মঙ্গলবার ● ৪ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলায় সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নয়া কৌশল, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ!
ভোলায় সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নয়া কৌশল, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ!
বিশেষ প্রতিনিধি: পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একাধিক সহিংস ঘটনায় ইতোমধ্যেই ভোলা দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাড়ী ঘর ভাংচুর, বোমা হামলা, নারীদের সভ্রমহানী, দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, মারধর ও মিথ্যা মামলায় হয়রানী গ্রেফতারের ঘটনায় প্রমাণ করেছে যে বর্তমান প্রশাসন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানে আন্তরিক নয়। প্রতিনিয়ত আহত হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের কর্মী সমর্থকরা হাসপাতালে আসছে অথচ সব ক’টি ঘটনায় মামলা হচ্ছে না। মামলা হলেও গ্রেফতার হচ্ছে না। আবার গ্রেফতার হলেও পুলিশ অনেককে ছেড়ে দিচ্ছে। এমনকি কোন কোন প্রার্থীর কর্মীদের গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করছে পুলিশ। এ অবস্থায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা নিজেরাই ভোট সুষ্ঠু হবে কি না সে ব্যাপারে সংশয়ে রয়েছেন। শিবপুরের চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। আগামীকাল ৫ জানুয়ারী ভোট কেন্দ্রে কি ঘটবে ভোটাররা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে পারবে কিনা, কোন কোন প্রার্থী জোরপূর্বক তাদের সামনেই ভোটারদেরকে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করেন কিনা? যেহেতু প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেখানে আবার (সোমবার) রাতে হঠাৎ করে সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণ কার্ড বাতিল করে ইউএনও বরাবরে নতুন করে আবেদনের জন্য বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তে প্রমাণ করে প্রকৃত সংবাদ যেনো মিডিয়ায় না আসে। হঠাৎ করে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ভোলায় গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সাংবাদিকরা বিভিন্ন ধরণের বক্তব্য প্রদান করছেন।
ভোলার সিনিয়র সাংবাদিক ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির ভোলা প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিয়মের বাইরে অন্য কোন ব্যক্তি বা সংস্থার কার্ড দেয়ার অথরিটি কিংবা সুপারিশের সুযোগ নেই। এউএনও বরাবরে আবেদন এর নির্দেশ দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনী। নির্বাচন কমিশনের কার্ড, নিয়মানুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাই দেবেন। ইউএনও বা পুলিশ সুপার কিংবা জেলা প্রশাসক বা অন্য কারো দেয়ার বিধান নেই। এই সিদ্ধান্ত যদি পরিবর্তন করা না হয় তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
ভোলা জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক সমকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক আল আমিন শাহরিয়ার বলেন, একজন নির্বাচন কর্মকর্তার কোনমতেই এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করার এখতিয়ার নেই। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ভোট কেন্দ্র দখল ও কারচুপির সুযোগ করে দিতে গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে হঠাৎ এ ধরণের অন্যায় বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন বলেও তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এ ধরণের ঘৃণ্য কর্মকান্ড শুরু করেছেন।
এদিকে সিনিয়র সাংবাদিকগণসহ ভোলা জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সকল সাংবাদিকগণ নির্বাচন কর্মকর্তার এ ধরনের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
ভোলায় কর্মরত সংবাদ কর্মীরা জানান, গত ৩১ তারিখে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ফোনে সাংবাদিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কার্ডের জন্য নতুন করে আবেদন করতে হবে কিনা এই বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা পূর্বে নির্বাচনী কার্ড পেয়েছেন তাদের কারো আবেদনের প্রয়োজন নেই। আগের কার্ড দিয়ে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
এবিষয়ে ভোলা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন আল মামুনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য সম্ভব হয়নি।
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা নতুন করে নির্বাচন অফিস অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর নির্বচনি কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। যাচাই-বাছায়ের সময় ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেক্রেটারি উপস্থিত থাকবেন। তারা যেটা দেওয়ার জন্য বলবেন সেটি ইস্যু করা হবে। যারা প্রেসক্লাবের সদস্য নয় তাদের আইডি কার্ড দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন? যাদের সাংবাদিকতায় ভালো ক্যারিয়ার রয়েছে তাদেরকে বিবেচনা করা হবে।
-বিএইচ/এফএইচ