

বুধবার ● ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » জেলার খবর » বোরহানউদ্দিনে এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে রাতের আঁধারে চেয়ারম্যানের জমি দখলের অভিযোগ
বোরহানউদ্দিনে এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে রাতের আঁধারে চেয়ারম্যানের জমি দখলের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: ভোলার বোরহানউদ্দিনের কাচিয়া ইউনিয়নে স্থানীয় সাংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে পুলিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে রাতের আধারে আফরোজা আক্তার নামের এক মহিলার ক্রয়কৃত জমি বালি ভরাট ও টং তুলে রাতারাতি দখল করছে বলে কাচিয়া ইউপির চেয়ারম্যান রব কাজি ও তার জামাতা মোঃ লিটন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী আফরোজ আক্তার।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝর চলছে। ঘটনাটি উপজেলার কুঞ্জের হাট সংলগ্ন এলাকার কাচিয়া ইউনিয়নে এঘটনা ঘটে।
অভিযোগে আফরোজা বেগম জানায়, তিনি
অ্যাডভোকেট চিন্ময় দে ও তার ভাই থেকে কয়েক মাস পূর্বে কিছু জমি ক্রয় করে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। কাজের প্রথমে স্থানীয় চেয়ারম্যান আঃ রব কাজির নাতি শাওন দালাল এসে রাস্তার অংশের জমি পাবে দাবি করে সন্ত্রাসী জাতীয় লোকজন নিয়ে আফরোজা আক্তারকে নির্মাণ কাজে বাধা দেয়। রাস্তার পাশের জমিতো সরকারের, যিনি রাস্তা সংলগ্ন জমি ক্রয় করবেন তিনি তার জমির সামনের অংশ (খাস) এ সরকারি জমিটি ব্যাবহার করে থাকেন। যাহা সরকার চাইলে নিয়ে নিতে পারেন। সরকারি জমি ও আরেক জনের জমির সামনের অংশ জমি তারা পাবে কি ভাবে এমন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কোন যুক্তি দেখাতে না পেরে শাওন দালাল তার কাছে চাঁদা দাবি করেন। শাওন দালাল চলে যাওয়ার পর চেয়ারম্যান আঃ রব কাজি নির্মান কাজ বন্ধ করার জন্য লোক পাঠান। মৌখিক ভাবে কাজ বন্ধ করার নির্দিষ্ট কোন কারন চেয়ারম্যানের লোকজন
দেখাতে পারেনি বলে নির্মাণ কাজ চালিয়ে গেছেন আফরোজা আক্তার। চাঁদা না পেয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চেয়ারম্যান ও তার নাতি শাওন। এই ঘটনার কয়েক মাস পরে আফরোজ আক্তার তার বাড়ির অপর পার্শ্বে চিন্ময় দে ও তার ভাই থেকে ৩২ শতাংশ জমি ক্রয় করেন যাহাজ চকডোষ মৌজার, এসএ খতিয়ান নং -৮৩১, বিএস খতিয়ান নং-১২২৪, এসএ দাগ নং-২০৬১, বিএস দাগ নং-৩১৮৫। উল্লেখিত জমিটি ক্রয় করার পর আফরোজা আক্তার তার মায়ের অসুস্থতায় তিনি খুলনায় যান। খুলনা থেকে লোক মারফতে আফরোজা আক্তার জানতে পারেন যে তার অনুপস্থিতির সুযোগে কোন কারন ছাড়াই চেয়ারম্যান লোকজন দিয়ে রাতের আঁধারে আফরোজা আক্তারের জমিটি বালি ভরাট করে দখল করিবেন। আফরোজা আক্তার বিষয়টি জানতে পেরে তিনি তার জমির পূর্বের মালিক চিন্ময় দে’কে জানিয়েছেন।
চিন্ময় দে সার্কেল এসপি ও ওসিকে বিষয়টি জানিয়েও কোন সুরাহা না পেয়ে তিনি ৯৯৯ এ ফোন দিয়েছেন কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও বালু ভরাটের কাজ বন্ধ করতে পারেনি।
পরে ২য় বারের মতো ৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে ঐ জমিতে এবার ঘর তুলে জমি দখল করবেন বলে জানতে পেরেছেন।বিষয়টি শুনে আফরোজা পূনরায় চিন্ময় দে এর মাধ্যমে বোরহানউদ্দিন থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন। এবারও বোরহানউদ্দিন পুলিশ নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করেছেন। অবশেষে ঐ রাতে অন্য স্থানে ঘর ফিট করে রাতের আধারে তারাহুরো করে আফরোজা আক্তারের সেই জমিতে টং ঘর তুলে জমি দখল করেন। আফরোজা আক্তার অভিযোগ করে আরো বলেন, এর পূর্বে রাতের আঁধারে তার ভাড়া বাড়িতে গিয়ে চেয়ারম্যান এর জামাতা মনজুরুল ইসলাম লিটন বিভিন্ন সন্ত্রাসী নিয়ে আফরোজা আক্তারকে পরপর দুইবার হামলা করেছে এবং তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আঃ রব চেয়ারম্যান এর জামাতা ও নাতি কথায় কথায় স্থানীয় সাংসদ এর ভয় দেখায়, অথচ সাংসদ সাহেব গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষের বন্ধু, তিনি অত্যান্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। তিনি কখনোই এসব অপকর্মের প্রশ্রয় দিবেনা। কিন্তু আঃ রব চেয়ারম্যান ও তার লোকজন অন্যের জমি দখল করার জন্য মানুষকে সাংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে সাংসদের সুনাম ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে।
জমি বিক্রেতা চিন্ময় দে জানান, তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক ও দখল পজিশন থেকে আফরোজা আক্তারের কাছে ২য় ধাপে ৩২ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। কিন্তু তিনি মহিলা হওয়ায় চেয়ারম্যান এর লোকজন তার জমিতে রাতের আঁধারে বালি ফেলে ও ঘর তুলে তাকে বেদখল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বালি ও ঘর তোলার পূর্ব মূহুর্তে তিনি বোরহানউদ্দিনের ওসিকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন তাছাড়াও এক টেলিভিশনের সাংবাদিকের মাধ্যমে পুলিশ সুপার সাহেবকে জানালেও জমি দখল ঠেকানো সম্ভব হয়নাই।
অভিযুক্ত মনজুরুল ইসলাম লিটন এর কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে জমিটি তিনি কিনেছেন বলে দাবি করেন। রাতের আঁধারে পুলিশসহ কাউকে তোয়াক্কা না করে কেনো বালি ভরাট ও অন্যস্থানে ঘর ফিট করে মুহূর্তের মধ্যে ঘর তোলা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে না পারলেও মনজুরুল ইসলাম লিটন বলেন, ঘরের কাজ করতে করতে রাত হয়ে গেছে। তবে জমিটি তার পেস্টিজ বলে তিনি স্থানীয় সাংসদকে অবগত করে জমি দখলের কাজ করছেন বলে মনজুরুল ইসলাম লিটন জানিয়েছেন। চেয়ারম্যানের নাতি অভিযুক্ত মোঃ শাওন দালাল জানায়, তারা ভদ্রলোক বলে জমিটি দখল করতে কিছুটা দেরি হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আঃ বর কাজি এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বোরহানউদ্দিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
এদিকে এঘটনায় ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী, তারা বলেন সাংসদ আলী আজম মুকুল অত্যন্ত ন্যয়পরায়ন, তিনি কোন অপকর্মের প্রশ্রয় দেননা, সাংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে ওনার সুনাম ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয়রা ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সাংসদ ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
-বিএইচ/এফএইচ