বৃহস্পতিবার ● ২৪ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলায় সরকারি জমিতে ঘর তুলে স্বাস্থ্য কেন্দ্র দখল, উপেক্ষিত প্রশাসন
ভোলায় সরকারি জমিতে ঘর তুলে স্বাস্থ্য কেন্দ্র দখল, উপেক্ষিত প্রশাসন
এইচ এম নাহিদ: ভোলায় সরকারী জমি দখল করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র দখল নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী একদল ভূমিদস্যুরা। প্রশাসনের আদেশ উপেক্ষা করে ক্ষমতাসীনদের সাথে রাফাদফা করে জোর পূর্বক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মূল ফটক দখল নিয়েছে। যার ফলে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই ইউনিয়নের ৩২ হাজার মানুষ। সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ব্যাংকের হাট বাজারস্থ পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটির জমি দখল করে নেয়।
সরজমিন ঘুরে জানা যায়, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি ১৯৮৩ সনের তৎকালীন সরকার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ১০ হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য একতলা একটি ভবন নির্মাণ করে ৮৪ সনের জানুয়ারী মাসে ভোলা জেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র’র কার্যালয়কে বুঝিয়ে দেয়। ভোলা সদর উপজেলা থেকে ভেদুরিয়া ইউনিয়নটি এক প্রকার বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৯৯৯-২০০০ সনে ভেদুরিয়া-ভোলার সড়কটি নির্মিত হলে ওই হাসপাতালের সামনে পিছনে যত সরকারী জমি ছিল তা স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু আল আমিন, সিরাজ, মোজাম্মেল কসাই, আমির মাতাব্বর ও সালাউদ্দিন জবর দখল নিয়েছে। এদের কারনে বর্তমানে হাসপাতালটির মূল ফটক অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এতে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৩২ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করে বর্তমান ইউনিয়নের মানুষ ভুলেই গেছে ভেদুরিয়ার পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটির কথা। এমনই একটি চিত্র পাওয়া যায় ঐ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার জাকির হোসেনের কাছ থেকে। তিনি বর্তমানে তার স্বপরিবার সহ হাসপাতালে থাকেন। তিনি লুঙ্গি পড়ে কোমরে গাঁমছা বেঁেধ হাসপাতালটি পাহাড়া দিচ্ছেন।
দখলদারদের সাথে আলাপ করলে তারা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য প্রদান করেন। তারা এও বলেন চেয়ারম্যান সাহেব বললে আমরা জমি ছেড়ে দেব।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম, আমির হোসেন, মোঃ মনির হোসেন, আব্দুল মান্নান সহ অনেকের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আগের রাস্তাটি এখন সম্পূর্ণ অচল, মূল রাস্তা হওয়ার কারনে হাসপাতালটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। যদি মূল সড়কের সাথে হাসপাতালের রাস্তা হয় তাহলে এই সেবা কেন্দ্রটি আবার স্বরুপে ফিরে আসবে। আর তার জন্য দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। যদি চেয়ারম্যান সাহেব বিষয়টি গুরুত্ব দেন তাহলেই সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
হাসপাতালের কর্মরত ডা. জাকির বলেন, ভাল রাস্তাঘাট না থাকায় এখানে এখন আর তেমন কোন রোগী আসেনা। মেইন রোডের সাথে হাসপাতালের রাস্তা সংযোগ করার জন্য আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসার ও সহকারী ডিডি মহোদয় এবং এসিল্যান্ড কর্মকর্তারা দখলদারদের সর্তক করলেও তারা বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে সরকারী জমি অবমুক্ত করবেনা বলে জানায়।
স্থানীয় চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম মাস্টার বলেন, বর্তমানে ক্লিনিকের সড়কটি অকেজো। আমরা নতুন রাস্তা করার জন্য দখলদারদের সরকারী জমি অবমুক্ত করার কথা বলি কিন্তু তারা আমার কথা শুনছেনা। নতুন রাস্তাটি না হলে হাসপাতালটির সেবা থেকে আমার ইউনিয়নের ৩২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমি অভিলম্ভে এই ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে হাসপাতালের নতুন রাস্তাটি অবমুক্ত করার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করবো।
সদর উপজেলার ভূমি কমিশনার মো. রুহুল আমিনের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, সরেজমিনে গিয়ে দখলদারদেরকে সরকারী জায়গা অবমুক্ত করার জন্য আগস্টের ১৫ তারিখ সময় দেয়া হয়েছে তারা মৌখিক আবেদন করলে আগস্টের ২৫ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এর পরেও যদি দখলদাররা জমি অবমুক্ত না করে তাহলে ভূমি আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাস্থা নেয়া হবে। তবে স্থানয়ী চেয়ারম্যান যদি আমাদের কাজে সহযোগীতা করেন, তাহলেই তা সম্ভব হবে।
ভোলা জেলা পরিবার পরিকল্পনার ডেপুটি ডিরেক্টর মাহমুদুল হক আজাদ বলেন, হাসপাতালটির সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা ও রোগীদের স্বাস্থ্য সেবার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনার সভাপতি ও চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম মাস্টারকে অবগত করলে তিনি আমাকে আস্বস্থ্য করেছেন যে অভিলম্ভে দখলদারদের উচ্ছেদ করে হাসপাতালের অবকাঠামত উন্নয়ন করা হবে।
-এফএইচ