সোমবার ● ১৩ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » কৃষি » টানা বৃষ্টিতে ভোলায় আলু চাষীরাদের মাথায় হাত
টানা বৃষ্টিতে ভোলায় আলু চাষীরাদের মাথায় হাত
এম.শরীফ হোসাইন: তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে ভোলা সদর ও চরফ্যাশন উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৩০ হেক্টর জমির আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ভোলা সদরে ৩০ হেক্টর এবং চরফ্যাশনে ১ হাজার হেক্টর রয়েছে। এতে লোকসানের মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আলু চাষীরা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে জেলা সদরের রাজাপুর ও ইলিশা ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমির অন্তত ৫শ’ টন আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে চরফ্যাশন উপজেলার নীলকমল, নুরাবাদ, আবু বকরপুর, ওসমানগঞ্জ, আমিনাবাদ, আলসলামপুর, কলমী, নজরুল নগর ও মুজিবনগরে ১ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে।
ভোলা সদর কৃষি অফিস জানায়, এ বছর সদর উপজেলার ১২শ’ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। কয়েকদিনে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির আলু তোলা হয়ে গেছে। বাকী ২শ’ হেক্টরের আলু বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৫/৩০ হেক্টরের আলু। জেলায় উপযোগী আবহাওয়ায় প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫ টন আলু উৎপাদন হয়। সে হিসেবে টাকার অংকে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকার আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি অফিস জানায়। বৃষ্টিতে ভোলায় ১ হাজার ৩০ হেক্টর জমির আলু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইলিশা ইউনিয়নের আলু চাষি নুরে আলম জানান, এ বছর তিনি ১০ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। এর মধ্যে ভাইরাসে ৫ একর জমির আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩ একর জমির আলু বিক্রি করলেও বাকী ২ একরের আলু এখনও উত্তেলন করা হয়নি। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে এক একর আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা টাকার অংকে প্রায় ২ লাখ টাকা।
চর আনন্দ গ্রামের চাষি সিরাজ ও রহিম বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আলু আবাদ করেছি, কিছু জমির আলু বাজারে বিক্রি করলেও বৃষ্টিতে খেতের অনেক আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আলু চাষিরা জানান, দাম ওঠা নামার কথা বিবেচনা করেই আলু উত্তোলন করা হয়। অনেকেই বাজারদাম ভালো পাওয়ার আশায় খেত থেকে আলু তোলেননি। কিন্তু তিনদিনের বৃষ্টিতে আলু নষ্ট হয়ে গেছে। এ মৌসূমে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা দরে এবং খুচরা বাজারে ১২ থেকে ১৫ টাকা। প্রতি বছরই জেলার উৎপাদিত আলু বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়ে আসছে।
ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সদরের বেশিরভাগ আলু খেত থেকে তোলা হয়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ২শ’ হেক্টর আলু আক্রান্ত হলেও তার মধ্যে ২০ হেক্টরের আলু বেশি ক্ষতি হতে পারে।
চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি অফিস জানান, এ বছর উপজেলায় ৩ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকদিনে ৮শ’ হেক্টর জমির আলু উত্তোলন করা হয়েছে। বাকি আলু উত্তোলন করার আগেই বৃষ্টি শুরু হয়। এতে এক হাজার হেক্টর জমির আলু নষ্ট হতে পারে।
দুলারহাট, নুরাবাদ ও নীলকমল ইউনিয়নের রবি শষ্যের জমি যেন ছোট নদীতে পরিণত হয়েছে। সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানান, বৃষ্টির জন্য তাদের এখন মাথায় হাত। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সবাই। ক্ষতিগ্রস্ত রবিশস্য হচ্ছে- গোল আলু, তরমুজ, বাদাম, মরিচ, পেয়াজ, মুগ ডাল ইত্যাদি। নিজ জমির এহেন পরিস্থিতি দেখে জলাল বেপারী (৫০) নামের এক চাষী স্ট্রোক করে মৃত্যু বরণ করেছেন। এছাড়াও ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নে অপর একজন চাষী আতœহত্যা করেন। শুধু তারাই নন, এরকম অসংখ্য চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইউসুফ হাওলাদার, জসিম দফাদার, আরিফ, দেলওয়ার, আব্দুর রব, সুজন, মোঃমাসুদ, বিপ্লব তেলি, হওে লাল বেপারী অন্যতম।
জসিম দফাদার বলেন, আল্লাহ আমাদের সম্পদ দিয়ে কেরে নিয়েছেন। বিপ্লব তেলি জানান, ব্র্যাক ও গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থা থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছিলেন, এখন আর তা ঘুরে দাঁড়ানোর মত ক্ষমতা নাই।
সেখানকার অধিকাংশ জমি ও ফসল পানির নিচে। কৃষকের মতে আলু পানি পাওয়ার সাথে সাথে পঁচে যায়। আর তরমুজ এবং অন্যান্য শস্য পানি শুকানোর সাথেই মরে যাবে। মৌসূমের প্রথম বৃষ্টিতে ১১টি ইউনিয়নের চাষিদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের দ্রুত আলু উত্তোলনের পরামর্শ দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোতোষ সিকদার জানান, চাষিদের ৭৫ থেকে ৮০ শস্যই পানিতে নিমজ্জিত। তাই তাদেরকে দ্রুত আলু উত্তোলনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আলু তোলার পর রোদে শুকিয়ে ছত্রাকনাশক ঔষধ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
-এফএইচ