শনিবার ● ৯ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » জেলার খবর » মাদক ও জিনের অভিনব মিশনে ভোলার বেদে সম্প্রদায়!
মাদক ও জিনের অভিনব মিশনে ভোলার বেদে সম্প্রদায়!
এইচ এম নাহিদ: সিঙ্গা লাগাই, দাঁতের পোঁকা ফালাই, খাঁ খাঁ বখখিলারে খাঁ, কাঁচা ধইরা খাঁ, এই হাক ডাক গুলো আর শোনা যায় না ভোলার বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে। বানর আর সাপ খেলার চির চেনা আয়োজন বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে আর দেখা যায় না। দিন বদলের হাওয়ায় নিজেদের উজার করে অধিক মুনাফার লোভে সম্প্রদায়ের অধিকাংশ কর্তারা নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন নানান অপরাধ কর্মকান্ডে। তাবিজের অন্তরালে মাদক ও জিনের বাদশার অভিনব মিশন হাতে নিয়েছেন এই সম্প্রদায়। তাদের এই নয়া টার্গেটে পড়েছেন তরুণ সমাজ ও গ্রামের সাধারণ মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার হলুদিয়া ও গোয়ালিমান্দার কুমারবাগ ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা এ-ই বেদে সম্প্রদায়। যাযাবরের তক্মা লাগালেও আদতে তারা এখন আর যাযাবর নয়। এদের সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধিও সেখানের জনগনের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ভোলায় জীর্ণশীর্ণ বসবাস করলেও তাদের নিজ এলাকায় রয়েছে আলিশান বাড়ি, গাড়ী, রামরাজত্ব।
পরিচয় গোপনের শর্তে এক বেদীনি বলেন, পূর্ব পুরুষের পেশায় এখন আর ভাত জুটেনা। ন্যায় অন্যায় বুঝিনা, এখানকার মিয়ারাই আমাদের ভরসা, ভাল মন্দ তারাই বুঝেন।
এই সম্প্রদায়ের একজন সোহেল সাপুরে (৪০), তিনি বলেন, ১০ বছর হইলো এই খানে আইছি, আগেরমতন এহন আর কাইজকাম নাই, গ্রামেগঞ্জে বাইর হইয়ে যেইটুকু রোজগার হয় তা দিয়ে কোন রকম চৈলে যায়। সরকার আমাদির যদি কিছু একটে কৈরে দিত তা-হইলে আর এইখানি পইরা থাক-তুইমনা।
নিজেদের ভিটে-মাটিহীন যাযাবর তক্মা লাগিয়ে ভোলায় ভবঘুরের জীবনযাপন করছেন এই চক্রটি। প্রায় এক যুগ ধরে ২৫০ টি পরিবার ভোলার সদর হেলিপ্যাড, ঘুইঙ্গারহাট, খাসের হাট, বোরহানউদ্দিন হেলিপ্যাড, কুঞ্জেরহাট, লালমোহনের নাঙ্গলখালী, চরফ্যাশনের বটতলা, লেতরা, দক্ষিনআইচা,আঞ্জুরহাট সহ ভোলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছেন তারা। প্রায় ৪’শ যুবক, মহিলা ও বয়স্করা তাদের আদিপেশা বদল করে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়াচ্ছেন। স্থানীয়দের একটি বড় চক্র এদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শহরের মাদক সেবীদের তথ্য অনুযায়ী বেদে সম্প্রদায়ের কিছু নারী ও পুরুষরা এখন ভোলা থেকে চরফ্যাশন পর্যন্ত নতুন করে মাদক সাপ্লাইয়ের কাজ করছে। সাধারণ সাপ্লাইয়ারের কাছ থেকে ওদের রেট একটু কম। তাছাড়া এখন ঘরে বসে এদের কাছ থেকে ইয়াবা,গাঁজা সংগ্রহ করতে পারেন। কারন পুলিশ এদের সন্দেহ করেনা।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোঃ জিতু (৩৫), মোঃ ফিরোজ (৫৫), গ্রাম্য ডাক্তার মোঃ খোকন (৩৮) বলেন, বেদে সম্প্রদায় পরিচয়ে পুরুষহীন বাড়ীতে ডুকে কিছু সংখ্যক পুরুষ ও মহিলা জিন চালের কথা বলে সহজ সরল গৃহিনীদের লাখ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে হাতে পবিত্র তাবিজ ও আংটি দিয়ে আমাদের প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কাজ না হওয়ায় টাকা চাইতে গেলে আমাদের বংশ জিন দিয়ে ধ্বংশ করার হুমকী দেয়।
বেদে সর্দার খায়রুল (৪৫) অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কোনদিন মাদকের নামও হুনিনাই এই হুনলাম, আর জিনটা কে-ডা-বাপ ? আমাগোরে এইহানে বড় মিয়া যায়গা দিছে তাই পইরে আছি। আয় রোজগারের উৎস জানতে চাইলে বলেন, সাপ খেলা, বানর খেলা নিষিদ্ধ তাই কাজকর্ম নাই দেশ থেইকে পয়সা আইনে এহন কোন রকম চৈলে যায়।
-এফএইচ