শনিবার ● ১৯ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » চরফ্যাশন » মেঘনা -তেঁতুলিয়ায় ঝুঁকি নিয়ে ডেঞ্জার জোনে চলছে ছোট যানবাহন
মেঘনা -তেঁতুলিয়ায় ঝুঁকি নিয়ে ডেঞ্জার জোনে চলছে ছোট যানবাহন
এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন প্রতিনিধি: সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী‘র অভ্যন্তরীন ও দূরপাল্লার আন্তঃরুটে চলছে ছোট ছোট লঞ্চ-ট্রলার। কাল বৈশাখী মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এসব লঞ্চ চলাচলের কারণে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা সম্ভাবনা রয়েছে অন্যদিকে যাত্রীদের জীবন চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
অবৈধভাবে চলাচলকারী এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রশাসনের কোন নিয়ম-নীতি মানছেন না লঞ্চ মালিকরা। সরকারী সি-ট্রাক সার্ভিস ছাড়ার ডেঞ্জার জোনে এসব রুটে লঞ্চ চলাচল করায় যে কোন সময় দুর্ঘটনা আর প্রাণহানীর আশংকা করা হলেও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ থাকছেন নিশ্চুপ।
অন্যদিকে বিকল্প যান না দেয়ায় যাত্রীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব নৌ-যানে যাতায়াত করছেন।
সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন ঘাটে দেখা গেছেন, একটি ছোট লঞ্চ ঘাটে নোঙ্গর করা ঢালচর ও চরকুরী-মুকরির যাতায়াতের একমাত্র পথ চরকচ্ছপিয়ার ঘাট। একদিকে মালামাল উঠানো হচ্ছে, অন্যদিকে যাত্রীরা উঠছেন। অতিরিক্ত মালামাল আর যাত্রী, যেন ধারণ ক্ষমতার ৫/৭গুণ। কিন্তু ততক্ষণে নদী উত্তাল হয়ে উঠছিলো। আর এ উত্তাল মেঘানায় ডেঞ্জার জোনের মধ্যেই লঞ্চটি ছেড়ে যায়।
এ চিত্র দেখা যায় এই অঞ্চলের মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর অন্তত ১০/১২টি রুটে। সরকার ঘাটগুলোতে ইজারা বসিয়ে রাজস্ব আয় করলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা। এসব অভিযোগ যাত্রীদের।
যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন কাল বৈশাখীর বর্ষা মৌসুম, প্রতিদিনই মেঘনা-তেঁতুলিয়ার ভয়াংকর উত্তাল, কিন্তু তারপরেও এ উত্তাল নদী উপেক্ষা করে চরম ঝুঁকি নিয়ে যেন এভাবেই চলছে ছোট ছোট লঞ্চ- ট্রলার। ঝূঁকিপূর্ণভাবে এই পারাপার দেখলেই বোঝা যায়, যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
বিআইডব্লিউটিএ সুত্র জানা যায়, সরকার নৌ দুর্ঘটনা রোধে প্রতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৮ মাস সময়কে মেঘনার-তেঁতুলিয়ার ডেঞ্জার জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এ সময়ে নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় সি সার্ভে ছাড়া অন্য চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারী করেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারী নিয়ম তোয়াক্কা না করেই ঝূঁকিপূর্ণভাবে লঞ্চগুলো চলছে। প্রতিদিন এখন থেকে মনপুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এসব লঞ্চ গুলো অভ্যন্তরীন রুটে ছাড়াও সামরাজ থেকে ২টি, দুলারহাট থানা ধীন নীলকমল ঘোষেরহাট, ভায়নীর খাল থেকে মজিবনগর, দক্ষিণ আইচার কচ্ছপিয়া থেকে চরকুুকরী-মুকরি, ঢালচর, নিঝুঁমদ্বীপ ও চরপাতিলা, ফলে চরম ঝূঁকি নিয়েই যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন।
বে-সরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট্রের (এনজিও) কর্মী রাশিদা আক্তার বলেন, লঞ্চগুলো একদিকে অতিরিক্ত মালামাল তুলছে, অন্যদিকে ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী তুলতে। এতে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
যাত্রী আঃ রহিম মাঝি বলেন, অনেক জোর পূর্ব অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করছে ছোট যাত্রী বাহী লঞ্চগুলো। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়না। নুরুল ইসলাম বলেন, বিকল্প নৌ-যান না ধাকায় আমরা এসব লঞ্চে যাতায়াত করছি। কিন্তু জীবন তো আমাদের হাতে মুঠোয় রয়েছে যাচ্ছে।
ছকিনা বেগম বলেন, আমরা জানি যে কোন সময় ঝড় হলে কিংবা নদীতে অতিরিক্ত মাত্রায় উত্তাল হলেই এসব লঞ্চ ডুবে যাবে। কিন্তু কিছুই করার নেই, বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া প্রশাসন এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা।
বিভিন্ন সুত্র থেকে তথ্যনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে ১২টি রুটের মধ্যে যেসব রুটে বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বেশী ভংকর সেগুলো হচ্ছে, ইলিশা-মজুচৌধূরীররহাট, ভেলুমিয়া-ধুলিয়া, হাকিমুদ্দি-তজুমদ্দিন, দক্ষিণ আইচার কচ্ছপিয়া-ঢালচর-কুকরী-মুকরী, বেতুয়া-মনপুরা, সামরাজ-মনপুরা-চর জহির উদ্দিন, নাজিরপুর-কালাইয়া বেতুয়া-আলেকজেন্ডার, মনপুরা-হাতিয়া, দৌলতখান-আলেকজেন্ডার-মনপুরা, লক্ষীপুর।
সাথে অন্য দুর্গম এলাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌ-পথ,তাই যাত্রীদের নৌ-যান দিয়েই যাতায়াাত করতে হয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব রুটে ফিটনেসবিহনীন ছোট ছোট লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে পারাপার হলেও যেন মাথা ব্যাথা নেই তাদের।
এ বিষয়ে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে চলাচলকারী এসব লঞ্চের বিরুদ্ধে নেয়ার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিআডব্লিটিএ ট্রফিক বিভাগের কর্মকর্তাগণ বিষয়টির উপর নজরদারি রাখছে।
এদিকে, ডেঞ্জার জোনে অবৈধ লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে এসব রুটে সরকারী সি ট্রাক কিংবা নিরাপদ লঞ্চ দেয়ার দাবী জানিয়েছে যাত্রীরা।
-এফএইচ