বুধবার ● ৩ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় » বাস্তুচ্যুত অভিবাসীদের দায়িত্ব পুরো পৃথিবীর: প্রধানমন্ত্রী
বাস্তুচ্যুত অভিবাসীদের দায়িত্ব পুরো পৃথিবীর: প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত অভিবাসীদের দায়িত্ব পুরো পৃথিবীকে ভাগ করে নিতে হবে বলে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার স্কটিশ পার্লামেন্টে ‘কল ফর ক্লাইমেট প্রসপারিটি’ শীর্ষক আলোচনায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক ঘটনায় প্রভাবিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব বিশ্বকে অবশ্যই ভাগ করে নিতে হবে। ক্ষতিপূরণে অবশ্যই সঠিক সমাধান দিতে হবে।’ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৬০ লাখ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আরও অতিরিক্ত ১১ লাখ রোহিঙ্গা বোঝা হিসেবে যোগ হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় এটি অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।’
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা এবং সিভিএফ দূত সায়মা ওয়াজেদ হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। স্কটিশ পার্লামেন্টে পৌঁছালে দেশটির স্পিকার অ্যালিসন জনস্টোন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ওপর বিশেষ মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের ব্যাপারে তাদের অঙ্গীকার অবশ্যই পূরণ করতে হবে।’ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভালনারেবল-২০ (ভি২০) সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলেকে অবশ্যই উচ্চাভিলাষী এনডিসি (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) পেশ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।’ অভিযোজন ও প্রভাব প্রশমনের ক্ষেত্রে জলবায়ু অর্থায়ন বিতরণে মধ্যে ৫০:৫০ অনুপাত থাকা উচিত বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনে ০.৪৭ শতাংশের কম দায়ী হওয়ার পরও বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো বড় হুমকিতে আছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, বন্যা ও খরা, তীব্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঋতু পরিবর্তন, নদী ভাঙ্গন বাংলাদেশ ও অন্যান্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’ বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকে বাংলাদেশের জন্য একটি ভয়াবহ হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীন উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে নষ্ট হয়ে যায় এবং আগামী দশকে তা ৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা জলবায়ু প্রভাবের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ, একই সময়ে আমরা আমাদের সহিষ্ণুতার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।’ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) প্রতিষ্ঠা করেছে। এই তহবিলের আওতায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪৮০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগসহ ৮০০টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যা প্রধানত অভিযোজন, প্রভাব প্রশমন এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত গবেষণার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।’
নিরাপদ, জলবায়ু সহিষ্ণু এবং সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ অর্জনে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শত বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ গ্রহণ করার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে, দেশ অগ্রসর হচ্ছে এবং একটি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে, যা আমাদের অভিযোজন উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
-নিবা/রাজ