রবিবার ● ২১ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » আইন উপেক্ষা করে চলছে লঞ্চ রোটেশন
আইন উপেক্ষা করে চলছে লঞ্চ রোটেশন
ইকরামুল আলম: নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খাঁন ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নির্দেশ উপেক্ষা করেই চলছে ভোলা-ঢাকা নৌ-রুটের লঞ্চ রোটেশন। এমনকি আদালত রোটেশন প্রথা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করেই ভোলার লঞ্চ মালিকরা রোটেশন প্রথা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে দ্বীপ জেলা ভোলার ২৫ লক্ষ মানুষকে এক মাত্র যোগাযোগ মাধ্যম নদী পথে ভোগান্তীতে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়িত। ভোগান্তী থেকে রেহাই পেতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে জানালে তিনি গত বছরের ১১ নভেম্বর নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক ভোলায় সফর কালে তাদেরকে বিষয়টি জানান। সে অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য ভোলার বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিবহন পরিদর্শক নাসিম আহমেদকে নির্দেশ দেন। সে ওই দিনেই ভোলা-ঢাকা নৌ-পথে রোটেশন প্রথা ও যাত্রী দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক বরাবর একটি লিখিত চিঠি পাঠায়। কিন্তু ওই চিঠির প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হতে চললেও আজও রোটেশন প্রথা বন্ধ হয়নি।
সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর রোটেশন প্রথা বন্ধে যাত্রীদের পক্ষে ব্যবসায়ী মো. রুহুল আমিন কুট্টি বাদী হয়ে ভোলার চিফ জুডিসিয়াল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কেনো লঞ্চ মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে মর্মে সমন জারি করে। ৩০ নভেম্বর ভোলার সচেতন নাগরিক কমিটির ব্যানারে রোটেশন প্রথা ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের প্রতিবাদে মানববন্ধনও করেন ভোলার সর্বস্তরের মানুষ।
এছাড়া গত ২২ ডিসেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভোলায় সফরকালে জেলা প্রশাসক মোহা. সেলিম উদ্দিনকে রোটেশন প্রথা বন্ধের প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
এ সকল কিছুর পরেও ভোলার লঞ্চ মালিকপক্ষ রোটেশন চালু রেখেছেন। এমনটি একটিদের জন্যও এ রুটে রোটেশন বন্ধ হয়নি। এত কিছুর পরেও কোন অলৌকিক শক্তির বলে রোটেশন প্রথা চালু রেখেছেন এ নিয়ে ভোলার মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
শুধু তাই নয়, চলতি মাসের ১০ তারিখে লঞ্চ মালিক পক্ষ ভোলা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ভোলা-ঢাকা নৌ-পথে রোটেশন নেই মর্মে লিখিত জবাব দেয়। আদালত সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিষয়টি ভোলার অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষেকে তদন্তের করে রিপোর্ট প্রদানের আদেশ দেয়।
কিন্তু বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় ভোলা খেয়া ঘাটে (লঞ্চ ঘাট) গিয়ে দেখা যায় ভোলা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে চারটি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এমভি ক্রিষ্টাল ক্রুজ ও এমভি কর্ণফুলি-১০ এ দুইটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এবং এমভি কর্ণফলি-১১ ও এমভি বালিয়া ঘাটে বিড়ানো ছিলো।
এমভি কর্ণফুলি-১০ লঞ্চের যাত্রী মো. মেহেদী হাসান, মনিরসহ প্রায় ১০জন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ভোলা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে চারটি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আজ দুইটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এতে করে কন কনে শীতের মধ্যে যাত্রীরা ভোগান্তী পড়তে হচ্ছে। প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী চারটি করে লঞ্চ ছেড়ে গেলে যাত্রীদের এ দুর্ভোগে পড়তে হত না।
ভোলা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও লঞ্চের যাত্রী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ভোলার লঞ্চ মালিক পক্ষ কোনো নিয়ম নীতির তোরক্কা না করে আইনের প্রতি বৃধ্বাঙ্গুলী দেখিয়ে রোটেশন প্রথা চালু রেখেছে। এ কারনে প্রতিদিন শত শত যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা ভোগান্তীতে পড়তে হচ্ছে। তারা রোটেশন করে কেবিনের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে খামখেয়ালিভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রান না পেলে ভবিষ্যতে এদের মন মতই ভোলার মানুষ যাতায়াত করতে হবে। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্যেও কোন ক্ষমতা বলে তারা এ রোটেশন প্রথা চালু রেখেছেন। তা প্রশাসনের দেখা উচিত।
রোটেশনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আইনজীবী এ্যাডভোকেট গোলাম মোরশেদ কিরণ তালুকদার বলেন, ভোলার ২৫ লাখ মানুষকে জিম্মি করে লঞ্চ মালিক পক্ষ যে অবৈধ রোটশেন প্রথা চালু রেখেছে তা আমরা আইনিভাবে জবাব দিব। তারা আদালতে ভুল তথ্য দিয়ে তালবাহানা করে আদালতের সময় ক্ষেপন করছে। ভোলার মানুষ অতি শ্রিগ্রই তাদের এ অবৈধ রোটেশন প্রথা ভেঙে তাদের অধিকার নিশ্চিত করে উচিত জবাবা দিবে বলে আমরা আশা করি।
এব্যাপরে ভোলার লঞ্চ মালিক আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীরকে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
-এফএইচ