শুক্রবার ● ২১ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » পাঠকের মতামত » ভারত বনাম বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ পরীক্ষার বৈষম্য পদ্ধতি ও কিছু কথা!
ভারত বনাম বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ পরীক্ষার বৈষম্য পদ্ধতি ও কিছু কথা!
ফরহাদ হোসেন: পৃথিবীর প্রতিটি বার কাউন্সিলের আইনজীবী নিয়োগের পদ্ধতি প্রায় সব একই রকম হলে ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবীদের সনদ প্রদানের পদ্ধতি অনেকটাই ভিন্ন। তাই প্রতিবছর বার কাউন্সিলের সনদ নামক যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে আইন পেশার স্বপ্ন নিষ্পেষিত হচ্ছে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল গঠনের পর থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত শুধু মৌখিক ( ভাইভা) পরীক্ষা নিয়ে বার কাউন্সিল আইনজীবীদেরকে সনদ প্রদান করেছিলেন। তখন প্রশিক্ষণ ও গেজেটের মাধ্যমে আইনজীবীদেরকে সনদ প্রদান ও করা হতো।
১৯৮১ সালে এর সাথে যুক্ত করা হয় লিখিত (রিটেন) পরীক্ষা যা ২০১১ সাল পর্যন্ত ছিলো। এ সময় প্রতি বছরে নির্দিষ্ট সময়ে দুটি পরীক্ষা নেওয়া হতো। ২০১১ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বিধি পরিবর্তন করে এর সাথে সংযুক্ত করা হয় প্রিলি (এমসিকিউ) পরীক্ষা। তারপর থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর পরীক্ষা নেওয়ার বিলম্বের প্রতিযোগিতা ও মনগড়া বিধি পরিবর্তন নীতিমালা।
যেখানে এক ছরের দুইটি পরীক্ষা নিত এখন সেখানে তিন বছরেও একটি পরীক্ষা তারা শেষ করতে পারছে না। আবার পরীক্ষাতে পাশের হার ও ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। পৃথিবীর কোন বার কাউন্সিলে এইরকম পরীক্ষার পদ্ধতি আছে কিনা তাও অজানা। এই কারণে প্রতিবছর শিক্ষানবিশ আইনজীবী সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে বেকারত্ব। স্বপ্ন ভাঙছে তাদের পিতা-মাতার। এই পেশায় এসে বছরের পর বছর একটি সনদের অপেক্ষা করে অবশেষে নিষ্পেষিত হচ্ছে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জীবন।
বাংলাদেশের সরকারি চাকরি করতে হলে ১০০ মার্কের দুইটি পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথমত ৮০ মার্কের প্রিলি এমসিকিউ পরীক্ষা এবং পরবর্তীতে ২০ মার্ক এর ভাইভা পরীক্ষা।
এই দুইটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৫৫ থেকে ৬০ বৎসর পর্যন্ত সরকারি চাকরি করে সরকার থেকে মাসিক নির্দিষ্ট বেতন, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও পেনশন ভোগ করা হয়।
আর আইন পেশায় যেখানে সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট কোন সেলারি ও সম্মানী নেই। সেখানে বিসিএস ও জুডিশিয়ারি পদ্ধতিতে তিনটি ধাপে ২৫০ মার্কের পর্যায়ক্রমে তিনটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। আবার দেয়া হয়নি আইনজীবীদের প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসারের সম্মানও।
বার কাউন্সিলের এর শিক্ষানবিশদের উপর মনগড়া নীতি ও বৈষম্যের কারণে প্রতিবছর আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে বহু আইন শিক্ষার্থীদের ।
ভারত বার কাউন্সিল বনাম বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ প্রদানের পদ্ধতিঃ
১। ভারত বার কাউন্সিলে একমাত্র পরীক্ষা ১০০ নম্বরের এমসিকই নেওয়া হয়।
আর বাংলাদেশ বার কা উন্সিল ২০১২ সাল থেকে তিন স্তর পরীক্ষা =১০০ নম্বরের MCQ+১০০ নম্বরের written +50 নম্বরের Viva নেয়।
২। ভারত বার কাউন্সিলে — ১০০ নম্বরের mcq পরীক্ষার সময় ৩:৩০ ঘন্টা। আর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে ১০০ নম্বরের mcq পরীক্ষার সময় ১ ঘন্টা।
৩। ভারত বার কাউন্সিলে mcq পরীক্ষা open book system এ নেওয়া হয় অর্থাৎ পরীক্ষার্থী যে কোন বই সাথে নিয়ে যেতে পারে এবং বই দেখে উত্তর দিতে পারে। আর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে পরীক্ষায় open book system নেই, সম্পূর্ণ মুখস্থের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষা দিতে হয়।
৪। ভারত বার কাউন্সিল পাশ নম্বর গণ্য করে ৪০ এ। আর বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পাশ গন্য করে ৫০ নম্বরে।
৫। ভারত বার কাউন্সিল ভুল উত্তরের জন্য কোন নম্বর কেটে নেয় না। আর বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রতি ৪টি ভুলের জন্য ১ নম্বর করে কেটে নেয়।
৬। ভারত বার কাউন্সিল প্রতি ৬ মাস পর পর বছরে ২ টি পরীক্ষা নেয়। আর বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ১টি ব্যাচ বের করতেই অনিশ্চিত ৪ থেকে ৫ বছর নষ্ট করে ফেলেন।
বিঃদ্রঃ প্রশ্ন:
১। যেখানে বাংলাদেশের বিজ্ঞ আদালতগুলো ভারতের আদালতের রায় কে নজির হিসেবে গণ্য করেন, যেখানে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী ভারতের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে নীতি প্রনয়ন করেন, কিন্তু আইনজীবী তালিকাভুক্তি জন্য সনদ পরীক্ষার ক্ষেত্রে কেন এত বৈসাদৃশ্য??
২। বাংলাদেশের আইনজীবীগণ কি ভারতের আইনজীবীগন থেকে দক্ষ? বা ভারতের আইনজীবীগণ কি খুব অদক্ষ??
তা নাহলে কেন সনদ পরীক্ষায় এই আকাশ পাতাল বৈসাদৃশ্য?