সোমবার ● ২৩ মে ২০২২
প্রথম পাতা » আইন ও অপরাধ » লালমোহন কামিল মাদ্রাসার বিএসসি শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
লালমোহন কামিল মাদ্রাসার বিএসসি শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলার লালমোহন ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার বিএসসি শিক্ষক মাকসুদ আলমের বিরুদ্ধে ওই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির একাধিক ছাত্রীকে তার প্রাইভেট সেন্টারে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক মাকসুদ আলমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মাদ্রসার অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন দুই ছাত্রী ও তার পরিবার।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, লালমোহন ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার বিএসসি শিক্ষক মাকসুদ আলম একই মাদ্রাসার পিছনে খালপাড় কাশেম খলিফার জামাতার বাসা ভাড়া নিয়ে ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। এর সুবাধে একই মাদ্রাসার ১০ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী মাকসুদ আলমের কাছে কেমিস্ট্রি ও উচ্চতর গণিত সাবজেক্ট প্রাইভেট পড়তে যান। এ-ই সুযোগে ও-ই শিক্ষক মাকসুদ আলম বিভিন্ন সময় তাকে শারীরিক ও তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার চেষ্টা করতো।
গত ২৪ এপ্রিল রোববার সকালে তার ক্লাসের এক সহপাঠী ছাত্রসহ ও-ই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যান তারা। শিক্ষক মাকসুদ আলম ও-ই ছাত্রকে সু কৌশলে চিকন একটি মার্কার পেন কেনার জন্য এটা না ওইটা বলে তিন বাজারে পাঠায়।
এর মধ্যে ওই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন অশালীন ভঙ্গি, কথাবার্তা ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেন। এর পর ও-ই শিক্ষার্থীকে তার অনেক ভালো লাগে বলে শিক্ষক মাকসুদ আলম তাকে জাফটে ধরে তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এসময় ওই শিক্ষার্থী ডাক চিৎকার দিলে শিক্ষক মাকসুদ আলম তাকে ছেড়ে দেন বলেও অভিযোগ করেন ও-ই শিক্ষার্থী।
ভিক্টিম আরো অভিযোগ করেন, প্রাইভেট থেকে মাদ্রাসায় এসে বিষয়টি তার একাধিক বান্ধবীদেরকে জানালে শিক্ষক মাকসুদ আলম প্রাইভেট পড়ার সময় ওই ছাত্রীদের গায়েও ভিবিন্ন সময় হাত দিয়েছেন বলেও বিষয় টি জানাজানি হয়।
এর পর আমরা দুই জন শিক্ষার্থী বিষয়টি একই দিন অধ্যক্ষ বরাবর লিখত ভাবে অভিযোগ দিয়েও অদৃশ্য কারণে গত ১ মাাসেও কোন সু বিচার পায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শিক্ষক মাকসুদ আলমের কাছে গণিত ওবিজ্ঞান সাবজেক্ট প্রাইভেট পড়তে গেলে তিনি তাদের দিকে অশালীন ভঙ্গি, কথাবার্তা ও প্রায় সময় গায়ে হাত দিয়ে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেন। তারা পরীক্ষার ভালো ফলাফলের চিন্তা করে এবং লোক লজ্জার ভয়ে তা কোথাও প্রকাশ করেনি। একজন শিক্ষকের এ-ই রকম আচার নিয়ে তারা হতাশা প্রকাশ করেন।
ভিক্টিমের বাবা বলেন, একজন শিক্ষকের আচার এমন হলে আমাদের মেয়েরা নিরাপদ কোথায়? আমি বিষয়টি আমার স্ত্রীর কাছে শুনেছি। আমার মেয়ে অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি তা আমার জানা নেই।
অভিযুক্ত শিক্ষক মাকসুদ আলম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্যনয় এবং ও-ই ছাত্রীদেরকে তিনি চিনেন না বলে দাবি করেন। তার বাবা অসুস্থ বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।
ওই মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, আমারা শিক্ষকরা হলাম পিতৃ সমতুল্য। একজন শিক্ষকের কাছে এ-ই রকম আচরণ খুবে দুঃখ জনক। এ-ই রকম আচরণ তা কখনো জাতি আমাদের কাছে আশা করে না।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ও-ই ছাত্রীদের লিখিত অভিযোগ পেয়ে সকল শিক্ষকদের নিয়ে মাকসুদ আলমকে ডেকে ছিলাম। তিনি জানালেন ও-ই ছাত্রীর সাথে অন্য ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে নাকি শাসন করতে গিয়ে তিনি থাপ্পড় দেওয়ার সময় ছাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে লেগেছে বলে ওই শিক্ষক জানিয়েছেন। আমরা তাকে ভবিষ্যতে এসকল বিষয় না করার জন্য শাসিয়ে দিয়েছি। মাদ্রাসা কামিল পরীক্ষা চলমান থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলার চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমি এ-ই বিষয়টি শুনে অধ্যক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছিলাম।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পল্লব কুমার হাজরা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোজ খবর নিয়ে দেখছি।
-এফএইচ