শুক্রবার ● ২ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » ফেরি সার্ভিস ব্যাহত, দুই পাড়ে আটকা পড়েছে দুই শতাধিক যান
ফেরি সার্ভিস ব্যাহত, দুই পাড়ে আটকা পড়েছে দুই শতাধিক যান
বিশেষ প্রতিনিধি • গত কয়েকদিন ধরে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি সার্ভিস ব্যাহত হচ্ছে। ইলিশা ফেরিঘাটে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে অন্তত শতাধিক মালবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। একইভাবে ভোলা ও লক্ষ্মীপুর এলাকার দুই পাড়ে দুই শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে। এ রুটে কনকচাপা, কৃষানী ও কুসুমকলী নামের তিনটি ফেরি নিয়মিত চলাচল করছে। ফেরি চলাচলে চরম গাফিলতির কারনে এমন যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ট্রাক চালকরা।
শুক্রবার বিকেলে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত শতাধিক মালবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন। যার অধিকাংশ ট্রাকে ছিল ধান, পাট, সবজীসহ কাঁচা মাল ও বিভিন্ন পণ্য। রাস্তার এক পাশ চাপিয়ে সারিবদ্দভাবে লাইনে দাড়িয়ে রয়েছে এসব মালবাহী ট্রাক। অনেক ট্রাকের কাঁচা মাল পঁচে যাচ্ছে বলে জানান ট্রাকচালকরা। ট্রাকের চালক ও হেলপাররা গত কয়েকদিন ধরে ইলিশা ফেরিঘাটে অবস্থান করে স্থানীয় কয়েকটি হোটেলে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ ২১ জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের এ ফেরি সার্ভিস। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে করে ফেরিঘাটে আটকে পড়া ট্রাকের ভেতর ধান, পাট, সবজী ও শুটকি মাছসহ কোটি কোটি টাকার কাঁচা মাল পঁচে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য।
ইলিশা ফেরিঘাটে কথা হয় নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী সেতুভাঙা এলাকার ট্রাকচালক মাসুম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ধানবোঝাই ট্রাক নিয়ে তিনি গত চার দিন আগে ভোলায় আসেন। এসে ইলিশা ফেরিঘাটে আটক পড়ে যান। তিনি আরো বলেন, এখানে তার ধান থেকে চারা গজিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফেরি নিয়মিত চলাচল না করার কারনে তিনি চার দিনেও গন্তব্য স্থানে যেতে পারছেননা। খুলনার ট্রাকচালক চাঁন মিয়া জানান, গত চার দিন ধরে ইলিশা ফেরিঘাটে অবস্থান করছেন। চাঁন মিয়া বলেন, তিনি খুলনা থেকে পাটবাহী ট্রাক নিয়ে ভোলায় আসেন। এসে ইলিশা ফেরিঘাটে আটকা পড়েন। চট্টগ্রাম হলিশহরের ট্রাকচালক রুবেল জানান, ঢাকা থেকে টাইলসবাহী ট্রাক নিয়ে তিনি ভোলায় এসেছেন। গত দুই দিন আগে ইলিশা ফেরিঘাটে এসে আটকা পড়েছেন। মাসুম, চাঁন মিয়া আর রুবেলই শুধু নয়, তাদের মত বহু ট্রাকচালক গত কয়েকদিন ধরে ইলিশা ফেরিঘাটে এসে আটকা পড়েন। ফেরি চলাচল বিলম্ব হওয়ার কারনে ট্রাক শ্রমিকরা এখানে বসে রয়েছেন। আর বসে বসে টাকা খরচ করে হোটেলে ভাত-পানি খাচ্ছেন। তারা জানান, ফেরি চালকের গাফিলতির কারনে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া ফেরির চালকদের গাফিলতির কারনে তারা সঠিক সময়ে গন্তব্য স্থানে যেতে পারছেননা। ফেরির চালক তাদের ইচ্ছামত ফেরি চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করছেন ট্রাক চালকরা। ফলে ভোলা ও লক্ষ্মীপুর ফেরিঘাটের দুই পাড়ে বিভিন্ন পণ্য ও মালবাহী ট্রাকসহ দুই শতাধিক যান আটকা পড়েছে। এতে বহু পণ্যের ক্ষতি হচ্ছে। পচে যাচ্ছে ধান, পাটসহ বিভিন্ন কাঁচা মাল। বিশেষ করে যেসব ট্রাকে কাঁচা মাল রয়েছে সেসব মাল পচে যাচ্ছে বলে জানান ট্রাকচালকরা।
ফেরি চলাচলে বিলম্বের কথা স্বীকার করে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরির ব্যবস্থাপক আবু আলম কালের কন্ঠকে বলেন, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় “মোরা”র কারনে ওই দিন এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এ ছাড়া বৃহস্পতিবারও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে ফেরি চলাচল অনেকটা ব্যাহ হচ্ছে। তাই যথাসময়ে ফেরি আসা-যাওয়া করতে পারছেনা। একটু বিলম্ব হচ্ছে। এতে ভোলা ও লক্ষ্মীপুর এলাকার দুই পাড়ে বহু যানবাহন আটকা পড়েছে। তিনি আরো বলেন, এ রুটে তিনটি ফেরি নিয়মিত চলাচল করছে। এ রুটে অন্তত চারটি ফেরির প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
-শিএস/আর আই