শনিবার ● ২৬ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ১৯ বছরেও এমপিও হয়নি লালমোহনের খাদিজা খানম বিদ্যালয়!
১৯ বছরেও এমপিও হয়নি লালমোহনের খাদিজা খানম বিদ্যালয়!
মাকসুদুর রহমান পারভেজ, লালমোহন: দ্বীপ জেলা ভোলার লালমোহন উপজেলার মেঘনার নদীর তীরবর্তী ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের (৭ নং ওয়ার্ডে) কুন্ডের হাওলা গ্রামে অবস্থিত খাদিজা খানম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজও এমপিও ভূক্তির আওতায় আসেনি। এতে করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের জীবন যাপন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধলীগৌরনগরের কুন্ডের হাওলা পাটাওয়ারীর হাট সংলগ্ন মেঘনার উপকূলীয় এলাকার একটি গ্রাম, এ গ্রামের আশেপাশে প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে ছিলনা কোন বিদ্যালয়। এই অঞ্চলের সাধারণ জনগণ তাদের সন্তানদের পড়ালেখা করানোর ইচ্ছা থাকলেও নিকটে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় তাদের ইচ্ছা শুধু স্বপ্নে পরিণত হয়ে থাকত। নদী এলাকার কোমলমতি শিশুরা সরকারের নিষিদ্ধ শিশুশ্রমে জড়িয়ে পরে। এ সকল দিক ভিবেচনা করে ২০০১ ইং সালে খাদিজা খানম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমাজ সেবক মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান মান্না, তিনি তার মায়ের নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে দীর্ঘ দেড়যুগেরও বেশি সময় ধরে এক জন প্রধান শিক্ষকসহ ১১ জন শিক্ষক কর্মচারী তাদের পকেটের টাকা দিয়ে স্কুল ঘর নির্মাণ প্রতি বছর মেরামত করে আসছে। শিক্ষকরা এমপিও‘র ভূক্তির আশায় দীর্ঘ দেড়যুগের বেশি সময় ধরেও ঘরের খেয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। জানা যায়, বিদ্যালয়টি ২০১০ ইং সাল থেকে ( জেএসসি) জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীর্ণ হয়ে সুনামের সহিত সাফল্য অর্জন করে আসছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৩ শতাধিক ছাত্র/ ছাত্রী রয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে-৮৭ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৭৪ জন, এবং অষ্টম শ্রেণিতে ৭৫ জন ছাত্র ছাত্রী অধ্যায়ন রত আছেন। সাফল্য অর্জনকারী এ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক কর্মচারীরা দীর্ঘদিন এমপিও‘ ভূক্তির আশায় অপেক্ষার প্রহর গুণে আসছেন। কিন্তু (২৩ অক্টোবর) বুধবার সদ্য ঘোষিত এমপিও‘র তালিকায় তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম না থাকায়, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন না হওয়ায় হতাশার অন্ধকার নেমে আশে তাদের দু‘ চোখে। পরিবারে দেখাদেয় হতাশার ছাঁয়া, তাদের আশা ধূলিসাৎ হয়ে নিরাশায় পরিনত হয়ে গিয়েছে। মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানদের ভরণ পোষণ পড়া লেখার খরচ জোগারের একমাত্র দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তিটি বিনা পয়সায় শিক্ষকতা করে আসছেন, সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত। একটানা বিদ্যালয়ে সময় দেওয়ায় অন্যকোন উপার্জনকৃত কাজ করতে না পারায় শিক্ষিত এ ব্যক্তিদের পরিবারে নেমে আসে দারিদ্রের করাল গ্রাস,দূর্বিসহ হয়ে পরে তারা।
খাদিজা খানম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহাবুদ্দীন বলেন, আমরা সকল শিক্ষকগণ দীর্ঘ যুগ যুগ অপেক্ষার প্রহর গুণে আশায় বুক বেঁধেছিলাম কিন্তু সদ্য এমপিও‘র তালিকায় আমাদের এ স্বনামধন্য বিদ্যালয়টির নাম না থাকায় হতাশ এবং কালোছায়া নেমে আশে আমাদের মাথার উপর। মা,বাবা, স্ত্রী সন্তান নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকব চিন্তা করে কূল পাচ্ছি না। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মোঃ ইউনুছ মিয়া বলেন, আমি শতভাগ আশা করেছি আমাদের বিদ্যালয়টি এবছর এমপিও‘ ভূক্ত হবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমপরিহাস আমাদের প্রতিষ্ঠানটি এমপিও‘র তালিকায় আসেনি। তার পরেও আমরা আমাদের সাফল্য ধরে রাখব, আশা করি পরবর্তী এমপিও ছাড়লে আমরা শতভাগ আশাবাদী।
-এফএইচ