বুধবার ● ১৮ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » ভোলায় দু’দফায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে
ভোলায় দু’দফায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে
ফরহাদ হোসেন: ভোলায় একই দিনে দু’দফায় ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিছে বসবাস করছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ও রাতে দু’দফার কালবৈশাখী ঝড়ে জেলার লালমোহন ও মনপুরায় কালবৈশাখীর তা-বে ৫০ টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৫ শতাধিক ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে বিধ্বস্ত গাছপালা উদ্ধার ও ঘরের উড়ে যাওয়া চালা মেরামত করতে না পারায় বহু পরিবারের দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। আবার কেউ কেউ রাতে আশ্রয় নিচ্ছে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বরাদ্দ করা হলেও তা এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে পৌছায়নি। ঝড়ে বিদ্যুত লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় মঙ্গলবার বিকাল থেকে এ দু’উপজেলা এখনো অন্ধকারে।
লালমোহন পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাবুল মিয়া জানান, হঠাৎ করে ঝড় এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিলো। এখন আমি কি ভাবে আবার ঘর তুলবো তা ভেবে পাচ্ছি না।
একই উপজেলার মুহিমুনা নয়ন বলেন, ঝড়ের পর এখন পর্যন্ত সরকারী কিংবা বেসরকারী কোন পক্ষ থেকেই কোন প্রকার সাহায্য পাইনি।
ক্ষতিগ্রস্ত ফারুক বলেন, আমি ব্যাক্তিগত ভাবে একজন অসুস্থ মানুষ। নিজেই চলতে পারি না। চিকিৎসা চলে না। তার পরেও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পড়ে যাওয়া ঘর মেরামতের কাজ করছি।
এব্যাপারে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান রুমি জানান, মঙ্গলবারের ঝড়ে মায়ানগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এছাড়া আরো ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৩০ টি বিদ্যালয় লেখা পড়া ব্যাহত হচ্ছে। লালমোহন সদর হাসপাতালে আহত ২ শিক্ষার্থীর চিকিৎসা চলছে।
তিনি আরো জানান প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের জন্য নগদ ৩ হাজার টাকা ও ১ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ করাসহ গৃহনির্মাণ সামগ্রী চেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নিহত মো. শুক্কুর আলীর পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে তার মৃতদেহ মাগুরায় পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া মনপুরায় মঙ্গলবার মহিলা মাদ্রাসাসহ ৪টি ইউনিয়নের ২ শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের উত্তর সাকুচিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসাটির সম্পুর্ণ টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়ার কোন ব্যাবস্থা নেই। ক্লাসরুমের অভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ক্লাসরুম সম্পুর্ণ ভেঙ্গে ধুমরে মুচড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া বিছিন্ন চর চরনিজাম ওকলাতলির চর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে নৌকা ট্রলারসহ শতাধীক গাছপালার ক্ষতি হয়েছে। রবি শস্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়ে। ঝড়ে মাদ্রাসা, দোকানঘর, বসত ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাজির হাট ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড দাসের হাট বেঁড়ী পাড়ের শ্রীকৃঞ্চ দাস বলেন, ঝড়ে ঘর পরে যাওয়ায় রাতে আত্মীর ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। ছেলে মেয়ে নিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে জীবন যাপন করছি।
এব্যাপারে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল আজিজ ভূঁঞা বলেন, ঝড়ে উপজেলায় মাদ্রাসা সহ বসত ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। ত্রাণ আসলে যথা সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে পৌছে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে লালমোহন ও মনপুরায় কালবৈশাখীর তা-বে ৫০ টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৫ শতাধিক ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এসময় ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকা থেকে পরে নিহত হয়েছেন এক পাটখড়ি ব্যবসায়ী। গাছপালা ও ঘরের চালা উপড়ে পড়ে আহত হয়েছেন ৬ শিক্ষাথী সহ অন্তত ১৮ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২শ একরের বেশি জমির ফসল। ভোলা জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ আলম সিদ্দিক বুধবার ভোলার লালমোহন উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
-এফএইচ