩ এপ্রিল আরেক বাবার হাতে ছেলেশিশু খুন হয়। ৮ মে বাবার হাতে ছেলে, ৯ মে মায়ের হাতে দুই ছেলে-মেয়ে ও ১৫ মে এক বাবা তার তিন মেয়ে শিশুকে জবাই করেন। ১৬ জুন মায়ের হাতে এক ছেলেশিশু, ২২ জুন বাবার হাতে এক ছেলেশিশু, ১১ জুলাই বাবার হাতে ছেলেশিশু, ২১ জুলাই বাবার হাতে দুই ছেলে-মেয়ে, ২৬ জুলাই বাবার হাতে ছেলে, ২৭ জুলাই বাবার হাতে ছেলে ও ৩১ জুলাই বাবার হাতে আরেক ছেলেশিশু খুন হয়। এরপর গত ১ আগস্ট এক মায়ের হাতে দুই মেয়েশিশু খুন হয়। এরপর ৪ আগস্ট মা ও বাবার হাতে এক মেয়েশিশু হত্যার শিকার হয়। এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে মা তার শিশুদের হত্যা করে নিজেও আত্বহত্যা করেছেন বা করার চেষ্টা করেছেন।
পুলিশের পরিসংখ্যান
পুলিশ সদর দফতরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৩টি খুনের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া প্রতিদিন আতœহত্যা করছেন আরো ২৯ জন। আর গড়ে প্রতিদিন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রায় ৫৭ জন নারী। পুলিশের হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি নারী, শিশু ও পুরুষ। এর মধ্যে পারিবারিক সহিংসতায় খুন হয়েছেন ৪০ শতাংশ।
বেসরকারি পরিসংখ্যান
শুধু নারীদের ওপর সহিংসতা নিয়ে আইন ও শালিস কেন্দ্রের এক হিসাবে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছয় মাসে পারিবারিক সহিংসতায় প্রাণ গেছে ২৩৯ জন নারীর। এর মধ্যে স্বামীর নির্যাতনে খুন হয়েছেন ১১২ জন গৃহবধূ। স্বামীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হয়ে আরো ২৬ গৃহবধূ প্রাণ হারান। এছাড়া এ সময়ে নিকট আত্বীয়রা নির্যাতন চালিয়ে ১০ জন নারীকে হত্যা করেছেন। ওই সময়ে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন চালিয়ে ৯১ গৃহবধূকে হত্যা করা হয় বলে এই মানবাধিকার ও আইন সহায়তা সংস্থাটির জরিপে উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের শিশু অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশে শিশুর ওপর সহিংসতার বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে ৬ আগস্ট বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জেলায় পৃথক ঘটনায় তিন শিশুকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। এটি শিশু অধিকারের চরম লঙ্ঘন। দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে ও সহিংসতা বন্ধে বাংলাদেশ সরকার সবকিছু করবে বলে বিবৃতিতে প্রত্যাশা করা হয়।