সোমবার ● ১১ জুন ২০১৮
প্রথম পাতা » রাজনীতি » খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় উদ্বিগ্ন ড্যাব
খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় উদ্বিগ্ন ড্যাব
ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) উদ্বিগ্ন। তার চিকিৎসার বিষয়ে সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের আচরণে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।
ড্যাবের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের পক্ষে সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এক যৌথ বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের এ আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গ্রহীত অপরাধ। গত ৫ জুন বেগম খালেদা জিয়া মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন এবং ৫ থেকে ৭ মিনিট অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। তার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা গতকাল তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে
তার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছিল যা পরে মরাত্মক পরিণতির দিকে যেতে পারে। তাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার জন্য সকল সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম লিখিত পত্র পেশ করেছেন।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসনমূলক ও প্রকৃত বাস্তবতায় সাজাপ্রাপ্তের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণহীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া কোন সাধারণ ব্যক্তি নন। তিনি বাংলাদেশের ৩ বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং গণতন্ত্রের ইতিহাস ও ভোটের রাজনীতিতে জনপ্রিয়তায় বিশ্ব ইতিহাসে ক্রমাগত পরাজয়হীন সর্বোচ্চ ২৩টি আসনে বিজয়ের অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী বাংলাদেশের গণমানুষের অবিসংবাদিত নেত্রী ও দেশনেত্রী উপাধিপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একজন অনন্য ও একনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। পরিত্যাক্ত ও যে কোনো মানে বসবাসের অযোগ্য কনসানট্রেশন ক্যাম্পের সাথে তুলনীয় নির্জন কারাগারে তিনি যে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন, তাঁর প্রতি ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে এবং একে এক গভীর ও সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসাবে পরিগণিত করছে।
বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ। বয়সজনিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত একজন বর্ষীয়ান নারীর এই নির্জন মানবেতর করাবাস স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে, তা শুরু থেকেই সাধারণ মানুষকেও গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল। তাঁর ডায়াবেটিস
কিডনি ও মূত্রথলির সংক্রমণ হাঁটু ও সন্ধির প্রদাহসহ নানা রোগের যে একান্ত পরিচর্যা প্রয়োজন ছিল এই নির্জন পোকা-মাকড় বিচরিত কারাগারে এই ধরনের (চিকিৎসকদের পরিভাষায়) একজন বিশেষ পরিচর্যা সাপেক্ষ রোগীর সেবা প্রদান একরকম অসম্ভব।
আমরা চিকিৎসক হিসাবে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে ইতোপূর্বে সংবাদ মাধ্যমের বরাতে সংশ্লিষ্ট সকলের এই গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। দুর্ভাগ্য যে কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব আরোপ না করে গা-ছাড়া আচরণ প্রদর্শন করে আসছেন যা অবহেলার শামিল হয়ে উঠেছে। চিকিৎসা ও যথাযথ পরিচর্যার অভাবে এমন একজন গুরুতর অসুস্থ রোগীর সাধারণ পরিণতিতে যা হবার বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
গত ৫ জুন মঙ্গলবার তিনি প্রায় তিন সপ্তাহ জ্বরে ভোগা অবস্থায় হঠাৎ করে জ্ঞান হারান এবং মাটিতে পড়ে যান। তাঁর অন্যান্য রোগ-উপসর্গেরও অবনতি ঘটেছে। তিনি প্রবল ব্যথা ও ভারসাম্যহীনতা আক্রান্ত হয়ে ক্রমশ চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলছেন। ফলে তিনি এখন আর নির্দিষ্ট সাক্ষাৎকার কক্ষে এসে আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতেও পারছেন না। দিনের পর দিন তিনি বিদ্যুৎহীন পরিবেশে নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন পোকা-মাকড়ের কামড়ে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছেন। তিনি পুষ্টিকর খাবারের অভাবে দুর্বল ও পুষ্টিহীন হয়ে পড়েছেন। বিষয়গুলো তাঁর সাথে সম্প্রতি সাক্ষাৎ করে আসা পারিবারিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সৌভাগ্যবশত এ যাত্রায় তিনি মস্তিষ্ক উরুসন্ধি ও মেরুদণ্ডের ভয়ঙ্কর আঘাত এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো প্রাণনাশী জটিলতা থেকে সামন্যর জন্য রক্ষা পেয়েছেন।
এমন একটি আশংকা বহু আগেই করা হয়েছিল ও সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল। কারা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবজ্ঞায় এখন তা বাস্তবে পরিণত হল। আমরা আরও আশংকা ব্যক্ত করেছিলাম যে এ ধরনের বিপর্যয় বেগম খালেদা জিয়ার অন্ধত্ব ও নানাভাবে পঙ্গুত্ববরণসহ জীবনের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।
এ ঘটনা কারা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয় অবস্থা সে পরিণতির ঝুঁকিকে আরও সম্ভাব্য করে তুলেছে। বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত করে যে কারা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর যথাযথ চিকিৎসা ও পরিচর্যা বিষয়ে যুগপৎ উদাসীন ও অপারগ। এক্ষেত্রে আইনের বিধানের আনুকূল্য গ্রহণ করে মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচরাধীন হিসাবে তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করে তাঁর চিকিৎসার বিষয়টিকে নিজের উপর ছেড়ে দিয়ে আইনের শাসনে আস্থা ফিরিয়ে আনা ও মানবিক আচরণ প্রদর্শনের যে বিরল সময় এখন উপস্থিত হয়েছে আমরা বিশাস করতে চাই সরকার তার সুযোগ নিয়ে রাজনীতিতে প্রতিহিংসা বর্জন ও সৌজন্য প্রদর্শনের কৃষ্টি সংহত করবে।
জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এই অসহায় ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দেশ ও বিশ্ববাসীকে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করছে ও জনমনে আতঙ্ক জন্ম দিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক অপশাসনের ইঙ্গিত সুদৃঢ় করছে। জনগন যথার্থই বিশ্বাস করে যে গণতন্ত্র ছাড়া স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। গণতন্ত্রের শত্রু স্বাধীনতারও শত্রু। দেশবাসী ও বিশ্ববাসী এই অপার সম্ভবনার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ দেখতে চায়। আমরা আশা করি সরকার বিষয়টিতে সচেতন হবেন এবং অনতিবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকারকেই বহন করতে হবে।