বৃহস্পতিবার ● ২৬ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » রাজনীতি » যে কারণে দুদকের তদন্তে বিএনপি নেতারা
যে কারণে দুদকের তদন্তে বিএনপি নেতারা
ডেস্ক: জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, বিদেশে অর্থ পাচার, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে দুই মাসের ব্যবধানে হঠাৎ করেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ফেঁসে যাচ্ছেন বিএনপির নেতারা। মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাসে দলটির প্রথম সারির ১১ জন নেতার বিরুদ্ধে পৃথক চারটি দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানের নেমেছে দুদক।
অবশ্য বিএনপিতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার দুদককে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রানি করাতে চাইছে।
দুদকে বিএনপির নেতাদের চারটি অভিযোগের অনুসন্ধানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিএনপির শীর্ষ ৮ নেতার বিরুদ্ধে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল বিএনপির শীর্ষ ৮ নেতাসহ ১০ জনের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার সন্দেহজন লেনদেন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে তাদের হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ওই ১০ জন হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম মোর্শেদ খান, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, এম মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
মির্জা আব্বাস ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন অবৈধ লেনেদেসহ মানি লন্ডারিং করেন। এই কারণে মাহবুবের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে দুদক।
নিজের বিরুদ্ধে দুদকের আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘এটা একেবারে মিথ্য-বানোয়াট অভিযোগ। যেখানে আমার ডাচ বাংলা ব্যাংকে আমার বা আমার সন্তানের কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। সেখানে কিভাবে ওই ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করলাম।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে রাখতে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করেছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাদের দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সরকার দুদককে দিয়ে হয়রানি করাচ্ছে।’
তাবিথ আওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
শীর্ষ ৮ নেতার মধ্যে তাবিথ আওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান করলেও অন্য একটি অভিযোগে অনুসন্ধানের জন্যও তাকে তলব করেছে দুদক। গত ২৪ এপ্রিল তারিখে দুদকের চিঠিতে অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের অভিযোগে তাকে ৮ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে তাবিথ আওয়ালের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
বিএনপির ২ সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।
তাদের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ থেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও ঠিকাদারি কাজে ফাঁকি দিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ ব্যাপারে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, জীবনে সিগারেট খাই না। অথচ আমার বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকি টেন্ডারবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে, যা হাস্যকার।
আমরা ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে, ক্ষমতার বাইরে থেকে কিভাবে টেন্ডারবাজির সাথে জড়িত থাকতে পারি?
তিনি বলেন, দুদকে আমার বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু আমার সকল সম্পত্তি মিলিয়ে ৫ কোটি টাকাও হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সামনে নির্বাচন আমাদেরকে অংশ নেওয়া বাধাগ্রস্ত করতেই দুদক এমনটা করছে।’
ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান:
শুল্কমুক্ত কোটায় আমদানি করা গাড়ি বিক্রি করে ২ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়াসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। গত ২৩ এপ্রিলে দুদকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে দুদক সূত্রে জানা যায়, মো. শাহজাহান নোয়াখালি-৪ আসনে সংসদ সদস্য থাকাকালে সংসদ সদস্য কোটায় শুল্কমুক্ত কোটায় গাড়ি আমদানি করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তা বিক্রি করে ২ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু করে।
এব্যাপারে মো. শাহাজাহান বলেন, ‘দুদক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেনি। তারা বিরোধী রাজনৈতিক দলকে হয়রানি করছে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আইনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক আমাকে তলব করেছিল। বিভিন্ন বিষয় জানতে চেয়েছিল। আমার অবস্থা থেকে ব্যাখ্যা দিয়েছি।
বিএনপির ৮ নেতার ব্যাংক লেনদেনের জের ধরে দুদকের অনুসন্ধানের ব্যাপারে সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কে কি বললো, এটা আমাদের দেখার বিষয় না। অভিযোগ এসেছে, তদন্ত হবে। তদন্ত শেষেই সবকিছু জানা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলেই আমরা তদন্ত করি। আমার বা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে তদন্ত হবে। আর অভিযোগ আসলেই সবকিছু সত্য নাও হতে পারে। কাজেই এটাকে রাজনৈতিক ইস্যু বলা যাবে না।’
নির্বাচনের বছর বলে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে এমন প্রশ্ন করলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের কাছে নির্বাচন কোনো ইস্যু না। নির্বাচন যাদের কাছে ইস্যু, এবিষয়টি তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। আমাদের কাছে সব বছরই সমান বছর। সব দিনই সমান দিন।’
এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু বিএনপি বলে কথা নয়, একাধিক সংসদ সদস্যের অভিযোগের অনুসন্ধান করছি এবং জিজ্ঞাসাবাদও করছি।’
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ট্রাস্টিজ বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘দুদক তার নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে থাকে। সেক্ষেত্রে কখনো কখনো বেশি সক্রিয় দেখা যায় আবার কখনো কখনো তেমনভাবে কাজ লক্ষ্য করা যায় না।’
বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অভিযোগ আনা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা বলা সম্ভব না। তবে তদন্ত করলে শেষে সেটা বুঝা যাবে।’
এ ব্যাপারে বিস্তারিত না জেনে মন্তব্য করা কঠিন বলে মনে করেন তিনি।