শিরোনাম:
●   উদ্ভাস-উন্মেষ-উত্তরণ এখন দ্বীপ জেলা ভোলায় ●   ভোলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থী বশীর উল্লাহ সভাপতি, সম্পাদক মাহাবুবুল হক লিটু নির্বাচিত ●   ভোলা জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় ●   চরফ্যাশনে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়লো চট্টগ্রামগামী বাস ●   ডয়েসে ভ্যালী ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনিস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে প্রিন্ট পত্রিকার সম্পাদকদের কর্মশালা সম্পন্ন ●   ভোলায় চারটি সহ সারাদেশে ১৫০ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ●   ভোলায় ৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণ ফাঁদ! ●   ভোলায় জমি দখলের খবর পেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেলেন প্রবাসী ●   ভোলার নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ●   আজ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মোঃ হাবিবউল্লাহ’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী
ভোলা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার সংবাদ
বৃহস্পতিবার ● ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জানা অজানা » ভোলার স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু
প্রথম পাতা » জানা অজানা » ভোলার স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু
৫৯৪ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ভোলার স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু

ভোলার স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু

মাহাবুবুল আলম নীরব মোল্লাবঙ্গবন্ধুর এই নামটির সাথে ভোলার মানুষের রয়েছে অন্য রকম এক আবেগ আনন্দ। কারন এই নামটি যিনি জনারন্যে নিয়ে এসেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি উনশত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক, ভোলার মানুষের আপনজন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়লে আহমেদ এমপি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভোলার মানুষের রয়েছে এক স্মরনীয় স্মৃতি। তিনি প্রথম ভোলায় এসছিলেন ১৯৫৩ সালে মাথে ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খানন ভাসানী। ১৯৫৩ সালে ভোলায় এসে তিনি আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটিতে মরহুম সোলাইমান মোল্লা সভাপতি এবং মোখলেস দরবেশকে সাধারন সম্পাদক করা হয়। এর পর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময় শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ এসেছিলেন নির্বাচনী জনসভা করতে। অতপর ১৯৭০ সালে তোফায়েল আহমেদ এর নির্বাচনী জনসভায় তিনি আসলেন এবং ১৯৭০ সালেই ১২ নভেম্বর ভয়াবহ জলোচ্ছাসের পর তিনি ভোলায় এসে কিছুদিন অবস্থান করে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছিলেন ত্রান নিয়ে। সর্বশেষ ১৯৭২ সালে ভোলার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের কাজ উদ্বোধন করার জন্য তিনি আবারো  দ্বীপ জেলা ভোলায় আসেন। শুধু আসেনইনি বরং ভোলার দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে ভোলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ভযাবহ জলোচ্ছাস ঘূর্নীঝড়ে প্রায় ১০লাখ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে শুধু ভোলাতেই মারা যায় প্রায় ৩লাখ মানুষ। মারা যায় হাজার হাজার গবাদিপশু, আর ধ্বংস হয় হাজারো ঘর-বাড়ি। আজও যারা দূর্যোগ কবলিত মানুষ বেঁেচ আছেন, তারা গভীর শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর সে সময়ের কথা স্মরন করেন।

ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তৎকালীন ছাত্র লীগের সাধারন সম্পাদক ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি চারন করতে গিয়ে বলেন, ৭০ এর জানুয়ারীতে বঙ্গবন্ধু নির্বাচন উপলক্ষ্যে ভোলায় আসেন। তখন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্বর্নের তৈরি ছাত্রলীগের মনোগ্রাম সম্বলিত কোর্টপিন আমি তাকে পরিয়ে দেই। এর স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ভোলার ইতিহাসের স্বরনকালের ভয়াবহ ঘূর্নীঝড় এবং জলোচ্ছাসের আঘাতে লন্ড - হয়ে যায় দ্বীপ জেলা ভোলা। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারনায় ওই সময় বাগরেহাট ছিলেন। বন্যা হওয়ার খবর পেয়ে একদিন পরই তিনি একটি ছোট লঞ্চ নিয়ে ভোলায় এসে উপস্থিত হন। ভোলায় এসেই তিনি কালীনাথ রায়ের বাজারে মনপুরা নিবাসী বারাসাত উল্ল্যাহ চৌধুরী ওরফে শাহাজাদা চৌধুরীর বাসায় অবস্থান করেন এবং আওয়ামী লীগের ভোলার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম সোলায়মান মোল্লার বাড়িতেই ছিলো তার খাওয়া-দাওয়াসহ সকল ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু মানুষের ভয়াবহ এবং করুন অবস্থা দেখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সর্বদলীয় একটি রিলিফ কমিটি গঠন করেন। একই সাথে রিলিফ সংগ্রহ করে ভোলার হাবিবুর রহমান তালুকদার এর গোলাম কাদির লঞ্চে করে ভোলা নদীর পাড়ে পাড়ে দূর্গত মানুষদের মাঝে রিলিফ প্রদান করতে করতে ভোলা থেকে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরায় গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলো। সেখানে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শাহাজাদা চৌধুরীকে দেখতে পান। তার পরনে তখন ভদ্র সমাজে যাওয়ার মত কোন পোষাক ছিলো না। তখন বঙ্গবন্ধু গভীর মমতায় শাহাজাদা চৌধুরীকে নিজের ব্যবহৃত পায়জামা পাঞ্জাবী পড়তে দেন। একই সাথে নিজের গায়ে জড়ানো শালটি পর্যন্ত তার গায়ে জড়িয়ে দেন। আজও শাহাজাদা চৌদুরীর একমাত্র ছেলে জ্বালানী খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী যতœ করে নিজের কাছে সংরক্ষন করে রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি। বঙ্গবন্ধুর ছিলো অসাধারন স্মরন শক্তি। তিনি একবার একটু সময়ের জন্য যার সাথেই পরিচিত হতেন, তার নাম-ধাম ভূলতেন না কখনোই। যার প্রমান ভোলার অনেক মানুষ পরবর্তিতে পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ধ্বংস প্রাপ্ত ভোলার মানুষের মাঝে ঘুরে ঘুরে রিলিফ দিলেন এবং পাকিস্তানী শাসকদের অবহেলার চিত্র তুলে ধরলেন দেশ-বিদেশ থেকে আশা সাংবাদিকদের কাছে। পত্রিকায় প্রকাশিত হলোভোলার গাছে গাছে ঝুলন্ত মৃত মানুষের লাশের ছবি সারা পৃথিবী থেকে ছুটে এলো সাংবাদিক এবং সাহায্যকারী বিভিন্ন সংস্থা। অথচ পাকিস্তানীদের ভূরুক্ষেপ নেই। সেই অবহেলার চিত্র বিশ্ববাসী জানতে পারে বিদেশী সাংবাদিকদের মাধ্যমে। বাঙ্গালীদের প্রতি পাকিস্তানী শাসকদের অবহেলার চিত্র এর মাধ্যমেই ফুটে উঠে। বঙ্গবন্ধু প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাবার, কাপড় নিয়ে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হলে সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ভোলায় ছুটে এসে দুর্গত মানুষের পাশে দাড়ায়। বঙ্গবন্ধু ঢাকায় গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে গর্জে উঠেন পাকিস্থানী শামরিক জান্তার অবহেলার বিরুদ্ধে। ভোলায় আসতে বাধ্য হলেন পাকিস্তানী শামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। তখন মানুষ গর্জে উঠে তোফায়েল আহমেদ এর নেতৃত্বে। ভোলার হেলিপোর্ট ঘেরাও করা হয়। সেখানে সেনা বাহিনীর সাথে জনতার সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় আহত হন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফাসহ আরো অনেকে। সমগ্র উপকূল জুড়ে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক সেবা মানুষ বাঁচানোর কাজে, মানুষের আত্ত্বায় পরিনত হন তিনি।

অতপর নির্বাচন বিজয়ঃ

১৯৭০ এর ৭ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ডিসেম্বর প্রাদেশীক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ৩১৩ আসনের মধ্যে ভোলার দুটিসহ ১৬৭ আসনে জয়লাভ করেন। আর প্রাদেশীক পরিষদে ৩শ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসনে জয়লাভ করেন। সতন্ত্র বিজয়ী ৭প্রার্থীও আওয়ামী লীগে যোগদেন। ৭০ এর ভয়াবহ প্রলোয়াংকরী জলোচ্ছাস পাকিস্তানী শাসকদের বাঙ্গালীদের প্রতি নির্মম উদাসিনতা, বাঙ্গালীর ঐক্যবদ্ধতাকে আরো দৃঢ় করে তোলে। যার পথ ধরে বাঙ্গালী এগিয়ে যায়। সাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথে।

প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন শাহিন বলেন, স্বাধীনতার পরও বঙ্গবন্ধু ভোলাকে ভূলে যাননি। ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে দ্বায়িত্ব নেয়ার পর পরই তিনি ভোলায় ছুটে আসেন। দৌলতখানের জিরো পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁেধর কাজ উদ্বোধন করেন। এছাড়া ছুটে যান চর কুকরী-মুকরী। সেখানে গড়ে তোলেন ঝড় আর জলোচ্ছাসের হাত থেকে রক্ষায় আশ্রয় নেয়ার জন্য মাটির কেল্লা। একই সাথে ভোলার চারদিকে দৃষ্টিনন্দন সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে যান। তাই আজও ভোলার মানুষ মাটির কেল্লাকে মুজিব কেল্লা হিসেবে আখ্যায়িত করে। যা বর্তমান কালেও ঝড় জলোচ্ছাসে মানুষ এবং পশুর আশ্রয় স্থল হিসেবে অপরিহার্য বলে প্রমানিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সুদুর প্রশারি পরিকল্পনায় সুন্দর বনের মত ভোলার চার পাশ ঘিরে যে বনভূমি গড়ে উঠেছে, তা ঝড় ঝঞ্জায় ঢাল হয়ে মানুষের জীবন সম্পত্তি রক্ষা করে চলছে।

 

 





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

© 2024 দ্বীপের সাথে ২৪ ঘণ্টা Bholar Sangbad, সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।