বুধবার ● ৩১ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » জেলেরা বলেছেন ইলিশের পেটে এখনো ডিম আছে..
জেলেরা বলেছেন ইলিশের পেটে এখনো ডিম আছে..
এম আমির হোসেন: ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার ৩ দিন অতিক্রম হলেও বুধবার মেঘনা নদীতে পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ক্রেতাদের অভিযোগ ওই মাছ গুলো ধরা হচ্ছে ‘মা-ইলিশ’। আগে ভাগেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে জেলেরা সাগর ২৮ অক্টোবর ২২ দিন শেষ করে আরো তিনদিন চলছে। প্রজনন মৌসুমের টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীর রূপালী ইলিশে ভরে গেছে চরফ্যাশন উপজেলার মৎস্য ঘাটগুলো। বেতুয়া ঘাটে ইলিশ ক্রয় করতে আসা অনেক জেলে ও ক্রেতারা জানালেন, প্রত্যেকটি ইলিশ মাছে ডিম রয়েছে। তারা বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়টা আর একটু পিছিয়ে আনা হলে এ বিপুল সংখ্যক মা -ইলিশ ডিম ছাড়তে পারতো।
ইলিশের আমদানি বাড়ার সাথে সাথে ঝিমিয়ে পড়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রতে ঘিরে কর্মব্যস্থতা বেড়ে গেছে। মাছ বহনসহ বরফ কল থেকে শুরু করে প্যাকিংয়ের শ্রমিকরা কর্মব্যস্ততা সময় পার করছেন। ইলিশের আমদানি বাড়ার কারণে দরও অনেকটা নাগালের ভিতরে রয়েছে বলে দাবী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। মাছ আর মানুষের ভীড়ে মৎস্য ঘাট গুলো মেঘনার বেতুয়া, খেঁজুর খাছিয়া, নতুন স্লুইজ গেইট, চরকচ্ছপিয়া, তেতুলিয়া নদীর কাছিয়া খালি, হাজীর হাটের রাস্তার মাথা, বকসী মৎস্য ঘাট ঘুরে দেখা গেছে ঘাট গুলোতে এসেছে প্রচুর ইলিশ। পাইকারী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতাদের ভীড় ছিলো চোখে পরার মতো।
বেতুয়া ও ঘোষেরহাট লঞ্চ ঘাটে মাছের ঝুড়ি গুলো উঠানামা করায় যাত্রীগণ দেরীতে লঞ্চে উঠতে হয়েছে। অনেক লঞ্চ মাছ উঠানোর জন্য নির্ধারিত সময় লঞ্চ না ছেড়ে ২৫/৩০ মিনিট সময় দেরীতে লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে বলে জানা গেছে।
বেতুয়া ঘাট সংলগ্ন খালে ছোট বড় ট্রলার-নৌকা স্থানীয় নদী থেকে মাছ আনা হচ্ছে বিক্রির জন্যে। তারা বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়টা আর একটু পিছিয়ে আনা হলে এ বিপুল সংখ্যক মা-ইলিশ ডিম ছাড়তে পারতো। মা-ইলিশের পাশাপাশি জাটকা ইলিশের দেখাও মিলেছে বাজারে। ২০০৮ সাল থেকে সরকারের ইলিশ সংরক্ষণ পদ্ধতি এবং নিষেধাজ্ঞার কারনে সাগর ও নদ-নদীতে ইলিশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রতিবছরই বড় বড় সাইজের ইলিশ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
তবে অনেক ইলিশের পেটে এখনও ডিম রয়েছে বলে দাবী করেছেন ব্যবসায়ীরা। মাছগুলো পাইকারী দামে ক্রয় করে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রয়কৃত ইলিশ মোকামে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন যানবাহনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
সংশ্লিষ্ট আড়ৎ সূত্রে জানা গেছে, পাইকারী বাজারে প্রতি মন এলসি সাইজ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায়, এলসির নীচের সাইজের ইলিশ (ভ্যালকা) বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় এবং এর নীচের সাইজ গোটলা বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় দরে প্রতি মন বিক্রি হয়েছে।
বেতুয়া মৎস্য ঘাটের আড়ৎদার নুরে আলম মাষ্টার জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর প্রথমদিন থেকেই যে মাছের চাঁপ বেড়েছে তা সকলের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। ঝিমিয়ে থাকা মৎস্য ঘাট গুলোতে বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্যতা। এরকম চাঁপ আরও কয়েক দিন থাকবে বলেও জানান তিনি। মৎস্য শ্রমীক আবু তাহের বলেন, বুধবার বিকেল পর্যন্ত আমদানি বেশি থাকায় দামও কিছুটা কম। ইলিশের চাপ এরকম আরও ২/১ দিন থাকবে, তবে আজ ১ নভেম্বর থেকে ঝাটকা নিধন বন্ধের কর্মসূচী শুরু হওয়ার পর ইলিশের চাঁপ কমে যাবে। অনেক ট্রলার মালিকের অভিযোগ, মাছের দাম কম থাকলেও আমদানি বেশি হওয়ায় বরফের দাম বেড়েছে। ২৫ থেকে ৩০ টাকার একঝুড়ি ভাঙ্গা বরফ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে অর্থাৎ এক পিস আড়াইশত টাকার বরফ তিন শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোমবার দিনে পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে মাছ পাঠানো সম্ভব হয়নি, ফলে বরফের মূল্য বেড়ে গেছে।
জেলা মৎস্য ভিবাগ বলেন, মা-ইলিশ ডিম দেওয়ার কারনে মাছ এখন চিকন হয়ে গেছে । শতকরা ৬০ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে বলে চাদপুর গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে।
-এফএইচ