মঙ্গলবার ● ১৪ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » কৃষি » চরফ্যাশনে সবুজ গালিচায় তরমুজের ঢেউ, পানিতে বিনষ্ট দেখেনা কেউ
চরফ্যাশনে সবুজ গালিচায় তরমুজের ঢেউ, পানিতে বিনষ্ট দেখেনা কেউ
এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশন প্রতি বছরের মত এবার আর সবুজ গালিচায় তরমুজের ‘ঢেউ’ বলা মশকিল হয়ে পড়েছে। প্রবল বর্ষণে হচ্ছে বিনষ্ট দেখেনা কেউ। গতবছর ফাগুনের শেষ ও চৈত্রের প্রথমই ছিল সবুজ তরমুজের সেই ‘ঢেউ। দেখে আনন্দে ভাসছিল চরফ্যাশনের চাষিরা। আগাম জাতের তরমুজ চাষে ভালো ফলন আর বেশি দাম পেয়ে এখন তাদের মুখে তৃপ্তি এবার গুড়ে বালি। আমন ধান কাটার পর অগ্রহায়ণ মাস থেকে আগাম তরমুজ চাষে ঝুঁকে চাষিরা।
তিন মাস পর ফাল্গুনের শেষের দিকে এখানকার তরমুজ পরিপক্ব হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ছুটে আসে পাইকাররা। আর ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে ভোলার মিষ্টি তরমুজ, ভোলার তরমুজ বলে ঢাক-হাক দিয়ে বিক্রি করতো পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা। সেই ঢাক ও হাক চলতি মৌসুমে দেয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন চাষীরা।
সরেজমিন নুরাবাদ, আহম্মদপুর ও বিছিন্ন দ্বীপ মজিব নগরসহ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েক‘শ একর বেলাভূমির সংরক্ষিত ক্ষেতে বড় বড় সবুজ তরমুজ লালের অপেক্ষমান। কিছু ক্ষেতের মাঝখানে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে সার্বক্ষণিক পাহারায় আছেন একাধিক পাহারাদার। শত চেষ্টা করেও পাহারাদারের চোখ গলিয়ে তরমুজ ক্ষেতে কেউ ঢুকতে পারবেনা এমন কৌশল তৈরী করেছে কৃষক।
হাতে হাতে ট্রলি থেকে তরমুজের প্রখর রোদে সড়কের দু’সাড়িতে তরমুজের স্তুপ ছিল সাধারণ মানুষেল নজর কাড়ার মত। নদীপথে নৌকা ও ট্রলারেও ছিল সবুজ তরমুজের ঢেউ। আহম্মদপুর গ্রামের তরমুজ চাষী আলাউদ্দিন বলেন, এ মৌজায় ১০০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। এবার তরমুজ চাষ, সার, ওষুধসহ সার্বিক আমার খরচ হয়েছে ৭২ হাজার টাকা। টানা ৪দিন বর্ষায় আমার খেতের তরমুজ খেতে পানি থৈ থৈ করছে। ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষাবাদ করলেও এখন বুকে বালিশ দিয়ে শুয়ে আছি। খেতের দিকে তাকালে মনে হয় আমার কিছু নেই জীবন শূণ্য হয়ে গেছে।
এর মধ্যে পাশের মালিকের তিন একর জমির তরমুজের দাম ওঠে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। আরও দাম বাড়ার আশায় দর কষাকষি চলেছিল। ফাগুনের বৃষ্টিতে ওই সবুজ তরমুজ ক্ষেতেই পচে গেছে। অকাল বৃষ্টি তার স্বপ্নে সমাধি ঘটায়।
প্রায় ৪ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেন নুরাবাদ গ্রামের কৃষক সিরাজ উদ্দিন পলোয়ান। সোমবার সকালে ক্ষেতে গিয়ে পানিতে ডুবে থাকা তরমুজ দেখে সংজ্ঞা হারান ইব্রাহীন নামক জনৈক কৃষক। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের মাঠ পরিদর্শন এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে চরফ্যাশন উপকূলের রবিশস্যের ৮০-৯০ ভাগ ধ্বংস হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা। যে ক্ষতি এখানকার গ্রামীন অর্থনীতির উন্নয়নে বেঘাত ঘটবে। শুধু তরমুজ চাষীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এ ছাড়াও চীনাবাদাম, মুগ, ফেলন, খেসারি, মরিচ, গোলআলু, মিষ্টিআলু, পিঁয়াজ এবং রসুনের মতো শস্য সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবজি খামারগুলো ৬০ ভাগের উপরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
উত্তর মাদ্রাজ গ্রামের বিষমুক্ত সবজি চাষী সোলায়মান পান্নু জানান, তার ২০০শতক জমিতে লাগানো খেশারী মুগ ও পেয়াজ সম্পূর্ণ রবিসশ্য বিনষ্ট হয়েছে। সাধারণ মানুষকে ইতিপূর্বে বিষমুক্ত ফুল কপি বাধাকপি, টমেটো ও কাচা মরিচ খাওয়াতে পেরেছি।
চরফ্যাশন কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ, ৩ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে গোলআলু, ৬৮০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু, ১৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম, ১২ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে মুগডাল, ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ফেলডাল, ৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে খেসারিডাল, ১২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ, ২৯৫ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ, ৩২৫ হেক্টর জমিতে রসুন এবং ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি আবাদ করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোতোষ সিকদার বলেন, উপজেলার মধ্যে তরমুজ ৯০ভাগ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বাকী রবিশস্য ৩০-৪০ভাগ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
-এফএইচ