বৃহস্পতিবার ● ৬ আগস্ট ২০১৫
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » ভোলায় মামলা তুলে নিতে বাদিকে প্রাণ নাসের হুমকী : শিশুসহ দুইজন আহত
ভোলায় মামলা তুলে নিতে বাদিকে প্রাণ নাসের হুমকী : শিশুসহ দুইজন আহত
স্টাফ রিপোর্টার : ভোলায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার অভিযুক্ত আসামীরা বাদিকে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে হুমকী ও মারধর এবং বাদির সাথে যাদের সম্পর্ক রয়েছে তাদেরকেও মারধর করছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই মামলার জের ধরে গত ২ আগষ্ট বাদির পক্ষের এক নারী ও শিশুকে মারধর করেছে অভিযুক্ত আসামীরা। এতে গুরুত্বর আহত হয় নারী ও শিশুটি। তারা ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা (২৯২/১২) এর দুই নম্বর আসামী আদালতের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে বিদেশ পলায়ন করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ ও মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদি সুলতানা বেগম বিয়ের পূর্বে বিদেশে চাকুরী করার জন্য কুয়েত যান। এ সময় তার বৃদ্ধ মাকে দেখা-শোনার জন্য তার মামতো ভাই মোঃ মোফাজ্জল হোসনকে দায়িত্ব দেন এবং তার একাউন্টে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট দেড় লাখ টাকা পাঠান। মামাতো ভাই মোফাজ্জল ওই টাকার যৎ সামান্য সুলতানার মাকে দিয়ে বাকী টাকা নিজেই আত্মসাত করেন। অতপর সুলতানা বেগম বিদেশে ৫ বছর চাকুরী করে নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৮ ভড়ি স্বর্ণালংকার নিয়ে দেশে ফেরেন। ওই টাকার লোভে মামাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন সুলতানাকে ১৫/১৯/২০০৭ ইং তারিখে ১ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্বামী মোফাজ্জল হোসেন সুলতানার কাছ থেকে জমি ক্রয় করার কথা বলে ৮ ভড়ি স্বর্ণ নিয়ে যায়। সরলমনা সুলতানা বুঝতে পারনে যে তার স্বামী স্বর্ণ বিক্রির টাকা দিয়ে নিজ এবং প্রথম স্ত্রী বিলকিস এর নামে জমি ক্রয় করেন। এর কিছুদিন পর স্বামী তার কাছে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। উপায়ন্তর না দেখে সন্তান ও বৃদ্ধ মার কথা ভেবে সুলতানা স্বামীকে স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে কিস্তির মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা প্রদান করেন। ওই টাকা পাওয়ায় তাদের লোভ আরো বেড়ে যায়। এর কিছু দিন পর স্বামী আরো ১ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। সুলতানা যৌতুকের ওই টাকা দিতে অস্বীকার করায় স্বামী এবং আসামীগণ তার উপর লাঠি দিয়ে নির্যাতন চালায়। এতে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তিনি ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেন। ওই স্বামী ও তার লোকজন বুঝতে পারেন যে সুলতানা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করতে পারে। সেজন্য তারা তাকে হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক বাড়ী নিয়ে যায়।
মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, ওই ঘটনার ৬/৭ মাস পর পূনরায় আবার ১ লাখ টাকা যৌতুক দাবী কওে স্বামী। ওই টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে তার স্বামীর নেতৃত্বে আসামীগণ আবার তার উপর লাঠি-সোটা দিয়ে নির্যাতন চালায়। তাকে মেরে ফেলার জন্য গলায় পারা দেয়। এসময় সুলতানা ও তার সন্তানের ডাক-চিৎকার স্বাক্ষীগণ ছুটে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে ভোলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় ওই টাকা লোভী স্বামী ও তার দল-বল তাকে মামলা না করার জন্য হুমকী দিতে থাকে। তারা বলে মামলা করলে তোকে মেরে ফেলবো। উপায়ন্তর না দেখে সুলতানা বেগম (ফুলরা) তার স্বামী মোঃ মোফাজ্জল হোসেনসহ আসামীগণের বিরুদ্ধে গত ২৪/০৯/২০১২ ইং তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল আদালতে মামলা করে। মামলা নং-২৯২/১২। ওই মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পান এবং বিভিন্ন সময়ে হাজিরা দিতে থাকেন। এর মধ্যেই সু-চতুর স্বামী মোফাজ্জল হোসেন তার প্রথম ঘরের সন্তান ২নং আসামী বিল্লাল হোসেনকে আদালতের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। মামলার হাজিরার সময় তার ছেলের জায়গায় অন্য লোক সেট করে তাকে নিজের ছেলে পরিচয় প্রদান করেন এবং বিভিন্ন সময়ে আদালতের কাছে সময় চেয়ে কাল ক্ষেপন করছেন। এহেন পরিস্থিতিতে স্বামী মোফাজ্জল হোসেন ও তার গংরা সুলতানা বেগমকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ ও মারধর করতে থাকলে তিনি উপায়ন্তর না পেয়ে পুনরায় আবার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি যৌতুক মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-সিআর ২৯৪/১৫। এতে বিজ্ঞ আদালত স্বামী মোফাজ্জল হোসেনকে গ্রেফতারের আদেশ প্রদান করেন এবং বাকিদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন।
তাদের মধ্যে প্রায় সময়-ই ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। বাদিনি ও তার শুভানুধ্যায়ীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে-ই ক্ষান্ত হয় নাই। পুনরায় সুলতানার কাছে যৌতুকের জন্য ৩ লাখ টাকা দাবী করে। ওই টাকা না দেয়ায় তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হলে স্থানীয় ভাবে তা মিমাংশার জন্য বসা হলে ওই বিচার না মেনে স্বামী ও তার লোকজন বৈঠক থেকে উঠে যায়।
সুলতানা বেগম আরো অভিযোগ করেন, তার স্বামী মোফাজ্জল হোসেন প্রথম নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় (২৯২/১২) জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বাদিনিকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। আসামী স্বামী এই বলে হুমকি দিচ্ছে যে, ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে যদি মামলা তুলে না নেয় হয়, তাহলে সে তাকে টুকরা টুকরা করে বস্তাবন্দি করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে। তাদের এমন হুমকীর কারণে বর্তমানে বাদিনি সুলতানা বেগম তার বাড়ীতে থাকতে পারছেন না। অসহায় এবং নিরাপত্তা হিনতায় ভুগছেন তিনি।
আসামীগণ সুলতানার সাথে যাদের ভালো সম্পর্ক এবং তার বাড়ীতে যাতায়াত রয়েছে তাদেরকেও ছাড় দিচ্ছেন না এই সন্ত্রাসী গ্রুপ। তাদেরকেও মারধর ও বিভিন্নভাবে প্রতিনিয়ত হয়রানি করছেন। অত্র আসামীগণ যে দুষ্ট, লুট-পাটকারী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক তার প্রমাণ মেলে গত ২ আগষ্ট ২০১৫ ইং তারিখ সন্ধ্যার দিকে। আসামী মোঃ আজাদ, মোঃ ফারুক, খাদিজা, হাছনাইনসহ আরো বেশ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে সামছল বদ্দারের বসত ঘরে প্রবেশ করে সামছল বদ্দারের স্ত্রী ও শিশু সন্তানের উপর আক্রমন চালায়। এ সময় ঘরে কোন পুরুষ লোক ছিল না; ছিল শুধু তার স্ত্রী খাদিজা বেগম ও শিশু কণ্যা ছামিয়া আক্তার। ঘরে পুরুষ লোক না পেয়ে মা ও মেয়েকে বে-ধম মারধর করে তারা। এমনকি শিশু কণ্যা ছামিয়াকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে আসামী খাদিজা ইট দিয়ে ওই শিশুর মাথায় জোরে আঘাত করে। এতে শিশুটির মাথায় বড় ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়। সন্ত্রাসী গ্রুপটির মারধরের এক পর্যায়ে মা ও মেয়ের চিৎকার আর চেচা-মেচিতে স্থানীয় ও বাড়ীর অন্য ঘরের লোকজন চলে আসলে ওই সন্ত্রাসী গ্রুপটি সরে পরে। স্থানীয়রা মা ও মেয়ে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সন্ত্রাসী গ্রুপটি এলাকায় নানা ধরনের অপকর্ম করে চলছে। তারা জেলা ও দায়রা জজ মহোদয়কে ধোকা দেয়ার জন্য একটি সিন্ডিকেট তৈরী করতেও সক্ষম হয়েছে। তাদের এ ধরনের কর্মকান্ড থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এলাকার সাধারণ মানুষ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং বিচার বিভাগের কাছে বাদিনি সুলতানা বেগমের নিরাপত্তাও কামনা করছেন।