সোমবার ● ৬ জুলাই ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলার চরাঞ্চলে ঝুঁকি নিয়ে বাঁচতে হয় ওদের!
ভোলার চরাঞ্চলে ঝুঁকি নিয়ে বাঁচতে হয় ওদের!
জুয়েল সাহা :: মানুষের জীবন ধারণের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের পাশাপাশি দরকার একটি নিরাপদ আশ্রায়। ভোলার মেঘনার ও তেঁতুলিয়ার নদীর মধ্যে ও র্তীরবতী বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চালের পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় প্রকৃতিক দুর্যোগে চড়ম ঝুঁকি বসবাস করতে হয় প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের। বসবাসরত চরাঞ্চলের ৯০ ভাগ বাসিন্দাদের ঝড়-বৃষ্টি, জলোচ্ছাসের আতংকে থাকলেও নেই কোনো কার্য্যকর ব্যবস্থা। এছাড়ারাও বেঁড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানির সাথে দৈনিক যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনের কারণে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চগুলোতে দিন দিন জনবসতি বাড়ছে। মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীর র্তীরবতী এবং মধ্যবতী অর্ধশতাধিক চরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ বসবাস করছে। এদের মধ্যে মাঝের চর, সিকদার চর, কলাতলীর চর, চর তাড়–য়া, চর ছকিনা, ঢালচর, চর কুকরী-মুকরী, চর নিজামসহ মোট ১০ টির বেশি চরে কোন ঘূর্ণিঝড়, জলচ্ছাস আশ্রয় কেন্দ্র বা মাটির কিল্লা নেই। অথচ এই চরগুলোতে যুগ যুগ ধরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে আসছে।
মাঝের চরে বাসিন্দা আলী হোসেন, ফারুক মিয়া ও তোফাজ্জল জানান, কয়েক যুগ ধরে আমরা এ চরে থাকতাছি। আমাগো নিরাপত্তার লিইগা কোন আশ্রয় কেন্দ্র নাই।
চর নিজামের বাসিন্দা আলতাফ মিয়া, জহিরুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন জানান, এই চরে আমরা ৩০ বছর ধইরা থাকতেয়াছি। ঝড়, তুফান ও জোয়ারের পানির লগে যুদ্ধ কইরা বাইচা আছি। সরকার আমাগোরে কোন সাহার্য্য সহযোগিতা করে না।
কলাতলি চরের বাসিন্দা রেহানা বেগম, আরজু বেগম, লিজু বেগম ও ফাতেমা বেগম জানান, অনেক কষ্টে করে জোয়ার ও বন্যার পানির লগে যুদ্ধ কইরা আমরা বাইচা আছি। বছরে ছয় মাস পানি থাকে ওই সময় আমাগো স্বামীরা কাম-কাজ ঠিকমত করতে পারেনা। ঠিকমত খাওন জোটেনা।
ঢালচর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম পাটোয়ারী জানান, পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় বণ্যা ও জোয়ারের পানির সাথে এখানকার মানুষ যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। তবে পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য আমরা কয়েকটি মানববদ্ধন কর্মসূচী পালন করেছি।
ভোলা ঘর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচীর উপ-পরিচালক মো.সাহাবুদ্দিন জানান, মহাবিপদ সংকেত হলে চরে বসবাসরত ৪০ শতাংশ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। বাকিরা চড়ম ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়।
তবে ভোলা পানি উন্নায়ন বোর্ড (পাওবো) কর্মকর্তা আবদুল হেকীম জানান, সব চরাঞ্চলে বেঁড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেট আসেনি। তবে কয়েকটি চরে বেঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজা জানান, চরাঞ্চলের নিরাপত্তাহীন ও বিপদগ্রস্থ মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য খুব দ্রুত কাজ করা হবে। বেশ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রের কাছ চলছে বলে তিনি জানান।