

রবিবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » জাতীয় » ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ পরিচালক আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। ঠিকাদার হয়রানি সহ ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে প্রকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমূহ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সরকারি ক্রয়ের উৎকর্ষতা। এই কর্মকর্তার বেপরোয়া দুর্নীতিতে বিঘ্ন ঘটছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্বাভাবিক ক্রয় কার্যক্রম।
ওই দপ্তরের একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেন, উপ পরিচালক আতাউর রহমান এখানে যোগদান করার পর থেকে ঠিকাদারদের বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করার পরে বিলের ফাইল আটকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে নিচ্ছেন। দাবিকৃত ঘুষের টাকা পাওয়ার পরেও সময়মতো বিল পরিশোধ না করে উল্টো ঠিকাদারদের ফোন রিসিভ না করা, দুর্ব্যবহার করা সহ বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল করার অভিযোগ করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাজের অনুকূলে ঠিকাদারদের জমাকৃত জামানতের টাকা ফেরত পেতেও উৎকোচ দিতে হয়। দাবিকৃত অর্থ না পাওয়ায় দেড় বছর ধরে জামানতের বিল আটকে রাখা। নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রের গোপন দর বিক্রির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এই উপ পরিচালকের বিরুদ্ধে।
একাধিক ভুক্তভোগী ঠিকাদারের অভিযোগ, ক্রয় কার্য সম্পাদনের প্রেক্ষিতে বিল পরিশোধের জন্য নিয়মানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চেক গ্রহণ করার কথা থাকলেও ঘুষের অর্থের ওপর ভিত্তি করে ফাইল পাস করা হয়। এই সুযোগে উপ পরিচালক আতাউর রহমান ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন। কোনো ঠিকাদার তার দাবিকৃত অতিরিক্ত টাকা দিতে আপত্তি জানালে তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয় এবং কাগজপত্রে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে বিল প্রদানে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি ১৩ লাখ টাকার কাজ শেষ করেন এবং বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি কিছু টাকা কম নেওয়ার অনুরোধ করলে তার ফাইল নিয়ে প্রায় দুই মাস তালবাহানা করেন। পরে তার চাহিদা মতো পুরো টাকা দিলে ফাইল পাস করেন।
অন্য আরেক জন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের অনুকূলে অল্প কিছু টাকার একটি কাজ করেন তিনি। এতে শর্তানুযায়ী সঠিক ভাবে মালামাল সাপ্লাই দিতে হয়। মালামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার দর অনুযায়ী তার লোকসান গুনতে হয়। লোকসানের কথা জানানোর পরেও ভুক্তভোগী ঠিকাদারের কাছ থেকে সরাসরি তিন পারসেন্ট কমিশন দাবি করা হয়। ওই ঠিকাদার কিছু টাকা কম দিতে চাইলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ঠিকাদারের পকেটে হাত দিতে উদ্যত হন এবং ১ মাস পরে এসে চেক নিতে বলেন। পরে তার দাবিকৃত পুরো টাকা দিলে তাৎক্ষণিক বিল প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন উপ পরিচালক।
আরোও একজন ঠিকাদার জানান, তিনি ১৫ লক্ষ টাকার কাজ করে চেক আনতে গিয়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এমনকি জামানতের চেক আনতে গিয়েও তিনি ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে তাকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে জামানতের চেক আনতে হয়েছে। তার এই কমিশন বাণিজ্য এবং অহেতুক হয়রানির কারণে অনেক পুরনো ঠিকাদার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নতুন কাজের শিডিউল কিনছেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপ পরিচালক আতাউর রহমান মাসে ৭/৮ দিন অফিস করেন। অধিকাংশ সময় তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে তার চাহিদা মতো কমিশন দিয়েও মাসের পর মাস বিলের চেক প্রাপ্তির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় ঠিকাদারদের ।
এসকল অভিযোগের ব্যাপারে উপ পরিচালক আতাউর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
দক্ষিণাঞ্চলের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশের বিদ্যুৎখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনে এবং প্রকৃত ঠিকাদারদের হয়রানি বন্ধে উপ পরিচালক আতাউর রহমানের এই সকল অপকর্মের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন সচেতন মহল।
-এফএইচ