বৃহস্পতিবার ● ৩০ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » দৌলতখান ঘাটে ৬ দিনেও উদ্ধার হয়নি ফারহান, যাত্রীদের দুর্ভোগ
দৌলতখান ঘাটে ৬ দিনেও উদ্ধার হয়নি ফারহান, যাত্রীদের দুর্ভোগ
বিশেষ প্রতিনিধি: ছয় দিনেও উদ্ধার হয়নি ঘাটে কাত হয়ে পড়ে থাকা এমভি ফারহান-১। লঞ্চটি দৌলতখান টার্মিনাল জুড়ে একদিকে কাত হয়ে অর্ধেকটা ডুবে আছে। পুরো টার্মিনাল জুড়ে কাত হয়ে পড়ে থাকায় দৌলতখান থেকে ঢাকা রুটের যাত্রীদের সিমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ঈদ শেষে ঢাকাগামী যাত্রীদের পদে পদে সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা। সাথে প্রতিদিন ঘাট ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ আগস্ট ঢাকা থেকে ছেড়ে ২৫ আগস্ট রাত ৩টার দিকে এমভি ফারহান-১ লঞ্চটি দৌলতখান লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী নামানোর জন্য ঘাট করে। লঞ্চটি এমনভাবে ঘাট করে, তাতে ব্লকের উপর উঠে যায়। যখন লঞ্চটি ঘাট করে তখন জোয়ার থাকায় কোন সমস্যা হয়নি। যাত্রী নামিয়ে দিয়ে লঞ্চের স্টাফরা ঘুমিয়ে পড়েন। তখন জোয়ার শেষে ভাটা নেমে আসায় লঞ্চটি ব্লকের সাথে আটকে যায় এবং একদিকে কাত হয়ে পড়ে। আর তখনই লঞ্চের মধ্যে আস্তে আস্তে পানি প্রবেশ করে। এক সময় লঞ্চের কাত হয়ে থাকা অর্ধেক অংশ পানির নীচে ডুবে যায়। দীর্ঘ ৬ দিনেও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ঈদ শেষে ঢাকাগামী হাজার হাজার যাত্রীদের। সাথে সাথে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে সেখানকার ব্যবসায়ীদের।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানান, গত ৬ দিন যাবত লঞ্চটি এই অবস্থায় পড়ে আছে। লঞ্চ মাস্টারের অবহেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত লঞ্চ কর্তৃপক্ষ উচ্চ মানের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। লঞ্চ উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের ভালো কোন উদ্যোগও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। লঞ্চটি এভাবে পড়ে থাকায় দৌলতখান পল্টুনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিদিন দৌলতখান লঞ্চ ঘাটে ঈদ শেষে ঢাকাগামী যাত্রীদের উপচে পড়া ভীর লক্ষ্য করা গেছে। হাজার হাজার যাত্রী লঞ্চে উঠতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে। কারণ ফারহান-১ পল্টুনের সামনে কাত হয়ে পড়ে থাকায় অন্য কোন লঞ্চ পল্টুনে ভীরতে পারছে না। তাই ঢাকাগামী যাত্রী এবং ব্যবসায়ীদের লঞ্চে চড়তে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে হচ্ছে।
দৌলতখান থেকে ঢাকাগামী বেল্লাল নামে এক যাত্রী বলেন, একে তো ঈদ উপলক্ষে কেবিন সংকট, তার উপর আবার কষ্ট করে আজ আমার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে লঞ্চ উঠেছি। আসার সময় বাইক নিয়ে দেশে এসেছিলাম। এই ঘাট দিয়ে বাইক উঠাতে না পেড়ে তা এখন ভোলা লঞ্চঘাটে দিয়ে এসেছি। এতে অতিরিক্ত অর্থ নষ্ট হয়েছে আমার।
এমন নানান অভিযোগ তুলে ধরছেন যাত্রীরা। নুরজাহান নামে এক বৃদ্ধা যাত্রী বলেন, আমার ছেলেরা ঢাকায় থাকে। ডাক্তার দেখাতে মাসের মধ্যে দু-একবার ঢাকায় যেতে হয়। লঞ্চে উঠার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় আজ বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছি। আগামীকাল ভোলা দিয়ে যাবো।
অন্যদিকে বাজার ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা থেকে আসা কোন লঞ্চ এখন দৌলতখান পল্টুনে ঘাট করতে পারছেনা। এতে আমাদের মালামাল নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। লঞ্চ পল্টুনে ঘাট করতে না পারায় কুলিরাও বেশি অর্থ দাবী করছে। এতে আমারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।
এ ব্যাপারে পল্টুনের ইজারদার মাকছুদুর রহমান বাহার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আজ কয়েক দিন যাবত আমার প্রায় ৩ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। ব্যাপক লোকসান গুণতে হচ্ছে প্রতিদিন। আমরা বিষয়টা লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এমভি ফারহান-১ উদ্ধারে এখনও কোন বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেতে পারেনি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি আমি এবং ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এমভি ফারহান-১ লঞ্চের ম্যানেজার ফারুক খান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লঞ্চটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি দুই-এক দিনের মধ্যে উদ্ধার করার কাজ সম্পূর্ণ হবে।
-এমএসএইচ/এফএইচ